March 9, 2011

ড. ইউনূসের রিট খারিজ


গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের আদেশ অবৈধ ঘোষণার আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট আদালতে ড. ইউনূস রুল দিয়ে তার অভিযোগের চূড়ান্ত শুনানির আবেদন জানিয়েছিলেন আদালত প্রাথমিক শুনানিতে সেই রিট আবেদন নাকচ করে দেন আদালত বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অপসারণের আদেশ বৈধ এবং ড. ইউনূসকে তার ইচ্ছানুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগ সংক্রান্ত পরিচালনা পর্ষদের নেয়া সিদ্ধান্তের আইনগত কোন ভিত্তি নেই চাকরির বয়সসীমা ৬০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর অথর্াৎ ৯৯ সাল থেকেই ড. ইউনূস অবৈধভাবে এমডি পদে ছিলেন জানা গেছে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ড. ইউনূস সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আজ বুধবার আপিল দায়ের করবেন ইউনূসের কেঁৗসুলি ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক মামলা যা রুল জারি না করেই সরাসরি খারিজ করে দেয়া হলো অপর আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কা আগে থেকেই ছিল এ রায়ের পর তা সত্য প্রমাণিত হলো

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৭ মিনিট থেকে বিচারপতি মো. মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুরকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন ৩টা ৮ মিনিটে আদেশ প্রদান শেষ হয় আদালতের আদেশে বলা হয়, ১৯৮৩ সালে প্রণীত গ্রামীণ ব্যাংকের অধ্যাদেশ অনুযায়ী এমডি হিসাবে প্রথমে সরকার এবং পরে সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১৯৯০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ওই পদে নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা পায় এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালনা পর্ষদ ড. ইউনূসকে ১৯৯০ সালে এমডি পদে নিয়োগ প্রদান করে এই নিয়োগ অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক এক নোটিসে জানায় যদি এমডি পদে চাকরির শর্তে কোনো পরিবর্তন আনা হয় তাহলে আবারো কেন্দ ীয় ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে আদেশে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ১৪(১) ধারায় ঐ নিয়োগ সম্পর্কে বলা আছে, এমডি পদে নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে এবং তার চাকরির শর্তাবলী গ্রামীণ ব্যাংক নির্ধারণ করবে এছাড়া ১৯৯০ সালে ড. ইউনূসকে যখন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় তখন নিয়োগপত্রে উলেস্নখ ছিলো যে, তিনি ব্যাংকের একজন নিয়মিত কর্মকর্তার যে সুযোগ-সুবিধা আছে তা ভোগ করবেন ব্যাংকের চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তাদের অবসরের বয়সসীমা হবে ৬০ বছর ৬০ বছরের বয়সসীমা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রিট আবেদনকারীর (ড. ইউনূস) ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হবে ১৯৯৯ সালে ড. ইউনূসের বয়স ৬০ বছর উত্তীর্ণ হয় সুতরাং অবসরের বয়সসীমা অতিবাহিত হওয়ার পর ড. ইউনূসের আর ঐ পদে থাকার যোগ্যতা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে এতদিন এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন

আদেশে আরো বলা হয়, ১৯৯৯ সালে ব্যাংকের বোর্ড সভায় ইউনূসকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, আইনের দৃষ্টিতে তার কোনো ভিত্তি নেই কেননা ঐ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছিল না ফলে এই নিয়োগ বৈধ নয় ১৯৯৯ সালে চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ১২ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকার ব্যাপারে আপত্তি না করাকে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের উদারতা হিসেবে উলেস্নখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংক ইউনূসকে অপসারণের যে আদেশ দিয়েছে আদালত তাকেও বৈধতা দিয়েছে আদেশে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের অপসারণের আদেশ দেয়ার এখতিয়ার রাখে এছাড়া নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির সঙ্গে অপসারণের কোন যোগসূত্র নেই আদেশে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোন সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এটা অযৌক্তিক এটি হলে আইনের কোন প্রয়োগ থাকবে না এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের ৫২তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করার সুযোগ ছিল সেই সুযোগও গ্রহণ করা হয়নি বিভিন্ন যুক্তিতর্ক পযর্ালোচনা করে আবেদন খারিজ করা হলো

আদেশ প্রদানের সময় ড. ইউনূসের কেঁৗসুলি ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও এডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না তবে সরকার পক্ষে এটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এডভোকেট মুরাদ রেজা, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এডভোকেট তৌফিক নেওয়াজসহ একাধিক আইন কর্মকর্তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন

বাংলাদেশে নোবেল পাওয়ার যোগ্য শুধু শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমা : এটর্নি জেনারেল


ড. ইউনূসের রিট খারিজ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, দেশে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা। আমার দৃষ্টিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে শুধু এ দু’জনই হচ্ছেন যোগ্য ব্যক্তি। নোবেল পুরস্কার পাননি বলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের অবদান ছোট হয়ে যাবে না। আর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলেই যে ড. ইউনূসের সব কাজ বৈধ হয়ে যাবে, বিষয়টি এমনও নয়। অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের দিকে প্রশ্ন রেখে বলেন, মাদার তেরেসাও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু তিনি তো প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য চেষ্টা করেননি?

ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলো : ব্যারিস্টার সারা হোসেন

অন্যদিকে ড. ইউনূসের কেঁৗসুলি ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ন্যায় বিচার না পাওয়ার যে আশঙ্কা আমরা ব্যক্ত করেছিলাম তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, ব্যথিত আপিলের ব্যাপারে ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি দুঃখের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অবৈধ নোটিসকে আদালত আজ বৈধতা দিলো এবং বলল ৯৯ সাল থেকে তিনি অবৈধভাবে এ দায়িত্বে ছিলেন তাহলে কি আজ তার নোবেল পুরস্কার নিয়ে যেতে চান?

আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবতর্ী সিদ্ধান্ত: গ্রামীণ ব্যাংক

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণ নিয়ে হাইকোর্টে দুইটি রিট আবেদন খারিজ হওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কার্যত চুপচাপ হয়ে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন কি বললে কি হয় এই ভয় তাদের পেয়ে বসেছে

পরে ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জান্নাত ই কাওনাইন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রায় পেয়েছি আমরা খুবই মর্মাহত আমরা আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব আমরা আশা করি এর মাঝে কোনক্রমেই গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রায় এক কোটি সদস্য ও ছাবি্বশ হাজার কর্মী যারা তাদের কঠিন শ্রমের দ্বারা গ্রামীণ ব্যাংককে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে এবং তাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য দৃঢ়ভাবে নিয়োজিত আছে তাদের পরিকল্পনা ব্যাহত হবে না

এর কিছু পরে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করেন মানববন্ধন চলার সময় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে তাদের অবস্থান জোরদার করে মিরপুর এক নম্বরে সনি হলের সামনে থেকে মিরপুর দুই নম্বরে স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই মানববন্ধন ড. ইউনূস গতকাল সারাদিন ব্যাংকেই ছিলেন সেখানে তিনি রায় সম্পর্কে অবহিত হন

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor