ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় পুলিশ কমিশনারসহ আহত ১০
বরিশালে হার্ট ফাউন্ডেশনের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পুলিশের এক সহকারী কমিশনারকে মারধরসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। শনিবার বেলা ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ এবং সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়। ফাউন্ডেশনের পুরনো কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি দলীয় সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাদের কমিটিকে বৈধ বলে দাবি করলেও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া প্রতিহত করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন একটি কমিটিও ঘোষণা করেছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে শুরু হয় হার্ট ফাউন্ডেশনের ৪র্থ দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা। সভায় পুরনো কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি দলীয় সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার, সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক সামসুদ্দিন আহম্মেদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম রাজনসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজনকে বাদ রেখে আগের কমিটিই ঘোষণা হতে যাচ্ছে খবরে সেখানে হাজির হয় মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে সভা মুলতবি করার ঘোষণা দেন কোতোয়ালি মডেল থানার এসি হায়াতুল ইসলাম। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার হায়াতুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে সভাস্থলে উপস্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কমর্ীরা। তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে অন্য পুলিশ সদস্যদের ওপরও চড়াও হয় তারা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিরাপদে ওই স্থান ত্যাগ করেন সাংসদ সরোয়ারসহ বিএনপি নেতারা। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকমর্ীর হাতে রক্তাক্ত জখম হন ফাউন্ডেশনের পুরনো কমিটির সদস্য সচিব সামসুদ্দিন আহম্মেদ। ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরও করে তারা। হামলা-ভাংচুরের ছবি তোলার সময় মারধরে আহত করা হয় বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের বার্তা ও সত্য সংবাদ পত্রিকার দুই ফটো সাংবাদিক এম জহির এবং মোফাজ্জেলকে। এদের মধ্যে এম জহিরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদশর্ীরা জানান, বিএনপি নেতারা ওই স্থান ত্যাগ করার পর সরকারি কেঁৗসুলি অ্যাডভোকেট কেবিএস আহম্মদ কবির পুরনো কমিটি ভেঙে দিয়ে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরনকে আহ্বায়ক এবং নিজেকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে আলাপকালে পুরনো কমিটির আহ্বায়ক সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সভা চলছিল। নতুন কমিটি গঠনের জন্য মাত্র একটি প্যানেল জমা পড়ে। আওয়ামী লীগ থেকে কোন কমিটি জমা দেয়া হয়নি। সভা চলার এক পর্যায়ে এসি হায়াতুল ইসলাম শান্তি-শৃংখলা ভঙ্গের আশংকা করে সভা মুলতবির ঘোষণা দিলে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। তিনি সদস্য সচিব সামসুদ্দিন আহম্মেদকে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এদিকে বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা কেবিএস আহম্মেদ কবির জানান, ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য আগে সংশোধনী দেয়া হলেও তা গ্রহণ না করে সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সভার কার্যক্রম পরিচালনা করায় কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য তার প্রতিবাদ জানায়। পরে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত ও পাস এবং মেয়র হিরনকে চেয়ারম্যান ও কেবিএস আহমেদ কবিরকে মহাসচিব করে ৪১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। সভায় উপস্থিত সব সদস্য ওই কমিটি অনুমোদন করেছেন। ঘটনার সময় ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে উপস্থিত মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরুল আহম্মেদ উজ্জ্বল বলেন, বিশৃংখল কোন ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকমর্ীরা জড়িত ছিল না। কোতোয়ালি মডেল থানার এসি হায়াতুল ইসলাম জানান, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সভা মুলতবি রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ঘটনার সময় পুলিশের কোন সদস্য লাঞ্ছিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।
No comments:
Post a Comment