নদীর এপারে থেকে মানুষের মাঝে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে...’। কিন্তু আজ আর এপারের না; ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষী আর আপনজনদের কাঁদিয়ে জীবন নদীর ওপারের বাসিন্দাই হয়ে গেছেন তিনি। প্রিয় এই মানুষটি ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফী। গতকাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তিনি পৃথিবীর সকল চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। ছিমছাম, সাজানো-গোছানো তার নিজের ফ্ল্যাটে সবই আছে, বাসিন্দারাও; শুধু তারই হয়েছে মহাপ্রয়াণ। তিনি এই চলে যাওয়ার সঙ্গে রেখে গেছেন শুভানুধ্যায়ীদের অফুরন্ত ভালবাসা আর তার শ্রদ্ধা। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বারিধারার সিরাজ গার্ডেনের নিজ ফ্ল্যাটে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি.... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৬ বছর। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানান জটিল রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমেছে গভীর শোকের ছায়া। প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ গুণী এই রবীন্দ্রশিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল দুপুরে তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বারিধারার বাসায় ভিড় জমিয়েছিলেন সংগীতাঙ্গনসহ সমাজের নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সর্বস্তরের জনগণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নামাজে জানাযা শেষে তাকে মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। কলিম শরাফীর জন্ম ১৯২৪ সালের ৮ই মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার খয়রাডিহি গ্রামে। সেটি ছিল তার নানাবাড়ি। মাত্র চার বছর বয়সেই তিনি মাকে হারান। মায়ের অবর্তমানে নানীর স্নেহেই শৈশবের দিন কাটে। গ্রামের লেটোর গান, ঝুমুর গান, আলকাপ, কীর্তন দেখতে দেখতেই তিনি বড় হয়ে ওঠেন। সবার অলক্ষ্যেই সংগীতের প্রতি এক অনির্বচনীয় টান যেন বাসা বাঁধে তার মনের গভীরে। ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এ সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে জড়িয়ে পড়েন বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে। গান্ধীজীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের দায়ে ১৯৪২ সালের আগস্টে তিনি গ্রেপ্তার হন।। তিনি স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদক লাভ করেছেন। অন্যসব আন্দোলনকারীর মধ্যে শিউড়ি জেলে তখন শরাফীই ছিলেন একমাত্র মুসলমান রাজবন্দি
No comments:
Post a Comment