খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যারিস্টার তাপসের ওপর বোমা হামলা মামলার আগেও তিনি তার বর্তমান স্বামী রফিকুল ইসলাম রাফির হাতে মাঝেমধ্যেই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হতেন। মেহনাজের দাবি রাফির ব্ল্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বিয়েতে বাধ্য হন মেহনাজ। তিনি ঢাকার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নসরুল হামিদের কাজিন তথা আওয়ামী পরিবারে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনরাও তার আর্তনাদে এগিয়ে আসতেন না। বাবা-মা ও ৩ ছোট বোন দেশের বাইরে থাকায় তাদেরও সাহায্য পাওয়ার সুযোগ ছিল না। গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করেছেন, তার ওপর নির্যাতনের বিবরণ সম্বলিত জিডি করার জন্য কয়েকবার গুলশান থানায় করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এব্যাপারে তার অভিযোগ ছিল রশিদের মেয়ে হওয়ার কারণে থানা তার জিডি গ্রহণ করেনি। উপরন্তু রাফি জিডি গ্রহণ না করার ব্যাপারে পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
মেহনাজ আরো বলেছেন, রাফির সঙ্গে ২০০৮ সালের ১৮ মে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। বিয়ের ২৯ দিনের মাথায় ২০০৮ সালের ১৭ জুন তাকে গুলশানের বাসায় ভীষণ মারধর করে রাফি। এরপর ঢাকার বাসায় মারধর করে ১৬ আগস্ট। এবছর কুমিল্লার চান্দিনায় বেড়াতে গিয়েও তাকে ২৯ জুন ও ৩০ আগস্ট তাকে মারধর করা হয়। অন্তসত্বা অবস্থায় ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি তার ওপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। ফলে তাকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এরপর তার ওপর নির্যাতন করা হয় ২০ মার্চ। এজন্য জটিলতা সৃষ্টি হলে তাকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এরপর ১৫ এপ্রিল মেহনাজকে মেরে গুরুতর আহত করেছেন রাফি। একই হাসপাতালে তিনি সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হন ১৩ জুন। সিজার করে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ১৬ জুন। ভর্তি ছিলেন ২৩ জুন পর্যন্ত। এদিন হাসপাতাল থেকে রিলিজের আগে কেবিনে তাকে মারধর করেন রাফি।
ব্রিগেডিয়ার বারি মেহনাজ রশিদকে কত ধরনের প্রলোভন দিয়েছেন তার মধ্যে একটি হলো মেহনাজ রশিদকে ওয়ান ইলেভেনের পর উপদেষ্টা করার প্রসত্দাব। মেহনাজ জানান, তাকে উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার বারি। এই ধরনের নানা প্রস্তাব ও ফন্দি করে ব্রিগেডিয়ার বারি মেহনাজের মন জয় করে নেন। জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায় ও পরবতর্ীতে বিবাহ বন্ধনে। এছাড়া ব্রিগেডিয়ার বারি প্রায় মেহনাজকে বলতেন, তার প্রথম স্ত্রী অশিক্ষিত, আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করেছেন ও সে কেবল স্বর্ণালঙ্কার কেনা নিয়েই ব্যস্ত। ব্রিগেডিয়ার বারিকে তালাক দেয়ার পর রফিকুল হক রাফিকে মেহনাজ বিয়ে করেন। বর্তমান কথিত স্বামী রাফিও তাকে একই কায়দায় বিয়ে করেছেন বলে মেহনাজ জানান। লে. কর্নেল (অব.) রশিদ যতবার দেশ-বিদেশে ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তার প্রায় সবটিতেই মেহনাজ উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, তার পিতা তাকে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার ঘটনা, জড়িতদের নাম ও পরিকল্পনাকারিদের নামসহ পুরা কাহিনী বলেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরিকল্পনাকারিরা কে কিভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এসেছেন এবং কে কে সুবিধা পেয়েছেন, সব তথ্যই পিতা মেহনাজকে জানিয়েছেন। তার পিতা মারা গেলেও মেহনাজ রশিদ জাতিকে এসব তথ্য বলতে পারবেন। এ কারণেই তার পিতা মেহনাজকে সব বিষয়ে জানিয়েছেন। ডিবির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই সকল তথ্য মেহনাজ তুলে ধরেন। মেহনাজ রশিদ স্বতস্ফূর্তভাবে ডিবির কর্মকর্তাদের এসব তথ্য জানান।
জিজ্ঞাসাবাদে মেহনাজ রশিদ ডিবির কর্মকর্তাদের জানান, তার গুলশানের বাসায় ফ্রিডম পার্টি ছাড়া একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা যাতায়াত করতেন। তাদের সাথে লিবিয়ায় লোক পাঠানো এবং অনেক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি এবং নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ঘটনা মেহনাজ রশিদের জানা। অনেক রাজনৈতিক নেতাকে পাকিসত্দান ও লিবিয়া থেকে আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা মেহনাজ করে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তার পিতা লে. কর্নেল (অবঃ) রশিদ ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ছাড়া মূল পরিকল্পনাকারি, অর্থ যোগানদাতা ও বিদেশী কোন কোন দেশ জড়িতাসহ পুরা ঘটনা উল্লেখ করে একটি আত্মজীবনী ১৯৯৪ সাল থেকে লিখে আসছেন। এটা এখন শেষ হয়নি। এই আত্মজীবনী তার পিতা দেশবাসীর জন্য প্রকাশ করবেন।
শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী মেহনাজ
মেহনাজ রশিদ ডিবির কর্মকর্তাদের জানান, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার অপারেশনে তার পিতা থাকলে মূল পরিকল্পনাকারিরা ও অর্থ যোগানদাতারা অক্ষত অবস্থায় থেকে যাবে এটা হতে পারে না। পরিকল্পনাকারিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পর্যন্ত ভোগ করেছেন। বিদেশে তার পিতামাতা মানবেতর জীবন-যাপন করবেন এটা হতে পারেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১৫ই আগস্টের জড়িতদের এবং মূল পরিকল্পনাকারিদের নামসহ পুরা বিষয় জানাতে মেহনাজ আগ্রহী। মেহনাজ রশিদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাকে একবার সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য ডিবির কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন। ডিসি (ডিবি দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম মেহনাজ সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে নারাজ। মেহনাজ রশিদের নিকট অনেক নাশকতামূলক ঘটনা ও ক্ষমতার পট পরিবর্তন তথ্য রয়েছে বলে জানা যায়।
No comments:
Post a Comment