June 21, 2010

রহস্যময় স্মৃতি

স্মৃতি কোথায়? পুলিশ বলছে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রিতার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। জুরাইনের আলোচিত মা ও তার দুই সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যুর ১০ দিন পরও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ফারজানা রিতার মা মাজেদা বেগম অভিযোগ করেছেন, নেপথ্যে থেকে পুলিশকে ম্যানেজ করছে স্মৃতি। মিডিয়ায় কাজ করার সুবাদে তার সঙ্গে অনেক প্রভাবশালীর সম্পর্ক রয়েছে। সেসব সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

রিতার ভগ্নিপতি কাজী মোহাম্মদ আরিফ বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি স্মৃতি একটি পত্রিকার পদস্থ কর্মকর্তার বাড়িতে লুকিয়ে আছে। এটা পুলিশ জানলেও অজ্ঞাত কারণে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে না। তিনি বলেন, কোন ঠিকানা না থাকার পরও শুধু নাম ধরেই গোপালগঞ্জ থেকে ড্রাইভার আল আমিনকে গ্রেপ্তার করতে পারা গেল। আর যাদের নাম-ঠিকানা সবই আছে, কে কোথায় চাকরি করে তা সবার জানা, তারপরও তাদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। অথচ আসামিরা আমাদের মোবাইল ফোনে নিয়মিত হুমকি দিয়ে চলেছে। রিতার ও তার দুই সন্তানের মৃত্যুর পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলার ৮ আসামির মধ্যে মাত্র ১ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ।

উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর সড়কের ব্রিলিয়ান্ট কিন্ডারগার্টেনের পাশেই থাকতেন রাশেদুল কবির ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা স্মৃতি। ঘটনার পরও রাশেদুলের সঙ্গে স্মৃতি দুই দিন ওই বাসায় ছিলেন। কিন্তু পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালাতে দেরি করায় তারা পালিয়ে যান। ঘটনার পর স্মৃতি তার কর্মস্থলে দু’ দিন গিয়েছেন বলেও জানা যায়। অফিসে পুলিশের অভিযান চলতে পারে এমন খবরে গত রোববার বিকালে তার এক মামা তাকে অফিস থেকে নিয়ে যান। সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তবে স্মৃতি এখনও ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। যোগাযোগ করা হলে পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের উপ-কমিশনার তৌফিক মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্মৃতিকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়ি এবং কর্মস্থল কয়েকবার ঘেরাও করেছে পুলিশ। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার গোলাম মোহাম্মদ আজাদ খান জানিয়েছেন, রাজিয়া সুলতানা স্মৃতিকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যে কোন সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি আরও জানান, আমরা জানতে পেরেছি আজ তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। আত্মসমর্পণ করতে এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে রিতার আত্মীয়-স্বজনদের প্রশ্ন একটাই, বোনের সংসার তছনছ করে ফুলের মতো নিষ্পাপ দুই শিশুর মৃত্যুর দায় কাঁধে থাকলেও সে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গত শুক্রবার রাজধানীর জুরাইনের ২২৯ আলমবাগের একটি বাসায় মা ও তার দুই সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। নিহতের স্বজনরা বলছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে তারা আত্মহত্যা করেছেন। তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে বিষয়টিকে পুরোপুরি আত্মহত্যা বলছে না পুলিশ। তাদের ধারণা তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। সেই সঙ্গে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও মামলার কিছু আলামতের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ওদিকে রিমান্ডের প্রথম দিনে গোয়েন্দা পুলিশ ড্রাইভার আল আমিন এবং ওষুধ বিক্রেতা আবদুল গাফফারের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। ফলে তাদের হাতের লেখা পরীক্ষা, ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। অন্যদিকে পরিচারিকা জিন্নাত আরা এবং ড্রাইভারের পৃথক বক্তব্যে বিভ্রান্ত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। সহকারী পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) গোলাম আজাদ খান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট রিপোর্টগুলো আগামীকাল (আজ) পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়া গেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ৫ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে আল আমিন বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্য না দিয়ে কেবল আবোলতাবোল কথা বলেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে যা বলেছিল সেসবেরই পুনরাবৃত্তি করেছে। ২ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে গাফফার জানিয়েছে, ওষুধ বিক্রির নিয়মকানুন ভাল জানি না। টাকা পেয়েছি, তাই ট্যাবলেট বিক্রি করেছি। এদিকে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, বাড়ির দেয়ালে লিপিবদ্ধ হাতের লেখা রিতার দুই সন্তান পাবন ও পায়েলের। এ সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor