এনএসআই'র সাবেক দুই প্রধান গ্রেফতার
চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক দুই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম সিআইডি পুলিশের টিম সাবেক দুই সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে রাত ১টা ৩৫ মিনিটে সিআইডি টিম ৩টি গাড়ি নিয়ে রেজ্জাকুল হায়দারের বারিধারার ডিওএইচএসের বাসায় যায়। সিআইডি কর্মকর্তারা রেজ্জাকুল হায়দারকে তাদের সঙ্গে যেতে বললে তিনি তাদের কাছে ওয়ারেন্ট দেখতে চান। এ সময় সিআইডি পুলিশ তাকে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারের কথা জানায়। সূত্র জানায়, এ সময় রেজ্জাকুল হায়দার নামাজ পড়ার জন্য সময় চান। কিছু সময় নিয়ে তিনি প্রস্তুত হন। পরে তার মোবাইল ফোন ও পাসপোর্ট চায় পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের সঙ্গে মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্টও জব্দ করা হয়।
একইভাবে সিআইডির আরেকটি দল আবদুর রহিমের ধানমণ্ডির ১৫/এ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাটে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, সকাল হওয়ার আগেই দু'জনকে সিআইডি সদর দফতরে আনা হয়। সিআইডির পক্ষ থেকে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে সকালেই রেজ্জাকুল হায়দারের বাসা থেকে ফোন করে সাংবাদিক এবং বিভিন্ন মহলে গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, শুক্রবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যােিজস্ট্রট আবু হান্নানের আদালতে এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবুদ্দিন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের পরপর সিআইডির একটি বিশেষ টিম রাতে ঢাকায় রওনা হয়। মামলার আইও মনিরুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই টিম ডিএমপি পুলিশের সহায়তায় এনএসআইয়ের দুই সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর শনিবার বিকালে তাদের নিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে সিআইডির ওই টিম চট্টগ্রাম রওনা দেয় এবং রাতেই তারা চট্টগ্রাম পেঁৗছে। আজ রোববার সকালে তাদের সিএমএম আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি সূত্র।
সূত্র জানিয়েছে, অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন আসামির জবানবন্দিতে এই দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম আসে। দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি, খালাস অস্ত্র আটক হওয়ার পর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা ধামাচাপা দিতেও তাদের নানা তৎপরতার কথা উঠে আসে। সিআইডি সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে এতদিন তাদের গ্রেফতার করেনি। সর্বশেষ স্বয়ং এনএসআই পরিচালক উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম আদালতে ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করায় সিআইডি তাদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয়। টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে সাহাবুদ্দিন তাদের নাম বলার পর থেকে সিআইডি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক দুই ডিজি রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিমের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। অবশ্য এর আগেই সিআইডি এই দুই কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩০ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদানের জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিলেছে
এনএসআই পরিচালক সাহাবুদ্দিনের প্রদত্ত ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের মধ্যদিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি ও খালাসের ব্যাপারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। যা এতদিন অজানা ছিল। কিংবা কোন কোন প্রশ্নের উত্তর মিললেও এর সত্যতা নিয়ে ছিল সন্দেহ-সংশয়। দশ ট্রাক অস্ত্রের উৎস কোথায় বা কোন দেশে থেকে এসেছিল, এ অস্ত্র চালান আমদানি ও খালাসের হোতা কে বা কারা এবং অস্ত্রগুলো কোথায় যাওয়ার কথা ছিল_ মূলত এ তিনটি প্রধান প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে ফিরছিল তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। সাহাবুদ্দিনের জবানবন্দি প্রদানের মধ্যদিয়ে এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর এখন পরিষ্কার। সিআইডির সামনে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা তদন্তের পথ এখন আর পঙ্কিল নয়।
সাহাবুদ্দিন ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বলেছেন, চীন থেকেই এই অস্ত্র আমদানি করা হয়েছে। এই অস্ত্র যাওয়ার কথা ছিল ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) কাছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পরিচালকের নির্দেশেই তিনি উলফাকে সাহায্যের জন্যই অস্ত্র পরিবহনে ট্রাক ভাড়া করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারি আদেশ-নির্দেশ পালন করতে তিনি বাধ্য। এর আগে হোটেল শেরাটনে উলফা নেতাদের সঙ্গে দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান। তৎকালীন এনএসআই প্রধান ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ অন্তত ২০ জনের নাম বলেছেন ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে। সাহাবুদ্দিন দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানির সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত থাকার কথা শুনেছেন বলে জানান আদালতকে। চট্টগ্রামে অস্ত্র খালাসের দিন অর্থাৎ ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল রাতে অস্ত্র খালাস কাজ নির্বিঘ্ন করতেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব নুরুল আমিনকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয় এবং ওই রাতে নুরুল আমিন কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সিইউএফএলের রেস্ট হাউসে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে সিআইডি সূত্র বলেছে, সাহাবুদ্দিনের জবানবন্দি তারা যাচাই-বাছাই করছেন। তার সব কথা যে সত্য তাও তারা ধরে নিতে পারছেন না। কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টিও তারা খতিয়ে দেখবেন। সাহাবুদ্দিন অত্যন্ত চতুর লোক হওয়ায় তিনি যতটুক সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে জানান সিআইডি সূত্র। দশ ট্রাক অস্ত্র পরিবহনের জন্য ট্রাক ভাড়া করা, উলফা নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করাসহ পুরো বিষয়টি তিনি মনিটরিং করলেও নিজেকে বাঁচাতে সাহাবুদ্দিন অস্ত্র খালাসের দিন চিকিৎসার নামে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। রিমান্ডের জন্য দ্বিতীয় দফায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত করা হলে সাহাবুদ্দিন জোর গলায় বলেন, ঘটনার দিন তিনি ছিলেন সিএমএইচে। তার পক্ষে কিভাবে দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি বা খালাসের সঙ্গে জড়িত থাকা সম্ভব। প্রথম দফা তিন দিনের রিমান্ডে সাহাবুদ্দিন কোন কিছুই স্বীকার না করে নিজেকে নিরপরাধ বললেও টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি ও খালাস রহস্য উন্মোচন করে দেন। সর্বশেষ শুক্রবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু হান্নানের আদালতে ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে সব কিছুই অকপটে স্বীকার করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, দশ ট্রাক অস্ত্র চালানের উৎস, গন্তব্য এবং হোতাদের নাম বের হয়ে আসার পর এবার সিআইডি এ অস্ত্র চালান আমদানির জন্য অর্থ জোগানদাতা দেশ বা ব্যক্তি, কোন জাহাজে করে অস্ত্র চালানটি চট্টগ্রাম এসেছিল সে বিষয়টি তদন্ত করবে। এনএসআইয়ের সাবেক দুই প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্যও বের হয়ে আসবে বলে সিআইডির বিশ্বাস। এর আগে দু'দফায় এ মামলার চার্জশিট প্রদান করা হলেও দশ ট্রাক অস্ত্রের উৎস ও গন্তব্য যেমন অনাবিষ্কৃত রাখা হয় তেমনি অস্ত্র চালান আমদানির হোতাদের চিহ্নিত না করেই বেশিরভাগ নিরীহ লোকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। যে কারণে আদালত তৃতীয় দফা এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ প্রদানকালে দশ ট্রাক অস্ত্রের উৎস, গন্তব্য আবিষ্কার, মূল হোতাদের চিহ্নিত করাসহ ১৫ পয়েন্টের ওপর গুরুত্ব প্রদানের কথা বলেন। সে অনুযায়ী বর্তমানে তদন্তকাজ চলছে। সর্বশেষ মহানগর দায়রা জজ ভবানী প্রসাদ সিংহ দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা তদন্তে সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও দুই মাস দশ দিন সময় প্রদান করেছেন। আগামী ২২ জুলাইয়ের মধ্যে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি।
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল রাতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সিইউএফএলের সংরক্ষিত জেটি ঘাট থেকে হাজার কোটি টাকা মূল্যের দশ ট্রাক অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র আটক করা হয়। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি চোরাচালান মামলা এবং অস্ত্র আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় যথাক্রমে ৪৩ ও ৪৫ জনকে আসামি করে দু'দফায় চার্জশিট প্রদান করা হয়। ২০০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ দু'টি মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ মাঝপথে বন্ধ করে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবেই বর্তমান আইও সিআইডি চট্টগ্রাম জোনের এএসপি মনিরুজ্জামান চৌধুরী পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান।
একইভাবে সিআইডির আরেকটি দল আবদুর রহিমের ধানমণ্ডির ১৫/এ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাটে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, সকাল হওয়ার আগেই দু'জনকে সিআইডি সদর দফতরে আনা হয়। সিআইডির পক্ষ থেকে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে সকালেই রেজ্জাকুল হায়দারের বাসা থেকে ফোন করে সাংবাদিক এবং বিভিন্ন মহলে গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, শুক্রবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যােিজস্ট্রট আবু হান্নানের আদালতে এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবুদ্দিন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের পরপর সিআইডির একটি বিশেষ টিম রাতে ঢাকায় রওনা হয়। মামলার আইও মনিরুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই টিম ডিএমপি পুলিশের সহায়তায় এনএসআইয়ের দুই সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর শনিবার বিকালে তাদের নিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে সিআইডির ওই টিম চট্টগ্রাম রওনা দেয় এবং রাতেই তারা চট্টগ্রাম পেঁৗছে। আজ রোববার সকালে তাদের সিএমএম আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি সূত্র।
সূত্র জানিয়েছে, অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন আসামির জবানবন্দিতে এই দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম আসে। দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি, খালাস অস্ত্র আটক হওয়ার পর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা ধামাচাপা দিতেও তাদের নানা তৎপরতার কথা উঠে আসে। সিআইডি সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে এতদিন তাদের গ্রেফতার করেনি। সর্বশেষ স্বয়ং এনএসআই পরিচালক উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম আদালতে ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করায় সিআইডি তাদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয়। টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে সাহাবুদ্দিন তাদের নাম বলার পর থেকে সিআইডি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক দুই ডিজি রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিমের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। অবশ্য এর আগেই সিআইডি এই দুই কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩০ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদানের জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিলেছে
এনএসআই পরিচালক সাহাবুদ্দিনের প্রদত্ত ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের মধ্যদিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি ও খালাসের ব্যাপারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। যা এতদিন অজানা ছিল। কিংবা কোন কোন প্রশ্নের উত্তর মিললেও এর সত্যতা নিয়ে ছিল সন্দেহ-সংশয়। দশ ট্রাক অস্ত্রের উৎস কোথায় বা কোন দেশে থেকে এসেছিল, এ অস্ত্র চালান আমদানি ও খালাসের হোতা কে বা কারা এবং অস্ত্রগুলো কোথায় যাওয়ার কথা ছিল_ মূলত এ তিনটি প্রধান প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে ফিরছিল তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। সাহাবুদ্দিনের জবানবন্দি প্রদানের মধ্যদিয়ে এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর এখন পরিষ্কার। সিআইডির সামনে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা তদন্তের পথ এখন আর পঙ্কিল নয়।
সাহাবুদ্দিন ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বলেছেন, চীন থেকেই এই অস্ত্র আমদানি করা হয়েছে। এই অস্ত্র যাওয়ার কথা ছিল ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) কাছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পরিচালকের নির্দেশেই তিনি উলফাকে সাহায্যের জন্যই অস্ত্র পরিবহনে ট্রাক ভাড়া করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারি আদেশ-নির্দেশ পালন করতে তিনি বাধ্য। এর আগে হোটেল শেরাটনে উলফা নেতাদের সঙ্গে দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান। তৎকালীন এনএসআই প্রধান ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ অন্তত ২০ জনের নাম বলেছেন ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে। সাহাবুদ্দিন দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানির সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত থাকার কথা শুনেছেন বলে জানান আদালতকে। চট্টগ্রামে অস্ত্র খালাসের দিন অর্থাৎ ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল রাতে অস্ত্র খালাস কাজ নির্বিঘ্ন করতেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব নুরুল আমিনকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয় এবং ওই রাতে নুরুল আমিন কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সিইউএফএলের রেস্ট হাউসে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে সিআইডি সূত্র বলেছে, সাহাবুদ্দিনের জবানবন্দি তারা যাচাই-বাছাই করছেন। তার সব কথা যে সত্য তাও তারা ধরে নিতে পারছেন না। কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টিও তারা খতিয়ে দেখবেন। সাহাবুদ্দিন অত্যন্ত চতুর লোক হওয়ায় তিনি যতটুক সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে জানান সিআইডি সূত্র। দশ ট্রাক অস্ত্র পরিবহনের জন্য ট্রাক ভাড়া করা, উলফা নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করাসহ পুরো বিষয়টি তিনি মনিটরিং করলেও নিজেকে বাঁচাতে সাহাবুদ্দিন অস্ত্র খালাসের দিন চিকিৎসার নামে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। রিমান্ডের জন্য দ্বিতীয় দফায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত করা হলে সাহাবুদ্দিন জোর গলায় বলেন, ঘটনার দিন তিনি ছিলেন সিএমএইচে। তার পক্ষে কিভাবে দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি বা খালাসের সঙ্গে জড়িত থাকা সম্ভব। প্রথম দফা তিন দিনের রিমান্ডে সাহাবুদ্দিন কোন কিছুই স্বীকার না করে নিজেকে নিরপরাধ বললেও টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দশ ট্রাক অস্ত্র চালান আমদানি ও খালাস রহস্য উন্মোচন করে দেন। সর্বশেষ শুক্রবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু হান্নানের আদালতে ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে সব কিছুই অকপটে স্বীকার করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, দশ ট্রাক অস্ত্র চালানের উৎস, গন্তব্য এবং হোতাদের নাম বের হয়ে আসার পর এবার সিআইডি এ অস্ত্র চালান আমদানির জন্য অর্থ জোগানদাতা দেশ বা ব্যক্তি, কোন জাহাজে করে অস্ত্র চালানটি চট্টগ্রাম এসেছিল সে বিষয়টি তদন্ত করবে। এনএসআইয়ের সাবেক দুই প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্যও বের হয়ে আসবে বলে সিআইডির বিশ্বাস। এর আগে দু'দফায় এ মামলার চার্জশিট প্রদান করা হলেও দশ ট্রাক অস্ত্রের উৎস ও গন্তব্য যেমন অনাবিষ্কৃত রাখা হয় তেমনি অস্ত্র চালান আমদানির হোতাদের চিহ্নিত না করেই বেশিরভাগ নিরীহ লোকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। যে কারণে আদালত তৃতীয় দফা এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ প্রদানকালে দশ ট্রাক অস্ত্রের উৎস, গন্তব্য আবিষ্কার, মূল হোতাদের চিহ্নিত করাসহ ১৫ পয়েন্টের ওপর গুরুত্ব প্রদানের কথা বলেন। সে অনুযায়ী বর্তমানে তদন্তকাজ চলছে। সর্বশেষ মহানগর দায়রা জজ ভবানী প্রসাদ সিংহ দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা তদন্তে সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও দুই মাস দশ দিন সময় প্রদান করেছেন। আগামী ২২ জুলাইয়ের মধ্যে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি।
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল রাতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে সিইউএফএলের সংরক্ষিত জেটি ঘাট থেকে হাজার কোটি টাকা মূল্যের দশ ট্রাক অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র আটক করা হয়। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি চোরাচালান মামলা এবং অস্ত্র আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় যথাক্রমে ৪৩ ও ৪৫ জনকে আসামি করে দু'দফায় চার্জশিট প্রদান করা হয়। ২০০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ দু'টি মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ মাঝপথে বন্ধ করে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবেই বর্তমান আইও সিআইডি চট্টগ্রাম জোনের এএসপি মনিরুজ্জামান চৌধুরী পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান।
No comments:
Post a Comment