জয়ের পিঠে জয়। তা-ও প্রতিপক্ষের মাটিতে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নজির আর নেই। দেশের ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচটি স্মরণে রাখার মতো করেই জয় করেছে বাংলাদেশের তারুণ্য উদ্দীপ্ত ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম দু' আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টস জিতে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ৫০ ওভারে ২৭৫ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় তখন একটা সংশয় বেশ জোরালোই ছিল। এত রান তাড়া করে জয়ের কোন নজির বাংলাদেশের রেকর্ড বুকে ছিল না। এর আগে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৫০ রান তাড়া করে জয়ের ঘটনাটিই ছিল বাংলাদেশের জন্য রেকর্ড। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবগঠিত দলের ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের নজির-গড়া জয়ে বাধা হতে পারেনি। সাবেক ও বর্তমান অধিনায়ক যদি ফর্মে থাকে তখন কঠিন লক্ষ্যও যে সহজ হয়ে যায় তার প্রমাণ মিললো ফের। সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল আর বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের টানা দু' অর্ধশতকে বাংলাদেশ ৬ বল বাকি থাকতেই টানা দ্বিতীয় জয় পায়। দেশ ও দেশের বাইরে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের এটি নবম ওয়ানডে সিরিজ জয়। আর দেশের বাইরে তৃতীয় সিরিজ জয়। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ের পর এটিই দ্বিতীয় কোন দেশের বিপক্ষে জয়। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয়টিতেও সংযমী ছিলেন আশরাফুল আর সাকিব ছিলেন তুলনামূলক আগ্রাসী। টেস্ট ম্যাচে ব্যর্থতার পর প্রথম ম্যাচে ৫৭ রান করার পর মঙ্গলবার ৬৪ রান করেন আশরাফুল। আরেকটু সংযমী হলে ১৮তম ফিফটিটিকে সেঞ্চুরিতেও পরিণত করতে পারতেন তিনি। কিন্তু লুইসের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন রিচার্ডস-এর হাতে। বাংলাদেশ দল যদি হেরে যেতো তবে সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পেতেন না তিনি। কারণ বাংলাদেশ দল তখনও ৮৫ রান দূরে যখন তিনি আউট হন। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম আশরাফুল পরপর দু' ম্যাচে ফিফটি পেলেন। ৭৭ বলের ইনিংসে আউট হওয়ার আগে মাত্র ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকালেও ব্যাটিংয়ে বেশ সাবলীল ছিলেন। একাদশ ওভারে ওপেনার তামিম স্বভাব বিরুদ্ধ (৪১ বলে ২৯, ৪৩) ইনিংস খেলে আউট হলে মাঠে নামেন আশরাফুল। দলের স্কোর ৪৬। এর ১৮ রান পর ৩৩ বলে ২৩ করে আউট হন জুনায়েদ। এরপর তৃতীয় উইকেটে আশরাফুল-রকিবুল ৭২ বলে ৫২ রান যোগ করেন। তখনও হাত খোলেননি সাবেক অধিনায়ক। ২৮তম ওভারে এসে বার্নার্ডের বলে প্রথম চার মারেন ৭০ বল খেলা আশরাফুল। রকিবুলের বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেটে আশরাফুল-সাকিব ৭৪ রান যোগ করে ক্যারিবীয়দের ম্যাচে ফেরার রাস্তা কঠিন করে দেন। বাউন্ডারি তেমন না এলেও ৭৪ রান ওঠে ৬৩ বলে। পিচ স্েলা হয়ে যাওয়ায় বলকে সীমানার বাইরে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। ২৩৮ রানের মাথায় সাকিব ৬১ বলে ৬৫ রান করেন। প্রথম ম্যাচে ৫৪ রান করা সাকিবের এটি ৬৪ ম্যাচে দ্বাদশ হাফ সেঞ্চুরি। এক-দু' রান করেই এগোন সাকিব। মাত্র ২টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকাতে পারেন তিনি। তারপরও স্ট্রাইক রেট ১০০ ভাগের বেশি রাখেন তিনি। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ৭১ রান। স্বাগতিকরা শেষ ১০ ওভারে তুলেছিল ৯৮ রান। উইকেটও বাংলাদেশের সমান ছিল। ওই সময় লুইসের বল হাঁকিয়ে আউট হতে যাচ্ছিলেন সাকিব। বল উঠে যায় লংঅফে। ক্যাচ ধরতে ছুটে আসেন বার্নার্ড ও সামি। দু'জনের সংঘর্ষে বলে পড়ে যায় মাটিতে। ৪৮ বলে যখন প্রয়োজন ৫৬ রান তখন পাওয়ার-প্ল্লে নেন সাকিব। কেমার রোচকে বল দেন রেইফার। আউট সাইডে ৫ ফিল্ডার রেখে রোচ হাফভলি বল দেন সাকিবকে। সুযোগটা হারাননি সাকিব। বল পাঠিয়ে দেন সীমানার বাইরে। পরেরটি আসে ফুলটস। সেটিও সীমানা পার করান সাকিব। পরের বলটি দেন কাঁধ সমান উঁচুতে। এবার আর গড়িয়ে নয়, উড়িয়ে সীমানার বাইরে (ছক্কা) পাঠান সাকিব। ওই বিমার দিয়ে বহিষ্কৃত হন রোচ। তার ওভারটি করেন উইকেটরক্ষক থমাস। ৪৪তম ওভারে সামির প্রথম বলেই রিচার্ডস-এর হাতে ধরা পড়েন আক্রমণাত্মক সাকিব। ৩৫ বলে দরকার তখন ৩৭ রান। টার্গেটটা সহজই ছিল। মুশফিক তখন বেশ ছন্দে। কিন্তু রিয়াদ ৫ বলে ৩ রান করে বিদায় নিলে শঙ্কা জাগে। ২৪ বলে দরকার ২৪। টমাসের করা ৪৬তম ওভারের শেষ বলে ৩০ বলে ৩১ রান করে মুশফিক আউট হলে ক্যারিবীয় শিবির খানিকটা চাঙ্গা হয়। কিন্তু ১৮ বলে ১৪ রানের পথকে আর কঠিন হতে দেননি স্পিনার রাজ্জাক। শেষ দিকে রোচের বিকল্প বোলার না থাকায় খেসারত দিতে হয় ক্যারিবীয়দের। ওই সময় হতাশায় খেই হারিয়ে ফেলেন তারা। রাজ্জাক ১০ বলে ১১ রান করলে ৬ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশ জয়ের লক্ষ্যে পেঁৗছে যায়। অনেকদিন পর বাংলাদেশ দলের শীর্ষ ৬ ব্যাটসম্যানই দু' অঙ্কের রান করেন। তবে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরাও মন্দ করেননি। তাদেরও ক্যাপ্টেন ছাড়া অন্যরা ভালই করেন। ডাওলিন টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও দারুণ খেলে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ব্যর্থ হয়ে যায় শতরানটি। ৮৮ বলে ৫০ করা এ ব্যাটসম্যান ১০০ রান করেন ১১৬ বলে। ৪০ ওভারে ১৭৫ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ১০ ওভারে ৯৮ রান তুলে বাংলাদেশ শিবিরে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। নাঈম ও সাকিব ছাড়া অন্য বোলাররা তেমন সমীহ আদায় করতে পারেননি। দু'টি রান আউট বোলারদের বোঝা খানিকটা লাঘব করে দেয়। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি সেন্ট কিটসে হবে আগামীকাল। ওই ম্যাচটি জিতলে শতভাগ জয় নিয়ে প্রথমবারের মতো দেশে ফিরতে পারবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment