সমকাল প্রতিবেদক
বর্তমানে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে তার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার যে ৭৪ লাখ টাকাসহ 'আটক' হলেন সেই টাকা রেলমন্ত্রীর বাড়িতেই যাচ্ছিল বলে দাবি করেছেন ওমর ফারুকের গাড়ির চালক আজম খান। তার ভাষায়, 'ওদিকে যাওয়ার পথেই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলি। আগেও কয়েকবার টাকা গেছে।' এর আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওমর ফারুক দু'জনেই দাবি করেছেন, টাকার গন্তব্য রেলমন্ত্রীর বাসা ছিল না। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত আজম খানের সাক্ষাৎকারটি শোরগোল ফেলেছে। গতকালও আরটিভির সংবাদ বুলেটিনগুলোতে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। গত ৯ এপ্রিল রাতে বিজিবি সদর দফতরের ভেতর টাকাসহ গাড়ি ঢুকিয়ে দেন আজম খান।
অজ্ঞাত স্থান থেকে আরটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজম খান বলেছেন, পিলখানায় যে অর্থসহ তারা আটক হয়েছিলেন, তার উৎস রেলের 'নিয়োগ বাণিজ্য'। কথা ছিল, এই নিয়োগ বাণিজ্য থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১০ কোটি টাকা পাবেন। এ জন্য আরও ৬০০ লোক নেওয়া হবে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং তার সাবেক এপিএস ওমর ফারুক খান দু'জনেই এ অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন। বর্তমানে সিলেটে অবস্থানরত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সমকালকে বলেন, বিষয়টি কেবলই শুনেছেন তিনি। পুরো ঘটনা জেনে পরে বিস্তারিত বলবেন। তবে এর আগে আরটিভিকে টেলিফোনে তিনি বলেন, বোগাস স্টোরি। পুরো বিষয়টি মিডিয়ার কারবার। তাকে ফাঁসানোর জন্যই এটা করা হচ্ছে। ওমর ফারুক
সমকালকে বলেন, বিশেষ
একটি টেলিভিশনে দেওয়া আজম খানের এই সাক্ষাৎকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনেক টাকার বিনিময়ে এই সাক্ষাৎকার 'নাটক' হতে পারে।
আজম খানের স্ত্রী স্বপ্না গতকাল টেলিফোনে সমকালকে জানিয়েছেন, তার স্বামী স্বেচ্ছায় টেলিভিশনে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই বক্তব্য প্রচারের পর আজম খানের বুকে চেপে থাকা কষ্টের কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে বা রাজনৈতিক কারণে আজম এমন কথা বলছেন, এ দাবি ঠিক নয়। তিনি তার স্বামীর নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গত ৯ এপ্রিল রাতে ফারুকের গাড়িতে বিপুল অর্থ পাওয়ার খবর প্রকাশের পর তা নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল শুরু হয়। এরপর ১৬ এপ্রিল রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সুরঞ্জিত। এ ছাড়া রেলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনার পর গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, ফারুকের সঙ্গে সেদিন ৭৪ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের ঘুষের। ইউসুফ ও এনামুল হক ওই গাড়িতে ছিলেন। গতকাল দফায় দফায় চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার পর থেকে ওমর ফারুকের গাড়িচালক আজম খান আত্মগোপনে ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রেল কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তলব করলেও তিনি হাজির হননি। তবে এই সাক্ষাৎকারে আজম খান জানিয়েছেন, এখন দুদকসহ অন্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে আগ্রহী। তার স্ত্রীও সমকালকে একই কথা জানিয়েছেন। তার কাছে যতটুকু তথ্য আছে, তার সবই তিনি দুদককে জানাতে চান। তবে এ ব্যাপারে আজম খান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস চেয়েছেন।
ছয় মাস 'নিখোঁজ' থাকার পর আজম খান গোপন স্থান থেকে আরটিভির সিনিয়র প্রতিবেদক বায়েজীদ আহমদকে এই সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে আজম বলেন, টাকা নিয়ে ফারুক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় যাচ্ছিলেন। ওইদিকে যাওয়ার সময়ই তিনি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। তার দাবি, আগেও কয়েকবার মন্ত্রীর বাড়িতে টাকা গেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফারুক ৭৪ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা নিতে তিনি অস্বীকার করেন। কাউকে চাকরি দেওয়ার জন্য চাপ দিতে এ ঘটনা ঘটাননি বলেও দাবি আজমের।
সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে আজম খান বলেন, ধানম ির ৩ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাসা থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক এপিএস ফারুকের গাড়িতে করে টাকা নিয়ে বের হন তারা। জিগাতলা যাওয়ার পথে বিডিআরের (বিজিবি) ৪ নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দেন তিনি। টাকাসহ গেটের ভেতরে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়ার পর ওমর ফারুক জানতে চেয়েছেন, 'কোথায় যাচ্ছ?' উত্তরে তিনি বলেন, এ তো দুর্নীতির টাকা, ঘুষের টাকা, রেলের নিয়োগের টাকা_ এই টাকাসহ সবাইকে ধরিয়ে দেব। ততক্ষণে গাড়িটা ভেতরে ঢোকানো হয়ে গেছে।
আজম খান বলেন, বিজিবির গেট খোলা পাওয়ায় গাড়ি ঢোকাতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। বিজিবি কোনো সিগন্যালও দেয়নি। ফলে দাঁড়ানোর কোনো প্রয়োজনও ছিল না। গাড়িটি এদিক দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে, সম্ভবত এ কারণে বিজিবি হয়তো গাড়িটি চিনেছে।
এ পর্যায়ে টাকা ভাগবাটোয়ারার প্রস্তাব প্রসঙ্গে আজম খান বলেন, মন্ত্রীর এপিএস ফারুক তাদের 'ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে' পুরো টাকাই দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
সাক্ষাৎকারে আজম বলেন, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে গুনে ৭৪ লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেন, টাকা গোনার পরে ফারুক, এনামুল আর জিএম বাইরে থেকে আরেকজন ড্রাইভার আনে। ওই ড্রাইভারকে নিয়ে টাকাসহ তারা বেরিয়ে যান। আজম তার সাক্ষাৎকারে মশিউর রহমান নামে এক মেজরের নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনিও প্রায় তিন কোটি টাকার ওই 'নিয়োগ বাণিজ্যে' জড়িত। ফারুক সাহেবের মাধ্যমে তার কয়েকশ' লোককে রেলে ঢোকানোর কথা। তিনি ফারুকের কাছে তিন কোটি টাকার চেকও হস্তান্তর করেন।
এর আগে কখনও টাকা আনা-নেওয়া করেছেন কি-না_ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আজম বলেন, প্রায়ই টাকা আনা-নেওয়া হয়েছে, তবে সবার নাম তার মনে নেই। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি থাকাকালে সাব-রেজিস্ট্রারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন আজম। তিনি বলেন, 'আমি তো নিপেনদার বাসা থেকে প্রায়ই টাকা আনতাম। আরও সাব-রেজিস্ট্রার আছে, তাদের নামগুলো সঠিক খেয়াল নেই।'
পলাতক জীবনের অবসান ঘটিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করার আগ্রহের কথা জানান আজম। তার স্ত্রী স্বপ্না সমকালকে জানান, প্রধানমন্ত্রীসহ ওপরের দিক থেকে আশ্বস্ত করা হলে আজম খান আরও বিস্তারিত জানাতে চান। স্বপ্না বলেন, ছয় মাস ধরে তার স্বামী কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন, কিছুই তার জানা নেই। বর্তমানে চাঁদপুরে বাবার বাড়িতে আছেন স্বপ্না।
যেভাবে সাক্ষাৎকার নেওয়া হলো
আরটিভির সিনিয়র প্রতিবেদক বায়েজীদ আহমদ সমকালকে আজম খানের সাক্ষাৎকার নেওয়ার নেপথ্য কথা জানান। আজম খানের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বায়েজীদ কয়েকবার তার চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। তার পরিবারের সঙ্গে ভালো পরিচয় হয়েছে। একপর্যায়ে আজম খানই অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে টেলিফোন করে জানান, অন্য একটি টিভি চ্যানেল তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য টাকা দিতে চাচ্ছে। তবে তিনি মনে করছেন, এটা তাকে ধরার ফাঁদ। তিনি জানান, আর ফেরারি জীবনযাপন করতে চান না। আজম খান অবশেষে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়ে ঢাকার কাছাকাছি এক গোপন স্থানে তাকে আসতে বলেন। নির্দিষ্ট স্থানে আজম খান এসে তাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে চলে যান। সংগত কারণেই আরটিভির প্রতিবেদক সাক্ষাৎকার গ্রহণের স্থান প্রকাশ করেননি।
বর্তমানে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে তার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার যে ৭৪ লাখ টাকাসহ 'আটক' হলেন সেই টাকা রেলমন্ত্রীর বাড়িতেই যাচ্ছিল বলে দাবি করেছেন ওমর ফারুকের গাড়ির চালক আজম খান। তার ভাষায়, 'ওদিকে যাওয়ার পথেই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলি। আগেও কয়েকবার টাকা গেছে।' এর আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওমর ফারুক দু'জনেই দাবি করেছেন, টাকার গন্তব্য রেলমন্ত্রীর বাসা ছিল না। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত আজম খানের সাক্ষাৎকারটি শোরগোল ফেলেছে। গতকালও আরটিভির সংবাদ বুলেটিনগুলোতে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। গত ৯ এপ্রিল রাতে বিজিবি সদর দফতরের ভেতর টাকাসহ গাড়ি ঢুকিয়ে দেন আজম খান।
অজ্ঞাত স্থান থেকে আরটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজম খান বলেছেন, পিলখানায় যে অর্থসহ তারা আটক হয়েছিলেন, তার উৎস রেলের 'নিয়োগ বাণিজ্য'। কথা ছিল, এই নিয়োগ বাণিজ্য থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১০ কোটি টাকা পাবেন। এ জন্য আরও ৬০০ লোক নেওয়া হবে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং তার সাবেক এপিএস ওমর ফারুক খান দু'জনেই এ অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন। বর্তমানে সিলেটে অবস্থানরত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সমকালকে বলেন, বিষয়টি কেবলই শুনেছেন তিনি। পুরো ঘটনা জেনে পরে বিস্তারিত বলবেন। তবে এর আগে আরটিভিকে টেলিফোনে তিনি বলেন, বোগাস স্টোরি। পুরো বিষয়টি মিডিয়ার কারবার। তাকে ফাঁসানোর জন্যই এটা করা হচ্ছে। ওমর ফারুক
সমকালকে বলেন, বিশেষ
একটি টেলিভিশনে দেওয়া আজম খানের এই সাক্ষাৎকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনেক টাকার বিনিময়ে এই সাক্ষাৎকার 'নাটক' হতে পারে।
আজম খানের স্ত্রী স্বপ্না গতকাল টেলিফোনে সমকালকে জানিয়েছেন, তার স্বামী স্বেচ্ছায় টেলিভিশনে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই বক্তব্য প্রচারের পর আজম খানের বুকে চেপে থাকা কষ্টের কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে বা রাজনৈতিক কারণে আজম এমন কথা বলছেন, এ দাবি ঠিক নয়। তিনি তার স্বামীর নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গত ৯ এপ্রিল রাতে ফারুকের গাড়িতে বিপুল অর্থ পাওয়ার খবর প্রকাশের পর তা নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল শুরু হয়। এরপর ১৬ এপ্রিল রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সুরঞ্জিত। এ ছাড়া রেলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনার পর গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, ফারুকের সঙ্গে সেদিন ৭৪ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের ঘুষের। ইউসুফ ও এনামুল হক ওই গাড়িতে ছিলেন। গতকাল দফায় দফায় চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার পর থেকে ওমর ফারুকের গাড়িচালক আজম খান আত্মগোপনে ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রেল কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তলব করলেও তিনি হাজির হননি। তবে এই সাক্ষাৎকারে আজম খান জানিয়েছেন, এখন দুদকসহ অন্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে আগ্রহী। তার স্ত্রীও সমকালকে একই কথা জানিয়েছেন। তার কাছে যতটুকু তথ্য আছে, তার সবই তিনি দুদককে জানাতে চান। তবে এ ব্যাপারে আজম খান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস চেয়েছেন।
ছয় মাস 'নিখোঁজ' থাকার পর আজম খান গোপন স্থান থেকে আরটিভির সিনিয়র প্রতিবেদক বায়েজীদ আহমদকে এই সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে আজম বলেন, টাকা নিয়ে ফারুক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় যাচ্ছিলেন। ওইদিকে যাওয়ার সময়ই তিনি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। তার দাবি, আগেও কয়েকবার মন্ত্রীর বাড়িতে টাকা গেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফারুক ৭৪ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা নিতে তিনি অস্বীকার করেন। কাউকে চাকরি দেওয়ার জন্য চাপ দিতে এ ঘটনা ঘটাননি বলেও দাবি আজমের।
সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে আজম খান বলেন, ধানম ির ৩ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাসা থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক এপিএস ফারুকের গাড়িতে করে টাকা নিয়ে বের হন তারা। জিগাতলা যাওয়ার পথে বিডিআরের (বিজিবি) ৪ নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দেন তিনি। টাকাসহ গেটের ভেতরে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়ার পর ওমর ফারুক জানতে চেয়েছেন, 'কোথায় যাচ্ছ?' উত্তরে তিনি বলেন, এ তো দুর্নীতির টাকা, ঘুষের টাকা, রেলের নিয়োগের টাকা_ এই টাকাসহ সবাইকে ধরিয়ে দেব। ততক্ষণে গাড়িটা ভেতরে ঢোকানো হয়ে গেছে।
আজম খান বলেন, বিজিবির গেট খোলা পাওয়ায় গাড়ি ঢোকাতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। বিজিবি কোনো সিগন্যালও দেয়নি। ফলে দাঁড়ানোর কোনো প্রয়োজনও ছিল না। গাড়িটি এদিক দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে, সম্ভবত এ কারণে বিজিবি হয়তো গাড়িটি চিনেছে।
এ পর্যায়ে টাকা ভাগবাটোয়ারার প্রস্তাব প্রসঙ্গে আজম খান বলেন, মন্ত্রীর এপিএস ফারুক তাদের 'ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে' পুরো টাকাই দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
সাক্ষাৎকারে আজম বলেন, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে গুনে ৭৪ লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেন, টাকা গোনার পরে ফারুক, এনামুল আর জিএম বাইরে থেকে আরেকজন ড্রাইভার আনে। ওই ড্রাইভারকে নিয়ে টাকাসহ তারা বেরিয়ে যান। আজম তার সাক্ষাৎকারে মশিউর রহমান নামে এক মেজরের নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনিও প্রায় তিন কোটি টাকার ওই 'নিয়োগ বাণিজ্যে' জড়িত। ফারুক সাহেবের মাধ্যমে তার কয়েকশ' লোককে রেলে ঢোকানোর কথা। তিনি ফারুকের কাছে তিন কোটি টাকার চেকও হস্তান্তর করেন।
এর আগে কখনও টাকা আনা-নেওয়া করেছেন কি-না_ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আজম বলেন, প্রায়ই টাকা আনা-নেওয়া হয়েছে, তবে সবার নাম তার মনে নেই। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি থাকাকালে সাব-রেজিস্ট্রারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন আজম। তিনি বলেন, 'আমি তো নিপেনদার বাসা থেকে প্রায়ই টাকা আনতাম। আরও সাব-রেজিস্ট্রার আছে, তাদের নামগুলো সঠিক খেয়াল নেই।'
পলাতক জীবনের অবসান ঘটিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করার আগ্রহের কথা জানান আজম। তার স্ত্রী স্বপ্না সমকালকে জানান, প্রধানমন্ত্রীসহ ওপরের দিক থেকে আশ্বস্ত করা হলে আজম খান আরও বিস্তারিত জানাতে চান। স্বপ্না বলেন, ছয় মাস ধরে তার স্বামী কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন, কিছুই তার জানা নেই। বর্তমানে চাঁদপুরে বাবার বাড়িতে আছেন স্বপ্না।
যেভাবে সাক্ষাৎকার নেওয়া হলো
আরটিভির সিনিয়র প্রতিবেদক বায়েজীদ আহমদ সমকালকে আজম খানের সাক্ষাৎকার নেওয়ার নেপথ্য কথা জানান। আজম খানের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বায়েজীদ কয়েকবার তার চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। তার পরিবারের সঙ্গে ভালো পরিচয় হয়েছে। একপর্যায়ে আজম খানই অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে টেলিফোন করে জানান, অন্য একটি টিভি চ্যানেল তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য টাকা দিতে চাচ্ছে। তবে তিনি মনে করছেন, এটা তাকে ধরার ফাঁদ। তিনি জানান, আর ফেরারি জীবনযাপন করতে চান না। আজম খান অবশেষে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়ে ঢাকার কাছাকাছি এক গোপন স্থানে তাকে আসতে বলেন। নির্দিষ্ট স্থানে আজম খান এসে তাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে চলে যান। সংগত কারণেই আরটিভির প্রতিবেদক সাক্ষাৎকার গ্রহণের স্থান প্রকাশ করেননি।
No comments:
Post a Comment