July 4, 2009

মাইকেল জ্যাকসনের শেষ বিদায় অনুষ্ঠান 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়োজন, ১০ লাখ ভক্ত পপসম্রাটের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, ৭৫ কোটি মানুষের চোখ থাকবে টিভি'র পর্দায়, ১৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে আবৃত করা হয়েছে কফিন

গান গেয়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে নেয়া পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের শেষ বিদায় মঙ্গলবার। এ জন্য প্রস্তুত স্ট্যাপলস সেন্টার। কান্না চেপে রুদ্ধশ্বাস প্রতীৰা ভক্তদের। আর মাত্র তিনটি দিন পরই ভালবাসায়, আবেগে সিক্ত ১০ লাখ ভক্ত তাকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানাবেন। টেলিভিশনে সরাসরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেই বিদায় জানানোর আয়োজনে অংশ নেবে ৭৫ কোটি মানুষ। লস অ্যানজেলেসের স্ট্যাপলস সেন্টারে শ্রদ্ধা নিবেদনের এই পর্বকে 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' বা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা জানানোর শো নামে অভিহিত করা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামাকে। উপস্থিত থাকতে পারেন স্যার পল ম্যাককার্টনি, সংগীতশিল্পী ডায়ানা রস এবং চলচ্চিত্র জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি, মাইকেলের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এলিজাবেথ টেলর। এ খবর দিয়ে দ্য সান অনলাইন জানায়, মাইকেল জ্যাকসনের স্বপ্ন অনুযায়ী তার শেষ বিদায় অনুষ্ঠানকে 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' হিসেবে আয়োজন করা হচ্ছে। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার নেভারল্যান্ড র্যাঞ্চে বৃহস্পতিবার বা গতকাল শুক্রবার এ শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা মিডিয়ায় বলা হলেও বৃহস্পতিবার জ্যাকসন পরিবার সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, আগামী মঙ্গলবার স্ট্যাপলস সেন্টারে হবে এ অনুষ্ঠান। তবে তাকে কোথায় সমাহিত করা হবে তা জানা যায়নি। মৃতু্যর আগের দিন এই স্ট্যাপলস সেন্টারে লন্ডন কনসার্ট উপলক্ষে রিহার্সালে জীবনের শেষ গান গেয়েছিলেন মাইকেল। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সেদিন তিনি তরতাজা যুবকের মতো নেচেছেন, গেয়েছেন। স্ট্যাপলস সেন্টার স্টেডিয়ামে আসন সংখ্যা ২০ হাজার। ফলে বাড়তি ভক্তরা যেন শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান থেকে বাদ না পড়েন সেজন্য এর বাইরে স্থাপন করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক জায়ান্ট স্ক্রিন বা টেলিভিশনের বিশাল পর্দা। তবে মাইকেল জ্যাকসনের সবচেয়ে সফল অ্যালবাম 'থ্রিলার', 'অফ দ্য ওয়াল' এবং 'ব্যাড'-এর চিন্তা যার মস্তিষ্ক থেকে এসেছিল সেই কুইন্সি জোন্স এতে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মাইকেলের বিদায়ের এ অনুষ্ঠান আমি সইতে পারবো না বলে তা প্রত্যৰ করতে চাই না। জীবনে আর কোন বিদায় অনুষ্ঠানে যাবো না। বিশ্বাস করুন, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, ১৫ হাজার পাউন্ড মূল্যের ১৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে আবৃত কফিনে করে সমাহিত করা হবে মাইকেলকে। এর ভিতর দিকে ব্যবহার করা হয়েছে প্রমিথিয়ান নামে ব্রঞ্জ। বেটসভিল ক্যাসকেট কোম্পানিতে অর্ডার দিয়ে বানানো হয়েছে এ কফিন। এর অভ্যন্তরে আছে নীল ভেলভেট কাপড়ের স্তর। দক্ষ হাতে তা পলিশ করা। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কিংবদন্তির আরেক সংগীতশিল্পী জেমস ব্রাউনকে একই রকম কফিনে করে সমাহিত করা হয়েছিল। এ শিল্পীকে সমাহিত করতে যেয়ে মাইকেল তার মাথায় চুমু খেয়েছিলেন। ওদিকে স্ট্যাপলস সেন্টারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়া ভক্তদের কাছ থেকে এর মালিক লন্ডনের এইজি লাইভ জনপ্রতি ১৫ পাউন্ড আদায় করতে পারে বলে আলোচনা চলছে। তবে এ খবরে ভক্তরা ভীষণ হতাশ। জ্যাকসন পরিবার এ আয়োজনে ভক্তদের কাছ থেকে কোন অর্থ না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ওদিকে স্ট্যাপলস সেন্টার স্টেডিয়ামে বার্নাম এন্ড বেইলি সার্কাসের শো শুরু হবার কথা। মাইকেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়টা তাদেরকে ছাড় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মাইকেল পরিবার। জবাবে সার্কাস সংশ্লিষ্ট একজন বলেছেন, হঁ্যা এটাতো ব্যতিক্রমী আয়োজন। আমি নিশ্চিত, মাইকেল শেষ বিদায়কালে বাঘ আর পশু পাখিদের দেখে হাসবেন। তিনি ভীষণ খুশি হবেন। কারণ পশুপাখি তার খুব প্রিয়। মাইকেল জ্যাকসন তার শেষ বিদায় নিয়ে খুব কম কথাই বলতেন। ২০০২ সালে তিনি একবার বলেছিলেন, আমার শেষ বিদায় হবে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। আমি এমনটাই চাই। আমি চাই সে অনুষ্ঠানে থাকবে আতশবাজি, থাকবে আরও সব আয়োজন। এ প্রসঙ্গে জ্যাকসন পরিবারের মুখপাত্র ব্রায়ান অক্সম্যান বলেছেন, তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে এ আয়োজন হবে বিশাল, অকল্পনীয়। আয়োজন শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়। চলবে দু' ঘণ্টা। ১৯৭৭ সালে মেমফিসের রাস্তায় মাইকেলের প্রথম শ্বশুর এলভিস প্রিসলির শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ৭৫ হাজার মানুষ। মাইকেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেয়া ভক্তদের সংখ্যা ওই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। বৃটেনের হাইড পার্কে প্রিন্সেস ডায়ানাকে ১২ বছর আগে দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। সে হিসাবে মাইকেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রেকর্ডসংখ্যক মানুষ। ওদিকে লন্ডনে এইজি লাইভ আয়োজিত কনসার্ট উপলক্ষে মারা যাওয়ার আগের দিনও স্ট্যাপলস সেন্টারে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রিহার্সাল করেছেন মাইকেল। ১৯৯৫ সালে 'দে ডোন্ট কেয়ার এবাউট আস' গানে তিনি যে পারফর্ম করেছিলেন একই রকম প্রাণশক্তি ছিল তাতে। ওই রিহার্সালের ভিডিও ধারণ করা ছবিতে তাকে দেখায় অত্যন্ত সতেজ, সজীব। তবে তিনি সচরাচর যেরকম নাচেন তার থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল এতে। তিনি ছিলেন পুরো ফিট। সেখানে গান শেষ হতেই গাড়ির হর্নের শব্দ শোনা যায় এবং মাইকেল বলে ওঠেন- হোল্ড ফর এপ্লাউস। অর্থাৎ তোমরা হর্ষধ্বনি কর।


