জামায়াত নেতাকমর্ীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সোমবার রাজধানীর পল্টন, বিজয়নগর ও কাকরাইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা চলা এ সংঘর্ষে ২০ পুলিশ, ৩ সাংবাদিক ও জামায়াত-শিবির নেতাকমর্ীসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। বিকাল পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মুহুমর্ুহু শর্টগানের গুলি ও টিয়ার শেলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, অগি্নসংযোগ ও সংঘর্ষে আতংক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিক্ষুব্ধ জামায়াত নেতাকমর্ীরা এ সময় পুলিশের প্রিজন ভ্যান, উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) গাড়ি ও মোটর সাইকেলসহ কমপক্ষে ২০টি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাংচুর চালানো হয় অর্ধশতাধিক গাড়িতে। সংঘর্ষ চলাকালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই প্রাণ বাঁচাতে লোকজন দিগ্বিদিগ ছুটোছুটি শুরু করেন। চর দখলের মতো জামায়াত নেতাকমর্ীরা বারবার পুলিশকে ধাওয়া করে রাজপথ দখলে নিয়েছে। আবার পুলিশও জামায়াত নেতাকমর্ীদের ধাওয়া করে রাজপথ পাল্টা দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। এক পর্যায়ে প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ফুরিয়ে গেলে পুলিশ বিপাকে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জামায়াতের নেতাকমর্ীরা বিভিন্ন গলিপথে ঢুকে পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। পুলিশ এ সময় অসহায়ের মতো পিছু হটে। পরে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে অতিরিক্ত গুলি ও টিয়ার শেল এলে পুলিশ আবার অ্যাকশনে যায়। সোমবার সংঘর্ষের পর বিভিন্ন হাসপাতালসহ রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সোমবার এ সংঘর্ষ চলাকালে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ। সংঘর্ষের কারণে পুরো রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ এ সময় আটকা পড়েন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতার মুক্তির দাবিতে সোমবার বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। পূর্ব নির্ধারিত এ কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদশর্ীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিক কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে জামায়াতের প্রায় হাজার খানেক নেতাকমর্ী-সমর্থক একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে প্রথমে তর্ক-বিতর্ক ও পরে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় আশপাশের গলিপথ থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা চালানো হয়। টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে পুলিশ পাল্টা জবাব দিতে থাকে। তবে চতুর্মুখী আক্রমণের এক পর্যায়ে ২/৩শ' পুলিশ অসহায়ের মতো পিছু হটতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সংঘর্ষে লিপ্ত পুলিশের টিয়ার শেল এবং শর্টগানের গুলি ফুরিয়ে গেলে তারা বিপাকে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জামায়াত নেতাকমর্ীরা কাকরাইল, নয়া পল্টন, নাইটিঙ্গেল মোড়সহ বিজয়নগরের প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যানবাহনে এলোপাতাড়ি ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করতে থাকে। রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র, ঠেলাগাড়ি ও সাইনবোর্ড ভেঙে তারা ১০/১২টি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
সংঘর্ষ চলাকালে এক পুলিশ কর্মকর্তা কাকরাইল এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জামায়াত নেতাকমর্ীদের কবলে পড়েন। বিক্ষোভকারীরা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে মোটরসাইকেল থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিজয়নগর মোড়ে পুলিশের ৫টি গাড়িসহ ১০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত কমর্ীরা। এর মধ্যে পুলিশের প্রিজন ভ্যান একটি (নং ঢাকা মেট্রো ম-০৫-০১৫৩), পুলিশের পাজেরো জিপ একটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-২৭৯২), পুলিশের ভ্যানগাড়ি একটি (এসবি-৭২), পুলিশের পিকআপ ভ্যান একটি (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৪-০৬৮৪)। পুলিশ সদস্যদের বহনকারী আরও একটি লেগুনা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সবগুলো গাড়িই সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। এছাড়া একটি বড় বাস একুশে পরিবহন ও তিনটি মিনি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-২১৮৬), (ঢাকা মেট্রো জ-১১-০১০২) ও (ঢাকা মেট্রো জ-১১-১৭২৪), একটি জিপ গাড়ি ও একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেয় জামায়াত কমর্ীরা। সংঘর্ষের সময় পুলিশের টিয়ার ষেলর ঝাঁজ বাতাসে মিশে আশপাশের আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মহিলা ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে একের পর এক রক্তাক্ত জখম হয়ে হাসপাতালে ছুটতে থাকে পুলিশ ও জামায়াতের নেতাকমর্ীরা। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আহত ১০ পুলিশ সদস্য। সংঘর্ষ চলাকালে রায়ট কন্ট্রোল কার আনা হলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আর্মড পার্সোনাল কার (এপিসি) আনা হয় ঘটনাস্থলে। তবে তার ব্যবহার হয়নি। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে শুরু হয় পুলিশি অ্যাকশন। এ সময় পুলিশ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গলিপথে ঢুকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় অসংখ্য জামায়াত-শিবির নেতাকমর্ীসহ বহু নিরীহ পথচারীও আহত হন। পুলিশ এ সময় ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। তবে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাকমর্ীর সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজারবাগ থেকে আনা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশের টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ফুরিয়ে গেলে আবারও ঘটনাস্থলে কার্টনভর্তি টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট সরবরাহ করতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ এ সময় মুহুমর্ুহু টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জবাবে জামায়াত নেতাকমর্ীরাও বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। শর্টগান, টিয়ার গান উঁচিয়ে ঢাল নিয়ে পুলিশ সদস্যরা বিক্ষুব্ধ নেতাকমর্ীদের দিকে তেড়ে যায়। আবার ইটপাটকেল লাঠিসোটা নিয়ে সংগঠনের নেতাকমর্ীরা পুলিশকে ধাওয়া করে। এভাবেই চলতে থাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এ সময় টিয়ার শেলের ঝাঁজ থেকে বাঁচতে প্রধান সড়কের পাশ থেকে আসবাবপত্র রাস্তার ওপর এনে আগুন ধরিয়ে দেয় নেতাকমর্ীরা।
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় পুলিশ শত শত রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলেও উল্টো বাতাসের কারণে তা বিক্ষোভকারীদের তেমন দমন না করে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে আটকা পড়া লোকজন একে একে বের হয়ে আসতে থাকেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশের বক্তব্য : মতিঝিল জোনের এডিসি মনিরুজ্জামান জানান, হাজার হাজার জামায়াত নেতাকমর্ী হঠাৎ করেই পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। বিক্ষোভ কর্মসূচির চেয়ে তারা যেখানে পুলিশ পেয়েছে সেখানেই হামলা চালিয়েছে। এ কারণে সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পুলিশকে একটু সময় নিতে হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
জামায়াতের বক্তব্য : সোমবার কাকরাইল মোড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের হামলা, ৪০০ নেতাকমর্ীকে আহত এবং শতাধিক নেতাকমর্ীকে আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সোমবার সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর আলহাজ মকবুল আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এক বিবৃতিতে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দায়ী পুলিশদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, পুলিশ বেআইনিভাবে জামায়াতের মিছিলে বাধা দিয়েছে এবং বর্বরোচিত পন্থায় জামায়াত নেতাকমর্ীদের ওপর জুলুম করেছে। সরকার ইচ্ছে করে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ দিয়ে হামলা করিয়েছে। সরকারের মনে রাখা উচিত এই সরকারই শেষ সরকার নয়। এই সরকারের পরে অন্য সরকার এলে অবশ্যই তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বিবৃতিতে বর্তমান সরকারকে 'জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগের দাবি'তে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, বরিশাল ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের মিছিলে বাধা দেয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। তারা গ্রেফতারকৃত নেতাকমর্ীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে বিচার বন্ধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কয়েক দিন আগে জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর দু'দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সোমবার এ সংঘর্ষ চলাকালে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ। সংঘর্ষের কারণে পুরো রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ এ সময় আটকা পড়েন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতার মুক্তির দাবিতে সোমবার বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। পূর্ব নির্ধারিত এ কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদশর্ীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিক কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে জামায়াতের প্রায় হাজার খানেক নেতাকমর্ী-সমর্থক একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে প্রথমে তর্ক-বিতর্ক ও পরে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় আশপাশের গলিপথ থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা চালানো হয়। টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে পুলিশ পাল্টা জবাব দিতে থাকে। তবে চতুর্মুখী আক্রমণের এক পর্যায়ে ২/৩শ' পুলিশ অসহায়ের মতো পিছু হটতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সংঘর্ষে লিপ্ত পুলিশের টিয়ার শেল এবং শর্টগানের গুলি ফুরিয়ে গেলে তারা বিপাকে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জামায়াত নেতাকমর্ীরা কাকরাইল, নয়া পল্টন, নাইটিঙ্গেল মোড়সহ বিজয়নগরের প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যানবাহনে এলোপাতাড়ি ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করতে থাকে। রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র, ঠেলাগাড়ি ও সাইনবোর্ড ভেঙে তারা ১০/১২টি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
সংঘর্ষ চলাকালে এক পুলিশ কর্মকর্তা কাকরাইল এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জামায়াত নেতাকমর্ীদের কবলে পড়েন। বিক্ষোভকারীরা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে মোটরসাইকেল থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিজয়নগর মোড়ে পুলিশের ৫টি গাড়িসহ ১০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত কমর্ীরা। এর মধ্যে পুলিশের প্রিজন ভ্যান একটি (নং ঢাকা মেট্রো ম-০৫-০১৫৩), পুলিশের পাজেরো জিপ একটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-২৭৯২), পুলিশের ভ্যানগাড়ি একটি (এসবি-৭২), পুলিশের পিকআপ ভ্যান একটি (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৪-০৬৮৪)। পুলিশ সদস্যদের বহনকারী আরও একটি লেগুনা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সবগুলো গাড়িই সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। এছাড়া একটি বড় বাস একুশে পরিবহন ও তিনটি মিনি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-২১৮৬), (ঢাকা মেট্রো জ-১১-০১০২) ও (ঢাকা মেট্রো জ-১১-১৭২৪), একটি জিপ গাড়ি ও একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেয় জামায়াত কমর্ীরা। সংঘর্ষের সময় পুলিশের টিয়ার ষেলর ঝাঁজ বাতাসে মিশে আশপাশের আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মহিলা ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে একের পর এক রক্তাক্ত জখম হয়ে হাসপাতালে ছুটতে থাকে পুলিশ ও জামায়াতের নেতাকমর্ীরা। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আহত ১০ পুলিশ সদস্য। সংঘর্ষ চলাকালে রায়ট কন্ট্রোল কার আনা হলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আর্মড পার্সোনাল কার (এপিসি) আনা হয় ঘটনাস্থলে। তবে তার ব্যবহার হয়নি। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে শুরু হয় পুলিশি অ্যাকশন। এ সময় পুলিশ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গলিপথে ঢুকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় অসংখ্য জামায়াত-শিবির নেতাকমর্ীসহ বহু নিরীহ পথচারীও আহত হন। পুলিশ এ সময় ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। তবে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাকমর্ীর সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজারবাগ থেকে আনা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশের টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ফুরিয়ে গেলে আবারও ঘটনাস্থলে কার্টনভর্তি টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট সরবরাহ করতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ এ সময় মুহুমর্ুহু টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জবাবে জামায়াত নেতাকমর্ীরাও বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। শর্টগান, টিয়ার গান উঁচিয়ে ঢাল নিয়ে পুলিশ সদস্যরা বিক্ষুব্ধ নেতাকমর্ীদের দিকে তেড়ে যায়। আবার ইটপাটকেল লাঠিসোটা নিয়ে সংগঠনের নেতাকমর্ীরা পুলিশকে ধাওয়া করে। এভাবেই চলতে থাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এ সময় টিয়ার শেলের ঝাঁজ থেকে বাঁচতে প্রধান সড়কের পাশ থেকে আসবাবপত্র রাস্তার ওপর এনে আগুন ধরিয়ে দেয় নেতাকমর্ীরা।
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় পুলিশ শত শত রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলেও উল্টো বাতাসের কারণে তা বিক্ষোভকারীদের তেমন দমন না করে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে আটকা পড়া লোকজন একে একে বের হয়ে আসতে থাকেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশের বক্তব্য : মতিঝিল জোনের এডিসি মনিরুজ্জামান জানান, হাজার হাজার জামায়াত নেতাকমর্ী হঠাৎ করেই পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। বিক্ষোভ কর্মসূচির চেয়ে তারা যেখানে পুলিশ পেয়েছে সেখানেই হামলা চালিয়েছে। এ কারণে সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পুলিশকে একটু সময় নিতে হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
জামায়াতের বক্তব্য : সোমবার কাকরাইল মোড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের হামলা, ৪০০ নেতাকমর্ীকে আহত এবং শতাধিক নেতাকমর্ীকে আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সোমবার সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর আলহাজ মকবুল আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এক বিবৃতিতে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দায়ী পুলিশদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, পুলিশ বেআইনিভাবে জামায়াতের মিছিলে বাধা দিয়েছে এবং বর্বরোচিত পন্থায় জামায়াত নেতাকমর্ীদের ওপর জুলুম করেছে। সরকার ইচ্ছে করে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ দিয়ে হামলা করিয়েছে। সরকারের মনে রাখা উচিত এই সরকারই শেষ সরকার নয়। এই সরকারের পরে অন্য সরকার এলে অবশ্যই তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বিবৃতিতে বর্তমান সরকারকে 'জুলুমবাজ ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগের দাবি'তে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, বরিশাল ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের মিছিলে বাধা দেয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। তারা গ্রেফতারকৃত নেতাকমর্ীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে বিচার বন্ধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কয়েক দিন আগে জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর দু'দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
No comments:
Post a Comment