বাংলাদেশ একটি টাকাও পায়নি, একটি কম্পিউটারও না। তবু শুধু চুক্তিভঙ্গের দায়ে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক টিউলিপ কম্পিউটার কোম্পানিকে ২৩ কোটি টাকা জরিমানা দিলো সরকার। নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার সমপ্রতি ওই কোম্পানির লোকদের ২ মিলিয়ন ১৩০ হাজার ইউরো বা ২৩ কোটি টাকা পৌঁছে দিয়েছেন কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে। জরিমানার নগদ টাকা ছাড়াও গত ৯ বছর মামলা চালানোর খরচ ও বর্তমান এবং সাবেক সরকারের (তত্ত্বাবধায়ক আমলসহ) এটর্নি জেনারেলসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার নেদারল্যান্ড সফরে সরকারি তহবিল থেকে আরও খরচ হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ কোটি নগদ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আর ২০০৪ সালে দেয়া ডাচ আদালতের রায় অনুযায়ী চুক্তিভঙ্গের শাস্তি হিসেবে সে দেশে বাংলাদেশের জাহাজ গেলেই আটক করা ও অপর একটি প্রকল্পে নেদারল্যান্ড প্রতিশ্রুত অনুদান ২৪৫ কোটি টাকা দেয়া বন্ধের নির্দেশ সংক্রান্ত খবর বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি তো আছেই। সাবেক ইআরডি সচিব ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষের দিকে এক শুক্রবার ছুটির দিনে অত্যন্ত গোপনে করা মারাত্মক গলদপূর্ণ ওই চুক্তিতে কি ছিল আর কেনই বা সরকারকে জরিমানার টাকা গুনতে হলো এ নিয়ে মানবজমিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য।
কি ছিল চুক্তিতে? বাংলাদেশের পক্ষে করা ওই চুক্তি অনুযায়ী টিউলিপ কোম্পানির কাছ থেকে ১০,৩৮৮টি কম্পিউটার ও কিছু আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনার কথা। চুক্তি অনুযায়ী দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে নেদারল্যান্ড সরকার আর বাকি ৫০ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে যুক্তি দেখায়, প্রতিটি কম্পিউটারের দাম ধরা হয়েছে দ্বিগুণ। ওই দামের চেয়ে অনেক কম দামে কম্পিউটার পাওয়া যায়। সুতরাং চুক্তি অনুযায়ী কম্পিউটার কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে নতুন সরকার। চুক্তি অনুযায়ী নেদারল্যান্ড সরকারও ৪৮ কোটি টাকা অনুদান দেয়নি। ২০০২ সালের ৩০ জুলাই টিউলিপ কোম্পানির আইনজীবী বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া এক চিঠিতে জানায় একই বছরের ১৬ই আগস্টের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে মামলা করবে। এছাড়া কূটনৈতিক পর্যায়েও দেনদরবার চালায় টিউলিপ কোম্পানি। কিন্তু কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে তারা। ২০০৩ সালের মে মাসে একতরফা রায়ে চুক্তিভঙ্গের দায়ে প্রায় ৩১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় বাংলাদেশকে। কিছুদিন পর আরেকটি মামলা করে টিউলিপ কোম্পানি। এতে মামলা চালানোর খরচ ও সুদ বাংলাদেশের কাছে দাবি করা হয়। ওই মামলার রায়ও বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। এসব খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হয়। বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় জরিমানার ওই টাকা না দেয়ার এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।
কি বলেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর? ২০০৪ সালের ৭ই জুন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির প্রধান অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান একটা মিটিং শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, ‘ডাচ কোম্পানি আমাদের টাকা দেয়নি, কম্পিউটারও দেয়নি। তবে আমরা কেন ডাচ আদালতের রায় অনুযায়ী জরিমানার (৩১ কোটি) টাকা দেবো। এমন একতরফা চুক্তির কথা আগে কখনও শুনিনি।’ জরিমানা দিতে রাজি না হয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
‘কোন এক শুক্রবারে ছুটির দিনে চুক্তিটির পত্তন হয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ের আপত্তি সত্ত্বেও তৎকালীন ইআরডি সচিব মসিউর রহমান চুক্তিটি সম্পাদনে খুবই উৎসাহ দেখিয়েছিলেন...। ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও কেন এত কঠিন শর্ত মেনে চুক্তিটি হয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং এমনতরো একতরফা চুক্তি সম্পাদনের জন্য মসিউরকে দায়ী করা হয়।’ সাইফুরের সঙ্গে ওই মিটিংয়ে উপস্থিত কেবিনেট সচিব ড. সা’দত হোসাইনও (বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশন চেয়ারম্যান) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বা ইআরডি’র এমন চুক্তি সম্পাদনের সমালোচনা করেন।
কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর ২০০৭ সালে এসে আবার আলোচনা শুরু হয় আদালতের বাইরে মীমাংসা করা যায় কিনা। ২০০৮ সালে উপদেষ্টা পরিষদেও বিষয়টি আলোচনা হয়। ২০০৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্টের জন্য এটর্নি জেনারেলকে অনুরোধ জানানোর। গত বছরের শেষের দিকে এটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে শিক্ষা, আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১২ সদস্যের একটি দল আলাপ-আলোচনার জন্য নেদারল্যান্ড গিয়ে টিউলিপ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা না পেলে কোন মীমাংসা নয় বলে টিউলিপের প্রতিনিধিরা জানান। অতঃপর বাংলাদেশ জরিমানা দিতে রাজি হয়। এরপর একটি চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়। নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আলী সরকার ও টিউলিপের পক্ষে জে এল এম গ্রয়েনিউজেন চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একটি চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির কপি মানবজমিন-এর হাতে রয়েছে। চুক্তির একটি কপি এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ ডেস্কের মহাপরিচালক মো. শামসুল হককে পাঠান। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে ইতিমধ্যে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আমরা শুধু শুনেছি ৫৩ কোটি টাকা জরিমানা ও সুদের টাকার কথা। কিন্তু সন্দেহ আছে এর পরিমাণ নিয়ে। দেনদরবার করে আদৌ জরিমানার টাকা কমানো গেছে নাকি তৃতীয় পক্ষের পেটে গেছে সরকারি টাকা তা এখনও রহস্যময়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথি টিউলিপ কোম্পানির হাতে: ২০০৫ সালের ৩০শে জুলাইর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়, টিউলিপ কোম্পানির মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথি মন্ত্রণালয় থেকে চুরি হয়েছে এবং সেটা টিউলিপ কোম্পানির হাতে পৌঁছে গেছে।
কি ছিল চুক্তিতে? বাংলাদেশের পক্ষে করা ওই চুক্তি অনুযায়ী টিউলিপ কোম্পানির কাছ থেকে ১০,৩৮৮টি কম্পিউটার ও কিছু আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনার কথা। চুক্তি অনুযায়ী দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে নেদারল্যান্ড সরকার আর বাকি ৫০ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে যুক্তি দেখায়, প্রতিটি কম্পিউটারের দাম ধরা হয়েছে দ্বিগুণ। ওই দামের চেয়ে অনেক কম দামে কম্পিউটার পাওয়া যায়। সুতরাং চুক্তি অনুযায়ী কম্পিউটার কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে নতুন সরকার। চুক্তি অনুযায়ী নেদারল্যান্ড সরকারও ৪৮ কোটি টাকা অনুদান দেয়নি। ২০০২ সালের ৩০ জুলাই টিউলিপ কোম্পানির আইনজীবী বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া এক চিঠিতে জানায় একই বছরের ১৬ই আগস্টের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে মামলা করবে। এছাড়া কূটনৈতিক পর্যায়েও দেনদরবার চালায় টিউলিপ কোম্পানি। কিন্তু কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে তারা। ২০০৩ সালের মে মাসে একতরফা রায়ে চুক্তিভঙ্গের দায়ে প্রায় ৩১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় বাংলাদেশকে। কিছুদিন পর আরেকটি মামলা করে টিউলিপ কোম্পানি। এতে মামলা চালানোর খরচ ও সুদ বাংলাদেশের কাছে দাবি করা হয়। ওই মামলার রায়ও বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। এসব খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হয়। বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় জরিমানার ওই টাকা না দেয়ার এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।
কি বলেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর? ২০০৪ সালের ৭ই জুন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির প্রধান অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান একটা মিটিং শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, ‘ডাচ কোম্পানি আমাদের টাকা দেয়নি, কম্পিউটারও দেয়নি। তবে আমরা কেন ডাচ আদালতের রায় অনুযায়ী জরিমানার (৩১ কোটি) টাকা দেবো। এমন একতরফা চুক্তির কথা আগে কখনও শুনিনি।’ জরিমানা দিতে রাজি না হয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
‘কোন এক শুক্রবারে ছুটির দিনে চুক্তিটির পত্তন হয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ের আপত্তি সত্ত্বেও তৎকালীন ইআরডি সচিব মসিউর রহমান চুক্তিটি সম্পাদনে খুবই উৎসাহ দেখিয়েছিলেন...। ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও কেন এত কঠিন শর্ত মেনে চুক্তিটি হয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং এমনতরো একতরফা চুক্তি সম্পাদনের জন্য মসিউরকে দায়ী করা হয়।’ সাইফুরের সঙ্গে ওই মিটিংয়ে উপস্থিত কেবিনেট সচিব ড. সা’দত হোসাইনও (বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশন চেয়ারম্যান) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বা ইআরডি’র এমন চুক্তি সম্পাদনের সমালোচনা করেন।
কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর ২০০৭ সালে এসে আবার আলোচনা শুরু হয় আদালতের বাইরে মীমাংসা করা যায় কিনা। ২০০৮ সালে উপদেষ্টা পরিষদেও বিষয়টি আলোচনা হয়। ২০০৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্টের জন্য এটর্নি জেনারেলকে অনুরোধ জানানোর। গত বছরের শেষের দিকে এটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে শিক্ষা, আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১২ সদস্যের একটি দল আলাপ-আলোচনার জন্য নেদারল্যান্ড গিয়ে টিউলিপ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা না পেলে কোন মীমাংসা নয় বলে টিউলিপের প্রতিনিধিরা জানান। অতঃপর বাংলাদেশ জরিমানা দিতে রাজি হয়। এরপর একটি চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়। নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আলী সরকার ও টিউলিপের পক্ষে জে এল এম গ্রয়েনিউজেন চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একটি চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির কপি মানবজমিন-এর হাতে রয়েছে। চুক্তির একটি কপি এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ ডেস্কের মহাপরিচালক মো. শামসুল হককে পাঠান। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে ইতিমধ্যে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আমরা শুধু শুনেছি ৫৩ কোটি টাকা জরিমানা ও সুদের টাকার কথা। কিন্তু সন্দেহ আছে এর পরিমাণ নিয়ে। দেনদরবার করে আদৌ জরিমানার টাকা কমানো গেছে নাকি তৃতীয় পক্ষের পেটে গেছে সরকারি টাকা তা এখনও রহস্যময়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথি টিউলিপ কোম্পানির হাতে: ২০০৫ সালের ৩০শে জুলাইর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়, টিউলিপ কোম্পানির মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথি মন্ত্রণালয় থেকে চুরি হয়েছে এবং সেটা টিউলিপ কোম্পানির হাতে পৌঁছে গেছে।
No comments:
Post a Comment