
রাজপ্রাসাদে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তো কি হয়েছে? কিংবা যে স্থানটিতে একদিনের জন্য বিশ্ববাসীর চোখ আটকে গিয়েছিল, সেই ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে দাঁড়িয়ে বিয়ের মঞ্চে বর-কনে বেশে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেটের যাওয়ার মুহূর্তের সাক্ষী হতে না পারায়ও কোন আফসোস নেই। প্রযুক্তির কল্যাণে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেটের রাজকীয় সেই বিয়ের বাতাস ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশকেও। দেশ-বিদেশের অন্তত ২০০ কোটি মানুষের মতো গতকাল ঘরে বসে এদেশের জনগণ উপভোগ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও ঐতিহাসিক বিয়ে। শহর, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই ঐতিহাসিক বিয়ের মুহূর্ত থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখেননি। কখন বর-কনে গির্জার উদ্দেশে বেরুবেন। কোন গাড়িতে বৃটিশ রাজতন্ত্রের দ্বিতীয় উত্তরাধিকার প্রিন্স উইলিয়াম যাচ্ছেন। কোন গাড়িতেই বা যাচ্ছেন তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী কেট। তার পাশে কে বসা। আর কেটের গায়ে কেমন পোশাক, দেখতে কেমন লাগছে তাকে- এর সবই টিভির পর্দায় তীক্ষ্ণভাবে পরখ করেছেন তারা।
খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে। খুব মিষ্টি। বিয়ের মঞ্চে উঠেই এই বলে কেট মিডলটনকে চমকে দেন প্রিন্স উইলিয়াম। হবু বরের মুখ থেকে এভাবে, এমন স্থানে এমন প্রশংসা হয়তো আশাই করেননি কেট। এর পরই শুরু হয় দু’জনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সম্পন্ন হয় এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে জমকালো বিয়ে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে এক বর্ণাঢ্য উৎসবে মিলিত করে তারা গতকাল ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে আবদ্ধ হন বিয়ের বন্ধনে। উচ্চারণ করেন সারা জীবনে একে অন্যকে সঙ্গী করে চলার শপথ। বলেন, ‘আই ডু’। এক রাজকীয় চুম্বনের মাধ্যমে তাদের যাত্রা শুরু হয় নতুন জীবনে। বিয়ের লগ্নে নতুন সাজে এক নতুন কেটকে দেখেন উইলিয়াম। দেখে মুগ্ধ তিনি। সবার অলক্ষ্যে চমকে দেন তাকে। তার দিকে একটুখানি বামে হেলে চুপিসারে বলেন- খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে। জবাবে কেট এক গাল হাসি ছুড়ে মারেন। সঙ্গে দু’চারটে শব্দ বলেন আনন্দসূচক। কি বলেন তা স্পষ্ট শোনা যায়নি। গতকাল এমনই নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে তারা মিলিত হন নতুন সম্পর্কের আনন্দ-উৎসবে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার নাতি প্রিন্স উইলিয়ামকে উপহার দিয়েছেন ডিউক অব কেমব্রিজ আর কেট মিডলটনকে দিয়েছেন দ্য ডাচেস অব কেমব্রিজ খেতাব। এর পর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ১৯০২ সালে তৈরী স্টেট ল্যানডাউ অর্থাৎ চার চাকার বিশেষ রাজকীয় শকটে করে নবদম্পতি বাকিংহাম রাজপ্রাসাদের দিকে রওনা হন। এ শকটের ছাদ খোলা। একে টেনে নিয়ে যায় দু’টি ঘোড়া। প্রহরায় থাকে আরও ঘোড়া ও সেনা সদস্য। রাজপ্রাসাদে যাওয়ার সময় তারা দু’জনেই রাস্তার দু’ধারে অপেক্ষমাণ জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তে থাকেন। এ সময় জনতার হর্ষধ্বনিতে কেঁপে ওঠে চারপাশ। বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে তারা ঐতিহাসিক চুমু বিনিময় করেন। এ সেই ব্যালকনি, যেখানে দাঁড়িয়ে ১৯৮১ সালের ২৯শে জুলাই উইলিয়ামের মা প্রিন্সেস ডায়ানা ও পিতা প্রিন্স চার্লস পরস্পরকে চুমু দিয়েছিলেন। বৃটিশ রাজপরিবারে সেটাই ছিল এ ধরনের প্রথম চুমু। গতকালের বিয়েতে সারাটা অনুষ্ঠানে যেন প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার উপস্থিতি অনুভব করেছেন সবাই। তিনি যে উইলিয়ামকে ছোট্ট ১৫ বছরের রেখে গিয়েছিলেন তারই বিয়ে। তিনি বেঁচে থাকলে উইলিয়ামের বিয়েতে সবার চেয়ে তিনিই হয়তো বেশি খুশি হতেন। বৃটেনের সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন টিভি সমপ্রচারে সে কথাটাই বারবার বলা হয়েছে। তার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বৃটেন জুড়ে ছিল উৎসব। লাখ লাখ মানুষ কড়া রোদ উপেক্ষা করে রাস্তায় অপেক্ষা করেন সারা দিন। তাদের সংখ্যা ৬ লাখের বেশি। এর বাইরে টেলিভিশন পর্দা আর বিভিন্ন স্থানে বসানো অতিকায় পর্দায় তো সমপ্রচার হয়েছেই। তার দর্শক কতজন ছিলেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। আর বিশ্ববাসী তো রয়েছেনই। সব মিলে রাজকীয় ওই বিয়ে উপভোগ করেছেন ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ। এ বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, তাদের ছেলে প্রিন্স চার্লস, তার স্ত্রী ক্যামিলা পার্কারসহ বৃটিশ রাজপরিবারের সব সদস্য। উপস্থিত ছিলেন কেট মিডলটনের পিতা মাইকেল মিডলটন ও মা ক্যারোল। বিয়ের মূল মঞ্চে কেট মিডলটনকে হাত ধরে নিয়ে যান তার পিতা মাইকেল। প্রিন্স উইলিয়ামকে নিয়ে যান তার ছোট ভাই প্রিন্স হ্যারি। সেখানে আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি সম্মানিত রেভারেন্ড রোয়ান উইলিয়ামস বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। তিনি প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি একটি আংটিতে প্রথা অনুযায়ী প্রার্থনা করেন। বলেন, ‘হে ঈশ্বর, এই আংটি এবং এই আংটি যিনি যাকে পরাবেন তিনি এবং যিনি পরবেন তারা দু’জন যেন একে অন্যকে বুঝতে পারেন। শান্তিতে থাকতে পারেন। তাদের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একত্রে বসবাস করতে পারেন।’ বিয়ের আগ পর্যন্ত কেট মিডলটন তার বিয়ের পোশাক কাউকে দেখাননি। এ বিষয়টি তিনি রেখেছিলেন একেবারে গোপন। তা কি উইলিয়ামের কাছেও গোপন ছিল! গোপন ওই পোশাকে তাকে দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন উইলিয়াম। আর তাই তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন- খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে। গতকালের অনুষ্ঠানে বিশ্বের ৫০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ প্রায় ১৯০০ অতিথির উপস্থিতিতে বিয়ের শপথনামা পাঠ করেন এ নবদম্পতি। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশন পর্দায় দেখেন এ অনুষ্ঠান। প্রায় ১০ বছর প্রেম শেষে পরিণয়ে আবদ্ধ হলেন কেট-উইলিয়াম। উইলিয়াম লাল রঙের পোশাক পরে আর কেট সাদা গাউন পরে অ্যাবেতে পৌঁছান। শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। কনে কেটকে আংটি পরান প্রিন্স উইলিয়াম। একে অপরের প্রতি শপথনামা পাঠ করেন তারা। উইলিয়ামের বর্তমান বয়স ২৮, মিডলটনের ২৯। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, তার স্ত্রী সামান্থা, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড, সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যর জন মেজর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে, ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ১৯০০ অতিথির মধ্যে ছিলেন বর ও কনের পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজপরিবারের প্রায় ৪০ জন সদস্যও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ ছাড়াও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ অধিনায়ক এবং ধর্মীয় নেতা ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। উইলিয়াম ও মিডলটনের বিয়ের অনুষ্ঠানের আনন্দের ভাগ পেতে লন্ডনে উপস্থিত হন বৃটেনসহ বিশ্বের প্রায় ৯ লাখ মানুষ। রাজকীয় এই বিয়ে নিয়ে বৃটেনবাসীর আগ্রহ-উদ্দীপনার কোন কমতি ছিল না। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় পুরোটা সময়ই রাজ্যজুড়ে চলেছে নানা অনুষ্ঠান। লন্ডন প্রকৃত অর্থে সারা রাত জেগেই কাটিয়েছে। এরই এক ফাঁকে প্রিন্স উইলিয়াম হঠাৎ করে সেই জনসমাবেশে হাজির। যার বিয়ে তাকে কাছে পেয়ে আনন্দে ফেটে পড়ে জনতার সমুদ্র। এ সময় প্রিন্স উইলিয়াম তার বিয়েতে তাদের এতটা ত্যাগ স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি সেখানে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ফিরে যান নির্ধারিত স্থানে।
নবদম্পতি প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটন বাকিংহাম প্রাসাদে প্রবেশ করেন উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে। এটাই লন্ডনে রানীর বাসভবন। এখানে রানীর সঙ্গে ভোজসভায় অংশ নেয়ার কথা তাদের। এর আগে স্টেট ল্যানডাউতে চড়ে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে চার্চ থেকে বাকিংহামের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা। পেছনে যান রানী এবং অন্য অতিথিরা। রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ হাজারো মানুষ অভিবাদন জানান তাদের। হাত নেড়ে সাধারণ মানুষের অভিবাদনের জবাব দেন উইলিয়াম ও কেট। মুখে ভুবন মোহিনী হাসি আর বাঁ হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে গাড়িতে বসা কেট বারবার রাস্তার পাশের মানুষের উদ্দেশে ডান হাত নাড়েন। গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টার দিকে মহাআয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পরিণয়ে বাঁধা পড়েন উইলিয়াম ও কেট।
উপস্থিত ছিলেন প্রিন্স হ্যারির প্রেমিকাও
প্রিন্স উইলিয়াম একাই প্রেম করেননি। তার ছোট ভাই হ্যারিও প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তার প্রেমিকার নাম চেলসি ডেবি। তাদের প্রেমে উত্থান-পতন তো চলছেই। গতকালের বিয়েতে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন সেই চেলসিও। তিনিও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

নবদম্পতি প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটন বাকিংহাম প্রাসাদে প্রবেশ করেন উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে। এটাই লন্ডনে রানীর বাসভবন। এখানে রানীর সঙ্গে ভোজসভায় অংশ নেয়ার কথা তাদের। এর আগে স্টেট ল্যানডাউতে চড়ে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে চার্চ থেকে বাকিংহামের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা। পেছনে যান রানী এবং অন্য অতিথিরা। রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ হাজারো মানুষ অভিবাদন জানান তাদের। হাত নেড়ে সাধারণ মানুষের অভিবাদনের জবাব দেন উইলিয়াম ও কেট। মুখে ভুবন মোহিনী হাসি আর বাঁ হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে গাড়িতে বসা কেট বারবার রাস্তার পাশের মানুষের উদ্দেশে ডান হাত নাড়েন। গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টার দিকে মহাআয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পরিণয়ে বাঁধা পড়েন উইলিয়াম ও কেট।
উপস্থিত ছিলেন প্রিন্স হ্যারির প্রেমিকাও
প্রিন্স উইলিয়াম একাই প্রেম করেননি। তার ছোট ভাই হ্যারিও প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তার প্রেমিকার নাম চেলসি ডেবি। তাদের প্রেমে উত্থান-পতন তো চলছেই। গতকালের বিয়েতে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন সেই চেলসিও। তিনিও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
No comments:
Post a Comment