ওদিকে মাইকেলকে কোথায় সমাধিস্থ করা হবে পরিবার সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পেঁৗছতে না পারলেও তার বড়ভাই মাইকেল জার্মেইন তাকে নেভারল্যান্ড র্যাঞ্চে সমাহিত করার পক্ষে। সেখানে আছে মাইকেলের পোষা জিরাফ, বাঘ আর ব্যক্তিগত বিস্ময়কর এক পার্ক। এগুলো মাইকেলের সৃষ্টি। তাই নিজের সৃষ্টির মাঝেই মাইকেলকে চিরবিদায় দিতে চান তিনি। ওদিকে লস অ্যানজেলেসের পাহাড়ঘেরা ১০০ নর্থ ক্যারলউড ড্রাইভ নামের বাড়িতে গত ২৫শে জুন মারা যান মাইকেল জ্যাকসন। এ বাড়িটির মালিক হুবার্ট গুয়েজ নামের এক ব্যক্তি। ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে মাইকেল তাকে দিতেন এক লাখ ডলার। নেভারল্যান্ড খামারবাড়িতে থাকাকালে একটি শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে মাইকেল এ বাড়িতে ছিলেন। ফলে এ বাড়িটির সঙ্গে মাইকেল জ্যাকসনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এ জন্য বাড়িটি কিনে তা মাইকেলের স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করতে চান ফরাসি ফ্যাশন মোগল বলে পরিচিত ক্রিশ্চিয়ান অডিগিয়ার। মাইকেল জ্যাকসনের পোশাকের ডিজাইনারও তিনি।


ওবামার শ্রদ্ধা

মারা যাওয়ার এক সপ্তাহেরও বেশি পরে পপসংগীতের সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা। মাইকেল মারা যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববাসীর কাছে আদর্শ হয়ে ওঠা এ শিল্পীর প্রতি শেষ পর্যন্ত তিনি শ্রদ্ধা জানালেন। বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, বারাক ওবামা বলেছেন, আমাদের এ যুগের সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে তিনি ইতিহাসে ঠাঁই পাবেন। তার গান শুনে শুনে আমি বড় হয়েছি।


ডেবি রাউ কি পিছু হঠবেন

মাইকেল জ্যাকসনের সহায় সম্পত্তি ও সন্তানদের নিয়ে জটিলতা শেষ হয়নি। তিনি মারা যাওয়ার পরপর আদালতের রায়ে তিন সন্তান প্রিন্স (১২), প্যারিস (১১) এবং দ্বিতীয় প্রিন্স (৬) রয়েছে দাদি ক্যাথেরিন জ্যাকসনের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু তা চূড়ান্ত সমাধান নয়। প্রিন্স এবং প্যারিস জন্মেছে মাইকেলের দ্বিতীয় স্ত্রী ডেবি রাউয়ের গর্ভে। ফলে তিনি এখন সন্তানের দাবি তুলেছেন। সে দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে আবেদন দাখিল করেছেন ক্যাথেরিন। এ বিষয়ে এখনও ডেবি করণীয় ঠিক করেননি বলে বৃহস্পতিবার তার আইনজীবী এরিক জর্জ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইকেলের সঙ্গে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকাকালে ডেবির গর্ভে প্রথম দু'সন্তানের জন্ম হয়। তারপর থেকে সন্তানদের সঙ্গে ডেবির কোন যোগাযোগ ছিল না। ফলে এখনও মাতৃত্বের দাবি নিয়ে তিনি সন্তানদের দেখে আসতে পারেন। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলে তিনি সে সুযোগও হারাবেন। এমনটি মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার আইনের প্রফেসর স্কট অল্টম্যান। এ বিষয়ে সোমবার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ১৩ই জুলাই শুনানি হবে। ওদিকে ২০০২ সালে লস অ্যানজেলেস সুপেরিয়র কোর্টে মাইকেল যে উইল করে গেছেন তাতে নাম নেই ডেবি রাউ বা মাইকেলের পিতা জোসেফ জ্যাকসনের। সেখানে মা ক্যাথেরিনকে অভিভাবক ঘোষণা করেছেন মাইকেল।


জ্যাকসন পরিবার অর্থ খুঁজতে ব্যস্ত বলেছেন গ্রেস ররামবা

মাইকেল জ্যাকসন ও তার তিন সন্তানের দেখাশোনা করতেন উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী গ্রেস ররামবা (৪২)। মারা যাওয়ার মাত্র দু'মাস আগে মাইকেল তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। মাইকেল মারা যাওয়ার পর তিনি মাইকেলের জীবনের অজানা অধ্যায়, তার পরিবারের সদস্যদের আচরণ সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তবে বরখাস্ত হওয়ার কারণে প্রতিশোধ নিতে তিনি এসব কথা বানিয়ে বলেছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। গ্রেস বলেছেন, মারা যাওয়ার পরপরই পরিবারের সদস্যরা মাইকেলের রেখে যাওয়া অর্থের খোঁজে ছিলেন সবচেয়ে ব্যস্ত। তারা তার ব্যাগ, কার্পেটের নিচে তন্ন তন্ন করে অর্থ খুঁজতে থাকেন। অবসরে লন্ডন এসেছিলেন গ্রেস। এরই মধ্যে মাইকেল মারা যান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ওই সময় একের পর এক ফোন যায় তার কাছে। আত্মীয়রা জানতে চান মাইকেল কোথায় কোথায় অর্থ রাখে। গ্রেস ররামবা জ্যাকসন-ফাইভ-এর সেক্রেটারি ছিলেন ১৭ বছর এবং মাইকেলের সন্তানদের দেখাশোনা করেছেন ১২ বছর। তিনি বলেছেন, মাইকেলের তিন শিশুর প্রতিটিকে জন্মের পর থেকেই আমার হাতে মানুষ হয়েছে। সে হিসেবে তারা আমার সন্তান। তাদেরকে রেখে এলেই ফোন আসতো - তাদের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। তাদের ঘর অপরিষ্কার। মাইকেল ভাল নেই। অপরিষ্কার হয়ে গেছেন। শেভ করেন না। ঠিকমতো খাবার খান না। এসব কিছু আমি দেখাশোনা করতাম। গ্রেস আরও বলেছেন, মাইকেল বাচ্চাদের মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরুতে দিতেন না। কিন্তু বাচ্চারা তা পছন্দ করতো না। এ জন্য মাইকেল সব সময় রাগান্বিত থাকতো। বাচ্চাদের কোন শিক্ষক দেয়া হতো না। তারা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেতো না। ফলে তারা বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে জানতে পারতো না। মাইকেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দীপক চোপড়া বলেছেন, মাইকেলের সন্তানরা গ্রেসকে খুব পছন্দ করতো। তারা তাকে মাম বলে ডাকতো। এই গ্রেসের কাছেই মাইকেল তার জীবনের সব সত্য কথা বলেছেন।

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor