April 10, 2011

শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়ক যারা


পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি তদন্তে বাজারের উত্থান-পতনে ঘুরেফিরে গুটিকয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম বেরিয়ে এসেছে। জোরালোভাবে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবির নাম। প্রতিষ্ঠানটি একাই সাতটি অমনিবাস অ্যাকাউন্টে শত শত কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করে। তদন্তে দৈবচয়নের মাধ্যমে তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষ হিসাবধারীর অ্যাকাউন্ট (অমনিবাস) পরীক্ষা করে লেনদেনের অনিয়ম পাওয়া যায়। এসব হিসাবে মোসাদ্দেক আলী ফালু, ডা. এইচ বি এম ইকবাল, মুনিরউদ্দিন আহমদ, ইয়াকুব আলী খন্দকার, লুৎফর রহমান বাদলসহ অনেক খ্যাত-অখ্যাত ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে এদের বলা হয়েছে 'খেলোয়াড়'।
তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জন শীর্ষ 'খেলোয়াড়ের' নাম উল্লেখ করে বলা হয়, এঁরা সেকেন্ডারি পুঁজিবাজার ও প্রাক আইপিওর আকাশচুম্বী মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। প্রতিবেদন মতে, সব উত্থান-পতনের সময়ই শীর্ষ ১৫-১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, যারা বাজারের বড় অংশ লেনদেন করেছে। ২০০৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যখন সূচক ২৮০০ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৪৫০০ হয়েছিল, তখন তাঁরা শীর্ষ খেলোয়াড় ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানসহ কয়েকজনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাঁদের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সন্দেহজনক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অক্টোবর ২০০৯ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১০ : প্রতিবেদনে এ সময়টিকে প্রথম 'পুশ পিরিয়ড' চিহ্নিত করে বলা হয়, ২০০৯ সালের অক্টোবরে গোলাম মোস্তফা নামের এক ক্রেতার অ্যাকাউন্টে টার্নওভার পাওয়া যায় ১৩১ কোটি টাকার। নভেম্বরে তাঁর টার্নওভার দাঁড়ায় ১৪০ কোটি টাকা। ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ক্রেতার টার্নওভার ১৬৮ কোটি টাকা। একইভাবে অক্টোবরে আইসিবি অমনিবাসের (আইসিএমএল) টার্নওভার ১২৮ কোটি, নভেম্বরে ৯৫ কোটি, ২০১০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে টার্নওভার ছিল ২৮৭ কোটি টাকা। শাহজালাল ব্যাংকের ২০০৯ সালের অক্টোবরে ১০৩ কোটি, পরের মাসে ১৩২ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৩৬ কোটি টাকার টার্নওভার ধরা পড়ে। আইসিবির (এসওবি) অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৯৬ কোটি, নভেম্বরে ১২৩ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৩৬৮ কোটি টাকার টার্নওভার হয়। পূবালী ব্যাংকের ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৭৮ কোটি, নভেম্বরে ৫৪ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৭৪ কোটি টাকার টার্নওভার ছিল। রেজাউল করিম নামের ক্রেতার অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৬৫ কোটি, নভেম্বরে ৭৪ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৬৩ কোটি টাকার টার্নওভার পাওয়া গেছে। সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম নামের একজনের অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৬১ কোটি, নভেম্বরে ৭২ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৪৫ কোটি টাকার টার্নওভার ছিল। ইয়াকুব আলী খন্দকারের অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৫২ কোটি, নভেম্বরে ৫২ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৭৭ কোটি টাকার টার্নওভার হয়। উত্তরা ফাইন্যান্সের অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৩৬ কোটি, নভেম্বরে ৭২ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ কোটি টাকার টার্নওভার হয়। আইসিবির (আরএজেআইসিএমএল) অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৩৬ কোটি, নভেম্বরে ৩০ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৯৬ কোটি টাকার টার্নওভার ছিল। আইসিবির (কেএইচএলআইসিএমএল) অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৩৫ কোটি, নভেম্বরে ৩৩ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৯২ কোটি টাকার টার্নওভার হয়। