বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের দাড়িদহ গ্রামের চাঁন মিয়ার পুত্র আবদুল মালেকের পেটে মানব সন্তানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পেটের মধ্যে মানব শিশুর অস্তিত্ব নিয়ে মালেক এখন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শজিমেক চিকিৎসকদের দাবি- এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে সারা বিশ্বে এ ধরনের ঘটনা রয়েছে ৯০টি। পেটে মানব সন্তান নিয়ে আবদুল মালেক (৪০) শজিমেক হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৩ পুরুষ ওয়ার্ড, বেড ৬০-এ চিকিৎসাধীন। গত ২৮শে এপ্রিল আবদুল মালেক পেট ব্যথা নিয়ে শজিমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়। পেট উঁচু দেখে চিকিৎসকদের ধারণা জন্মে তার পেটে টিউমার জাতীয় কিছু রয়েছে। পরে আলট্রাসনোগ্রাম করে চিকিৎসক দেখতে পান আবদুল মালেকের পাকস্থলির পেছনে পিঠের সঙ্গে একটি বড় আকারের মাংস পিণ্ডের অস্তিত্ব। কিন্তু পাকস্থলির পেছনে এবং পিঠের সঙ্গে মাংস পিণ্ডের অবস্থান দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। গত ২রা মে আবদুল মালেকের পেটে সিটি স্ক্যান করে নিশ্চিত হন টিউমারটি একটি অপরিপূর্ণ মানব সন্তান। সিটি স্ক্যানে মানব শিশুর মেরুদণ্ড ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কিছু অংশ দেখতে পাওয়া যায়। গতকাল দুপুরে মেডিসিন বিভাগের ইউনিট প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. এ কে এম মাসুদুর রহমান জানান, পুরুষের পেটে মানব সন্তানের অস্তিত্ব বাংলাদেশে এই প্রথম। ১৯৯৯ সালে ভারতের নাগপুরে ৩৬ বছর বয়স্ক সঞ্জু ভগতের পেটে মানব সন্তানের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। পরে অপারেশন করে অপরিপূর্ণ মানব সন্তানটি অপসারণ করা হয়। সে সঞ্জু ভগতের সঙ্গে বগুড়ার আবদুল মালেকের পেটের সন্তানের মিল পাওয়া যায়। ডা. মাসুদুর রহমান আরও জানান, আবদুল মালেক মায়ের গর্ভে থাকা কালেই অন্য একটি ভ্রূণ আরেকটি ভ্রূণের সঙ্গে মিশে যায়। সাধারণত গর্ভধারণের ৪ মাসের মধ্যে একটি ভ্রূণ আরেকটি ভ্রূণের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে। যমজ সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে ২টি ভ্রূণের সৃষ্টি হয় বলে চিকিৎসকরা জানান। এরপর আবদুল মালেক জন্মগ্রহণ করার পর ওই ভ্রূণটি তার পেটেই বাড়তে থাকে। আবদুল মালেকের রক্ত এবং খাদ্যনালীর সঙ্গে অপর ভ্রূণটি যুক্ত থাকায় ছোট থেকেই আবদুল মালেক অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে বড় হয়ে ওঠে। তবে আবদুল মালেকের পেটে থাকা মানব সন্তানটি অপরিপূর্ণ একটি শিশু বলে চিকিৎসকরা জানান। আবদুল মালেকের পারিবারিক সূত্র জানায়, ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধি কম হওয়ায় সে কোন কাজকর্ম করতো না, এমনকি বিয়ে পর্যন্ত করেনি। ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে আবদুল মালেক বড়। তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর হলো তার পেট বাড়তে থাকলেও তেমন কোন সমস্যা না হওয়ায় এবং অভাব অনটনের কারণে চিকিৎসা করাতে পারেননি। তবে মাস খানেক আগে থেকে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হচ্ছিল এবং এক পর্যায় খাওয়া দাওয়া বন্ধের উপক্রম হলে হাসপাতালে ভর্তি হলে এ ঘটনা প্রকাশ পায়।
May 12, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment