আল কায়দার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী গত রোববার রাতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তরে অ্যাবোটাবাদ অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর একটি ছোট দল মাত্র ৪০ মিনিটের অভিযানে তাঁকে হত্যা করে। লাদেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বিশ্ববাসীকে বলেন, ‘ন্যায়বিচার হয়েছে।’ এ ঘোষণার পরপরই উল্লাসে মেতে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। ওবামা তাঁর ভাষণে বলেন, ওসামা বিন লাদেনের লাশ মার্কিন হেফাজতে আছে। তবে রাতে এবিসি, সিএনএন ও ফক্স টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, বিন লাদেনকে সাগরে সমাহিত করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, ‘বিন লাদেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে আল-কায়েদা নির্মূলের যুদ্ধ বন্ধ হবে না। তারা (আল-কায়েদা) যেন না ভাবে, যুদ্ধে আমরা ক্ষান্ত দেব।’
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা জানায়, পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রোববার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১১টা) এ অভিযান শুরু হয়। মাত্র ৪৫ মিনিটের অভিযানেই মারা পড়েন ওসামা। খুব স্বল্প উচ্চতা দিয়ে দুই থেকে তিনটি হেলিকপ্টার উড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করেন। একটি বড় তিনতলা ভবন ছিল অভিযানের লক্ষ্য। ভবনটির বাইরে হেলিকপ্টারগুলো অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে সেনারা পশতু ভাষায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন। এরপর আশপাশের এলাকায় অবস্থানকারী মানুষকে বাতি নিভিয়ে ঘরের ভেতরেই থাকতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় গোলাগুলি। গোলাগুলির সময় স্থানীয়রা একটি হেলিকপ্টারে আগুন লাগতে দেখেছেন। প্রায় ৯ হাজার বর্গফুট জমির ওপর ওই তিনতলা ভবনটির অবস্থান। কিন্তু চতুর্দিকে ১৪ ফুট উঁচু দেয়াল থাকায় বাইরে থেকে ভেতরের ঘটনা ভালোভাবে দেখা যায়নি। দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া ও বিভিন্ন পয়েন্টে ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই বাড়িতে প্রবেশে দুটি ফটক ছিল। তবে টেলিফোন বা ইন্টারনেটের কোন সংযোগ ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অভিযান শেষে সেনাদের ওই চত্বর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এ সময় তারা অন্য কাউকে নিয়ে আসছিল কি না, তা বোঝা যায়নি। তবে নারী ও শিশুরাও ওই ভবনে ছিল বলে স্থানীয়রা জানায়। এক পশতু ১০ থেকে ১২ বছর আগে ওই বাড়ি নির্মাণ করেন। সেখানে কে বা কারা বসবাস করছে, সে বিষয়ে স্থানীয়দের কোন ধারণাই ছিল না। অভিযান শেষে পাকিস্তানি সেনারা সেখানে যায় এবং ওই অঞ্চলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। আফগানিস্তান থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে যাওয়া মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের হেলিকপ্টার থেকেই বাড়িটিতে নামিয়ে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা অভিযান শুরু করলে আল কায়দা নেতাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে তারা লাদেনকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ, কংগ্রেস সূত্র ও অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন একথা জানায়।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে লাদেন ছাড়াও তাঁর এক ছেলে, এক অজ্ঞাতনামা নারী এবং লাদেনের এক বার্তাবাহক ও তাঁর ভাই নিহত হয়েছেন। নিহত ওই নারী সম্ভবত লাদেনের কনিষ্ঠ স্ত্রী আমাল আল-সাদাহ। লাদেনের বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। এই অভিযানের বিষয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ জানতেন না। এ সময় সতর্কতার সঙ্গে সেনা সদস্যরা গুলি চালায় বলে জানায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ওসামা বিন লাদেনের সর্বশেষ স্ত্রী ও তার সন্তানরা এই বাড়িটিতে অবস্থান করার কারণেই এ সতর্কতা বলে জানায় তারা। অভিযানে আরও ৩ জন নিহত হয়েছে বলেও জানা যায়। তাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছে।