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২০০৯ সালের অক্টোবরে ৬৩ কোটি, নভেম্বরে ৬০ কোটি এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৮০ কোটি টাকার টার্নওভার হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো যাঁদের নাম তুলে ধরা হয়েছে তাঁরা হলেন - সুবর্ণা মোস্তফা, ফজলুর রহমান, আইসিবি অমনিবাস (জেবিএম), আমজাদ হোসেন ফকির, মো. শহীদুল্লাহ, আরিফুর রহমান প্রমুখ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে প্রায় একই সংস্থা ও ব্যক্তিই শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন। আইসিবি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হওয়ার পরও বড় মাপে ট্রিগার ক্রয় করে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে আইসিবি সাতটি অমনিবাস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ক্রয় করেছে ৪০০ কোটি টাকার শেয়ার। নভেম্বরে ছয়টি অমনিবাস অ্যাকাউন্টে আইসিবি ক্রয় করেছে ৩৪০ কোটি টাকার শেয়ার।
নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০১০ : প্রতিবেদনে এ সময়টিকে দ্বিতীয় 'পুশ পিরিয়ড' চিহ্নিত করে বলা হয়, আইসিবি ২০১০ সালের নভেম্বরে ৯টি অমনিবাস অ্যাকাউন্টে ১৩৭১ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে ৯টি অ্যাকাউন্টে ৯৭৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে। পতনের দুই মাসে আইসিবির মোট বিক্রি দাঁড়ায় ২৩৪৮ কোটি টাকা। তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টিকে তুলনা করে বলা হয়, দুটি উত্থান পর্বে আইসিবি অমনিবাস অ্যাকাউন্টে মোট ক্রয় করা হয় ২২০০ কোটি টাকা। কাজেই বাজারের ঊর্ধ্বমুখী ও ধস_উভয় সময়েই সিন্ডিকেট সদস্যরা আইসিবির অমনিবাস অ্যাকাউন্টের আড়ালে খেলা করেছিলেন, এটা প্রায় নিশ্চিত বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্থান-পতন উভয় সময়েই উত্তরা ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ইনস্যুরেন্স, পূবালী ব্যাংক প্রভৃতি সংস্থার পাশাপাশি আরিফুর রহমান, সৈয়দ সিরাজুদ্দৌলা, আমজাদ হোসেন ফকির প্রমুখ উভয় সময়েরই শীর্ষ সক্রিয় ব্যক্তি। আইসিবি অমনিবাস (এজিবি) ২০১০ সালের নভেম্বরে বিক্রি করেছে ৪৯৪ কোটি এবং ডিসেম্বরে ৩১৪ কোটি টাকার শেয়ার। আইসিবি অমানিবাস (এবিএমইউএফ) নভেম্বরে ২১৬ কোটি ও ডিসেম্বরে ১৫৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে। ব্র্যাক ব্যাংক নভেম্বরে ২০৪ কোটি ও ডিসেম্বরে ১৫৯ কোটি, আইসিবি (আইসিএমএল) নভেম্বরে ১৯৫ কোটি ও ডিসেম্বরে ১৪২ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক নভেম্বরে ১৮৫ কোটি ও ডিসেম্বরে ১৭১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে। সাইথইস্ট ব্যাংক নভেম্বরে ১০৪ কোটি ও ডিসেম্বরে ১৫৫ কোটি, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স নভেম্বরে ১২২ কোটি ও ডিসেম্বরে ৮২ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক নভেম্বরে ৮৪ কোটি ও ডিসেম্বরে ৮২ কোটি, পূবালী ব্যাংক নভেম্বরে ৭৬ কোটি ও ডিসেম্বরে ৫৭ কোটি, উত্তরা ফাইন্যান্স নভেম্বরে ১০০ কোটি ও ডিসেম্বরে ১৩৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
'বুদ্বুদ্ ক্রেতা' : প্রতিবেদন মতে, শীর্ষ ৩০টি অ্যাকাউন্টেই শেয়ার ক্রয় হয়েছে ৭৪০ কোটি টাকারও বেশি। এ অঙ্ক এক হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে থাকতে পারে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। আবার ২০১০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও প্রায় তাঁরাই শেয়ার ক্রয়ে শীর্ষে ছিলেন। এ সময়ে আইসিবি আটটি অমনিবাস অ্যাকাউন্টে ১১৪৩ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। ব্যক্তিদের মধ্যে আবারও আসে গোলাম মোস্তফা, আরিফুর রহমান, সৈয়দ সিরাজুদৌল্লা, ইয়াকুব আলী খন্দকার প্রমুখের নাম। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, উত্তরা ফাইন্যান্স, শাহজালাল ব্যাংক, ফারইস্ট ইসলামী ইনস্যুরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক প্রভৃতি। ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন_আবু সাদত মো. সায়েম, ইয়াকুব আলী খন্দকার, গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ সিরাজুদ্দৌলা, মো. খলিলুজ্জামান, মো. শহীদুল্লাহ, আরিফুর রহমান প্রমুখ। ওই সময় এবি ব্যাংক, উত্তরা ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংকও প্রতিবেদনের ভাষায় 'বুদ্বুদ্' সৃজনকারী ক্রয়ে অংশ নেয়।
শেয়ারবাজারের দুটি 'পুশ' পিরিয়ডেই একই সম্ভাব্য সিন্ডিকেট কাজ করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, পুঁজিবাজার ধসের সময় মাত্র দুই মাসে কম-বেশি ৮৩০০ পয়েন্ট লেনদেন হয়েছে। এ সময়কে 'আনইজি ক্লেইম' হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। একে ঝড়ের পূর্ব সময় হিসেবেও দেখা যায়। এ সময়েও লক্ষণীয়ভাবে দেখা যায়, যাঁরা উত্থানের সময় শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন, এবার পতনের সময়ও তাঁরাই শীর্ষ বিক্রেতা। তদন্ত প্রতিবেদনের পুঁজিবাজারে ব্যক্তি ও সংস্থার লক্ষণীয় ভূমিকা শীর্ষক অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের উত্থান-পতনের ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। বাজারে বুদ্বুদ্ তৈরি করা ও বিস্ফোরণ উভয় প্রক্রিয়াতেই ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বুদ্বুদ্ ও বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই কিছুসংখ্যক 'খেলোয়াড়' পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি নেঙ্াস তৈরি করেছিলেন। নেঙ্াস প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হলেও কিছু টপ খেলোয়াড়ের সম্পৃক্ততা তাঁদের লেনদেন কার্যক্রম দেখলেও বোঝা যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে এবারের ঘটনাটিকে ১৯৯৬ সালের ঘটনার চেয়ে ভিন্ন বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সম্ভাব্য কারসাজি : তদন্ত প্রতিবেদনে কারসাজির জন্য সম্ভাব্য একটি তালিকাও তুলে ধরা হয়েছে। এতে তালিকাভুক্তদের 'গ্রাহকের তথ্য জানা' বা কেওয়াইসি পরীক্ষা করার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে এসইসির মাধ্যমে তা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক গত ১২ ডিসেম্বর ও ৬ জানুয়ারি এই দুই দিনে শেয়ার বিক্রি করেছে ৪৪৩ কোটি টাকা। এ কে এম আরিফুর রহমান গত ৬ ডিসেম্বর এবং ৪, ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি এই পাঁচ দিনে শেয়ার বিক্রি করেছেন ৩৫০ কোটি টাকার। আমিন রেজওয়ানি গত ৪, ৯ ও ১৮ জানুয়ারি তিন দিনে শেয়ার বিক্রি করেছেন ৯৪ কোটি টাকার। খলিলুজ্জামান গত ৪ ডিসেম্বর ও ২০ জানুয়ারি ১০৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। নৃপেন চৌধুরী ৯ ডিসেম্বর ও ১২ জানুয়ারি ১৬৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। সারা খন্দকার, ইয়াকুব আলী খন্দকার, ড্রিম হোল্ডিং ও ড্রিমল্যান্ড হোল্ডিং ১২ ডিসেম্বর ও ৬ জানুয়ারি ১৫৮ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। এটাকে তদন্ত প্রতিবেদনে সিন্ডিকেট হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। সৈয়দ সিরাজুদ্দৌলা, রাশেদা আখতার মায়া ১২ ডিসেম্বর ও ৬ জানুয়ারি এই দুই দিনে ২৯০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। প্রতিবেদনে আরো যেসব শীর্ষ শেয়ার বিক্রেতার ব্যাংক তথ্য যাচাইয়ের জন্য