ঠিক কে ওসামা বিন লাদেনকে গুলি করেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযানে মার্কিন পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু অভিযানে যাওয়ার পথে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয় বলে জানায় প্রশাসন। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে আগেভাগে তথ্য পাওয়া গেলেও নিশ্ছিদ্র অভিযান নিশ্চিত করতে বিষয়টি গোপন রাখে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, বারাক ওবামা প্রশাসনের মাত্র গুটিকয় ঊর্ধ্বতনই এ তথ্য জানতেন।
যেভাবে খোঁজ মিলল: মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পর আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে লাদেনের বিশ্বস্ত এক বার্তাবাহকের কথা জানা যায়। তাঁরা জানান, ওই বার্তাবাহক সম্ভবত লাদেনের সঙ্গেই আছেন। এরপর চার বছরের বেশি সময় ধরে ওই বার্তাবাহককে অনুসরণ করতে থাকেন মার্কিন গোয়েন্দারা। গত বছরের আগস্টে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, ওই বার্তাবাহক ও তাঁর ভাই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অ্যাবোটাবাদের বিলাল এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছেন। মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাড়িটি প্রথমে দেখার পর আমাদের বেশ অবাক লাগে। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে এই বাড়িটি অনেক বড়। নিরাপত্তাব্যবস্থাও বেশ জোরালো। প্রথম দিকেই আমাদের সন্দেহ হয়, এই বাড়ি থেকে অনেক বড় বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়ার পর আমাদের মনে হতে থাকে, এখানে লাদেনের থাকার সম্ভাবনা আছে।’ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ শেষে একপর্যায়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, লাদেন এখানেই আছেন। অথচ বাড়িটি থেকে কয়েক গজ দূরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি। আশপাশের বাড়িগুলোতে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা।
যেভাবে অভিযান: লাদেনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরও পাকিস্তানে সরাসরি কোনো অভিযান পরিচালনা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল মার্কিন বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে গত মার্চ ও এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন মার্কিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা। অবশেষে অভিযান চালানোর জন্য সবুজ সংকেত দেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত পৌনে দুইটার দিকে ওই বাড়িতে অভিযান চালায় মার্কিন মেরিন সেনার একটি ছোট দল। চারটি হেলিকপ্টার নিয়ে তারা সেখানে অবতরণ করে। এরপর মার্কিন বাহিনী ঢুকে পড়ে বাড়িটির নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, অপর দিক থেকে গুলি ছোড়া হয় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে। ৪০ মিনিটের মতো দুই পক্ষে গোলাগুলি চলে। এতেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আতঙ্ক আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
অভিযানে মার্কিন বাহিনীর পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। তবে তাদের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজন জানান, বাড়ির ছাদ থেকে রকেটচালিত গ্রেনেডের আঘাতে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অভিযানের পর পাকিস্তানি বাহিনী এলাকাটি ঘিরে রাখে।
প্রত্যক্ষদর্শীর কথা: অ্যাবোটাবাদের বিলাল এলাকার এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘মাঝরাতে হেলিকপ্টারের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। একটু পরই শুরু হলো গোলাগুলি। চলল অনেকক্ষণ। হঠাৎ একটি বিকট বিস্ফোরণে লোকজন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। তখনো বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। এরপর শুনতে পেলাম অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ। একটি জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সবাই তখন ভয়ে কাঁপছিল। সকালে টেলিভিশনে শুনলাম, লাদেন মারা গেছেন।’
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে (টুইন টাওয়ার) সন্ত্রাসী হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ আল কায়দার শীর্ষ নেতাকে জীবিত অথবা মৃত ধরার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেন; কিন্তু তার টিকিটিরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে ওই হামলায় অন্তত ৩ হাজার মানুষ মারা যায়। টুইন টাওয়ারে হামলার পর থেকে বিন লাদেন ও তার সংগঠন আল কায়দা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'র প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়। এরপর থেকে আত্মগোপনে ছিল লাদেন।
ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালের ১০ মার্চ। সে সৌদি আরবের সম্পদশালী লাদেন পরিবারের সদস্য। সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামাকে টুইন টাওয়ারে হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা জানায়, পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রোববার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১১টা) এ অভিযান শুরু হয়। মাত্র ৪৫ মিনিটের অভিযানেই মারা পড়েন ওসামা। খুব স্বল্প উচ্চতা দিয়ে দুই থেকে তিনটি হেলিকপ্টার উড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী কিছুটা আতঙ্কিত বোধ করেন। একটি বড় তিনতলা ভবন ছিল অভিযানের লক্ষ্য। ভবনটির বাইরে হেলিকপ্টারগুলো অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে সেনারা পশতু ভাষায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন। এরপর আশপাশের এলাকায় অবস্থানকারী মানুষকে বাতি নিভিয়ে ঘরের ভেতরেই থাকতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় গোলাগুলি। গোলাগুলির সময় স্থানীয়রা একটি হেলিকপ্টারে আগুন লাগতে দেখেছেন। প্রায় ৯ হাজার বর্গফুট জমির ওপর ওই তিনতলা ভবনটির অবস্থান। কিন্তু চতুর্দিকে ১৪ ফুট উঁচু দেয়াল থাকায় বাইরে থেকে ভেতরের ঘটনা ভালোভাবে দেখা যায়নি। দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া ও বিভিন্ন পয়েন্টে ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই বাড়িতে প্রবেশে দুটি ফটক ছিল। তবে টেলিফোন বা ইন্টারনেটের কোন সংযোগ ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অভিযান শেষে সেনাদের ওই চত্বর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এ সময় তারা অন্য কাউকে নিয়ে আসছিল কি না, তা বোঝা যায়নি। তবে নারী ও শিশুরাও ওই ভবনে ছিল বলে স্থানীয়রা জানায়। এক পশতু ১০ থেকে ১২ বছর আগে ওই বাড়ি নির্মাণ করেন। সেখানে কে বা কারা বসবাস করছে, সে বিষয়ে স্থানীয়দের কোন ধারণাই ছিল না। অভিযান শেষে পাকিস্তানি সেনারা সেখানে যায় এবং ওই অঞ্চলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। আফগানিস্তান থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে যাওয়া মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের হেলিকপ্টার থেকেই বাড়িটিতে নামিয়ে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা অভিযান শুরু করলে আল কায়দা নেতাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে তারা লাদেনকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ, কংগ্রেস সূত্র ও অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন একথা জানায়।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে লাদেন ছাড়াও তাঁর এক ছেলে, এক অজ্ঞাতনামা নারী এবং লাদেনের এক বার্তাবাহক ও তাঁর ভাই নিহত হয়েছেন। নিহত ওই নারী সম্ভবত লাদেনের কনিষ্ঠ স্ত্রী আমাল আল-সাদাহ। লাদেনের বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। এই অভিযানের বিষয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ জানতেন না। এ সময় সতর্কতার সঙ্গে সেনা সদস্যরা গুলি চালায় বলে জানায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ওসামা বিন লাদেনের সর্বশেষ স্ত্রী ও তার সন্তানরা এই বাড়িটিতে অবস্থান করার কারণেই এ সতর্কতা বলে জানায় তারা। অভিযানে আরও ৩ জন নিহত হয়েছে বলেও জানা যায়। তাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছে।
ঠিক কে ওসামা বিন লাদেনকে গুলি করেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযানে মার্কিন পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু অভিযানে যাওয়ার পথে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয় বলে জানায় প্রশাসন। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে আগেভাগে তথ্য পাওয়া গেলেও নিশ্ছিদ্র অভিযান নিশ্চিত করতে বিষয়টি গোপন রাখে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, বারাক ওবামা প্রশাসনের মাত্র গুটিকয় ঊর্ধ্বতনই এ তথ্য জানতেন।
যেভাবে খোঁজ মিলল: মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পর আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে লাদেনের বিশ্বস্ত এক বার্তাবাহকের কথা জানা যায়। তাঁরা জানান, ওই বার্তাবাহক সম্ভবত লাদেনের সঙ্গেই আছেন। এরপর চার বছরের বেশি সময় ধরে ওই বার্তাবাহককে অনুসরণ করতে থাকেন মার্কিন গোয়েন্দারা। গত বছরের আগস্টে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, ওই বার্তাবাহক ও তাঁর ভাই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অ্যাবোটাবাদের বিলাল এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছেন। মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাড়িটি প্রথমে দেখার পর আমাদের বেশ অবাক লাগে। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে এই বাড়িটি অনেক বড়। নিরাপত্তাব্যবস্থাও বেশ জোরালো। প্রথম দিকেই আমাদের সন্দেহ হয়, এই বাড়ি থেকে অনেক বড় বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়ার পর আমাদের মনে হতে থাকে, এখানে লাদেনের থাকার সম্ভাবনা আছে।’ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ শেষে একপর্যায়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, লাদেন এখানেই আছেন। অথচ বাড়িটি থেকে কয়েক গজ দূরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি। আশপাশের বাড়িগুলোতে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা।
যেভাবে অভিযান: লাদেনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরও পাকিস্তানে সরাসরি কোনো অভিযান পরিচালনা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল মার্কিন বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে গত মার্চ ও এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন মার্কিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা। অবশেষে অভিযান চালানোর জন্য সবুজ সংকেত দেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত পৌনে দুইটার দিকে ওই বাড়িতে অভিযান চালায় মার্কিন মেরিন সেনার একটি ছোট দল। চারটি হেলিকপ্টার নিয়ে তারা সেখানে অবতরণ করে। এরপর মার্কিন বাহিনী ঢুকে পড়ে বাড়িটির নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, অপর দিক থেকে গুলি ছোড়া হয় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে। ৪০ মিনিটের মতো দুই পক্ষে গোলাগুলি চলে। এতেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আতঙ্ক আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
অভিযানে মার্কিন বাহিনীর পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। তবে তাদের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজন জানান, বাড়ির ছাদ থেকে রকেটচালিত গ্রেনেডের আঘাতে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অভিযানের পর পাকিস্তানি বাহিনী এলাকাটি ঘিরে রাখে।
প্রত্যক্ষদর্শীর কথা: অ্যাবোটাবাদের বিলাল এলাকার এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘মাঝরাতে হেলিকপ্টারের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। একটু পরই শুরু হলো গোলাগুলি। চলল অনেকক্ষণ। হঠাৎ একটি বিকট বিস্ফোরণে লোকজন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। তখনো বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। এরপর শুনতে পেলাম অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ। একটি জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সবাই তখন ভয়ে কাঁপছিল। সকালে টেলিভিশনে শুনলাম, লাদেন মারা গেছেন।’
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে (টুইন টাওয়ার) সন্ত্রাসী হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ আল কায়দার শীর্ষ নেতাকে জীবিত অথবা মৃত ধরার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেন; কিন্তু তার টিকিটিরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে ওই হামলায় অন্তত ৩ হাজার মানুষ মারা যায়। টুইন টাওয়ারে হামলার পর থেকে বিন লাদেন ও তার সংগঠন আল কায়দা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'র প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়। এরপর থেকে আত্মগোপনে ছিল লাদেন।
ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালের ১০ মার্চ। সে সৌদি আরবের সম্পদশালী লাদেন পরিবারের সদস্য। সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামাকে টুইন টাওয়ারে হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
No comments:
Post a Comment