বলা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এলিজা রহমান। তিনি ৯ ডিসেম্বর, ৪ ও ১০ জানুয়ারি ৩৯ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির তথ্য রয়েছে। রিচার্ড ডি রোজারিও ১২ ডিসেম্বর ও ৬ জানুয়ারি ৭৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। সৈয়দ আবু জাফর ১৯ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারি ৪৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে চিটাগাং ভেজিটেবলের শেয়ারের দর ২০০৯ সালে ২৫১ শতাংশ এবং ২০১০ সালে ৪১৪৮ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে তা পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে। একইভাবে বিচ হ্যাচারি, আফতাব অটোমোবাইল, সাফকো স্পিনিং, ওরিয়ন ইনফিউশন, পদ্মা সিমেন্ট, বেঙ্টেঙ্, সিএমসি কামাল, বিডি ওয়েল্ডিং, সিঙ্গার বিডিসহ জেড ক্যাটাগরির, উৎপাদনবিহীন এবং অবিশ্বাস্য হিসাবায়নকৃত কম্পানির তথ্যও এসইসি কর্তৃক নিবিড় পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাজার ধসের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ২০১০ সালের জানুয়ারির হিসাবে ব্রোকারেজ হাউসগুলো হলো - এমটিবি সিকিউরিটি, ব্র্যাক ইপিএল, আইডিএলসি, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, এলায়েন্স সিকিউরিটিজ, এরিজ সিকিউরিটিজ, ফরিদা রকিব সিকিউরিটিজ, আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ, আল মুন্তাহা ট্রেডিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ।
কেস স্টাডি : প্রতিবেদনের কেস স্টাডি অংশে বলা হয়েছে, আ হ ম মোস্তফা কামালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিএমসি কামাল টেঙ্টাইল ২০০৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৪০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল এবং কম্পানির ইপিএসও ছিল ঋণাত্মক। ২০০৯ সালে কম্পানিটি ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার সুপারিশ করে। ২০১০ সালের প্রথম থেকেই কম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য অভিহিত মূল্যকে অতিক্রম করে সে বছরের অক্টোবরে ১৬০০ টাকায় পেঁৗছে যায়। ২০০৯ সালের লোকসানে পরিচালিত একটি কম্পানির শেয়ার এক বছরের মাথায় কিভাবে অভিহিত মূল্যের ১৬ গুণ বেশি দামে বাজারে বিক্রি হয়, সেটি বিস্মিত করেছে তদন্ত কমিটিকে। আ হ ম মোস্তফা কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্য যাঁরা কম্পানির পরিচালকও, তাঁরা অতিমূল্যায়িত শেয়ার বেচাকেনা করে প্রচুর মুনাফা করেছেন বলেও তদন্ত কমিটি প্রমাণ পায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের অস্বচ্ছ কেসটির তদবিরে সালমান এফ রহমান নিজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ধরনা দিয়েছেন। জিএমজি ও ইউনিক হোটেল প্রভৃতি কেসেও তিনি সম্পৃক্ত এবং কেসগুলো অস্বচ্ছ। এসইসি পরিচালনায় দুজনেরই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ছিল বলে জনসাধারণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। পুঁজিবাজার লেনদেন ও পরিচালনায় এই দুজনের প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।
সুপারিশ : প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে সন্দেহের তালিকায় ছিলেন ইমতিয়াজ হোসেন, খোরশেদ আলম, সালমান এফ রহমান, এনায়েতুর রহিম, রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভি প্রমুখ। বর্তমান তদন্তে তাঁদের মধ্যে সালমান এফ রহমান ও রকিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক মতামত এসেছে এবং কিছু তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। এসইসিকে প্রভাবিত করতে দুজনই সক্রিয় ছিলেন মর্মে অনেকেরই ধারণা। এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের নিয়োগ এবং সদস্য মনসুর আলমের পুনর্নিয়োগে সালমান রহমান ও রকিবুর রহমানের জোরালো তদবির ও সমর্থন ছিল বলে অনেকের বিশ্বাস।

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor