শুক্রবার পল্টনের জনসভায় বিদু্যৎ-পানিসহ দেশের নানামুখী সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থতার জন্য বিএনপি'র নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকেই কার্যত দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বিদু্যতের জন্য। অথচ জোট সরকার ৫ বছরে বিদু্যতের কোন উন্নতি তো করেই নি বরং এই সেক্টর থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এর জবাব দেন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একই মঞ্চ থেকে শনিবার। বলেন, ৫ বছরে বিদু্যৎ সেক্টরে বাজেটই ছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো বিদু্যতের উন্নয়ন ও কর্মচারীদের বেতনসমেত খরচ হয়েছে। বাজেটই যেখানে ২০ হাজার কোটি টাকা ছিল না সেখানে এই টাকা লুট হলো কিভাবে? চ্যালেঞ্জ করছি সাহস থাকলে প্রমাণ করম্নন, প্রমাণ করতে হবে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টির জন্য জোট সরকার দায়ী_ এই মনত্দব্য করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর জবাবে বেগম জিয়া বলেন, কোথায় জঙ্গি? ওদের তো বিচার হয়েছে। এখন জঙ্গি জঙ্গি বলে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। আসলে জঙ্গির দোহাই দিয়ে বিদেশী সৈন্য আনার পাঁয়তারা চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিডিআর বিদ্রোহ থামাতে তার সরকার যে পদৰেপ নিয়েছে তা প্রশংসিত হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সমাধানে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যেতো। আওয়ামী লীগ সরকার বিচৰণতার সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। প্রতিটি পরিবারকে রৰা করেছে। বিরোধী দল এতে খুশি হয়নি। গৃহযুদ্ধ বাধলে তারা যেন খুশি হতো। এই মনত্দব্যের জবাব দেন বেগম জিয়া। বলেন, কিসের গৃহযুদ্ধ? সেনা অ্যাকশনে গেলে অনেক মেধাবী অফিসারের প্রাণ রৰা করা যেতো। হত্যাকারীদের আড়াল করার জন্য এখন রিপোর্ট প্রকাশে সময়ৰেপণ করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে ধ্বংস করতে চায়। যে সরকার তার নিজের দেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে চায় এটা আবার কেমন সরকার? শিল্প-কারখানা বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোট সরকারকে দায়ী করেন। তাদের শাসনকালে শিল্প-কারখানা ধ্বংস হয়েছে। জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদেরকে রায় দিয়েছে। আমরা সব সমস্যার সমাধান করবো। তবে এই সঙ্কট রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য সময়ের দরকার। বেগম জিয়া ৪ মাসের সরকারকে ব্যর্থ সরকার বলে উলেস্নখ করেন। বলেন, ওয়াদা পালন করম্নন, না হয় গদি ছাড়ুন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী কোন কাজ বিএনপি করেনি। বরং শ্রমিকদের কল্যাণে একাধিক পদৰেপ নেয়া হয়েছিল। লুটপাট আর আরাম-আয়েশে জোট সরকার ব্যসত্দ ছিল। এই অভিযোগের জবাব দেন বেগম জিয়া। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সত্য বলছেন না। তার ভাষায়, মিথ্যাতে বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে পেরে উঠবে না। অতীতেও পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। বিএনপি নেত্রী আওয়ামী লীগের প্রতি দলীয়করণ, ভোট কারচুপির মাধ্যমে ৰমতা দখল, দিনবদলের নামে দখলের রাজনীতির অভিযোগ আনেন।
পানি-বিদু্যৎ খাতে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে জোট সরকারকে: হাসিনা
দেশের অব্যাহত বিদু্যৎ, পানিসহ নানাবিধ সমস্যার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৭ বছরের শাসনকে দায়ী করেছেন। তাদের সৃষ্ট দুনর্ীতি, সন্ত্রাস, দলীয়করণ ও জঙ্গিবাদের দায় আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারের ঘাড়ে এসে চেপেছে বলেও উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব সমস্যার রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয় উলেস্নখ করে এ সমস্যার সমাধানে সময়ও চেয়েছেন তিনি। শুক্রবার মহান মে দিবস উপলৰে পল্টন ময়দানে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত শ্রমিক জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ শিল্প কল-কারখানা বন্ধে বিশ্বাস করে না উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা শিল্প-কারখানা বন্ধ করার জন্য জোট সরকারকে দায়ী করেন। শ্রমিকদের বন্ধ শিল্প-কারখানার অংশীদারিত্ব দেয়ার ব্যবস্থা করা তার সরকারের পরিকল্পনায় আছে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারকে দেয়া জনগণের ম্যান্ডেটের কথা উলেস্নখ করে বলেন, এর সমাধান করতেই হবে। সরকার গঠনের ৪ মাস পেরম্নতে না পেরম্নতেই একের পর এক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা দেশে এখনও অনেক ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর পল্টনে এটি ছিল শেখ হাসিনার প্রথম রাজনৈতিক উন্মুক্ত জনসমাবেশে যোগদান। ব্যাপক নিরাপত্তার বেড়াজালে তিনি মঞ্চে ৪০ মিনিট অবস্থান করেন। নিরাপত্তা কড়াকড়ির জন্য এমনকি সাংবাদিকরা তাদের নির্ধারিত আসনে যেতে পারেননি। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও মাত্র একজন প্রবীণ নেতা বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। ২৫ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী গত চার মাসে নির্বাচনী ইশতেহারে তার সরকারের অঙ্গীকার বাসত্দবায়নের চিত্রও তুলে ধরেন। তিনি চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা, সারের দাম অর্ধেক করা, কৃষিতে ভতর্ুকি, তেলের দাম কমানোর কথা উলেস্নখ করেন। কৃষককে বাঁচাতে সরকারিভাবে ১২ লাখ টন ধান কিনবে তার সরকার। এ সময় কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পায় তার জন্য নেয়া নানা ব্যবস্থার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার চার মাস মেয়াদের সরকার বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী এসব ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উলেস্নখ করেন। বিডিআর বিদ্রোহে সারাদেশে ১২টি সেক্টরে দেশ গৃহযুদ্ধের মুখে পড়েছিল। এ থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিচৰণতার সঙ্গে দেশকে রৰা করেছে ও প্রতিটি পরিবারকে রৰা করেছে বলে উলেস্নখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ৪৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে রৰা করার কথা জানিয়ে বলেন, ৫৭ জনকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। বিরোধী দল এতে খুশি হয়নি বলেও মনত্দব্য করেন তিনি। গৃহযুদ্ধ হলে, আরও লাশ পড়লেই যেন বিএনপি খুশি হতো বলেও উলেস্নখ করেন তিনি। বিএনপি'র হাত কৃষক শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ৰমতায় এলেই শ্রমিকরা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে। রমজান মাসেও বিএনপি ১৭ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে। কৃষক হত্যায়ও এদের হাত থেমে থাকেনি। ২১শে আগস্ট বিএনপি গ্রেনেড মেরেছে বলেও উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই শাসনামলে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকমর্ীকে হত্যা-নির্যাতন করে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আওয়ামী লীগ প্রতিশোধে বিশ্বাস করে না। শানত্দিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা করতে চায়। আমরা যে লৰ্য নিয়ে কাজ করছি_ এই বিদু্যতের সমস্যা এটা কাদের সৃষ্টি? প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেও বিদু্যতের উৎপাদন না বাড়ানোর জন্য দোষারোপ করেন। বলেন, লুটপাট করে বিদেশে পাচার করতে ও আরাম আয়েশেই তারা ব্যসত্দ ছিল। তাদের সৃষ্ট সমস্যা আমাদের ঘাড়ে এসেছে। তিনি দেশবাসীর প্রতি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। এ সমস্যার রাতারাতি সমাধান হবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি। তিনি সায়েদাবাদে আওয়ামী লীগ আমলে পানি পরিশোধন পস্ন্যান্ট করার কথা উলেস্নখ করে বলেন, তারা এটা শেষ করেনি। কারণ, তারা দুনর্ীতিতে ব্যসত্দ ছিল। তারা জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য আসেনি। শুধু আখের গোছাতে এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির জন্য দায়ী বলেও উলেস্নখ করেন। তার বক্তব্য ছিল, একদিকে তারা বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে অন্যদিকে দেশকে নিরাপত্তাহীন করেছে। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিএনপি সরকারের মন্ত্রী জড়িত বলে তদনত্দে বেরিয়ে এসেছে। বিরোধী দলের এসব অপকর্মের জবাব ২৯শে ডিসেম্বর নির্বাচনে জনগণ ভোটের মাধ্যমে দিয়েছে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি। জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর গুরম্নত্ব দেন তিনি। জনকল্যাণে সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা যে যার জায়গায় থেকে কাজ করবে বলেও তিনি জানান। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হলো_ ২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধনের জন্য ল' রিফর্ম কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৬০ সদস্যের শ্রমিক, মালিক ও সরকারের ত্রিপৰীয় পরামর্শ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের খাদ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। নূ্যনতম মজুরি, পর্যায়ক্রমে রেশনিং, বিদেশে কর্মসংস্থানের লৰ্যে শ্রমিকদের প্রশিৰণ, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সৃষ্টি, বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণসহ তার সরকারের নানামুখী উদ্যোগেরও ঘোষণা দেন তিনি। ওদিকে নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে পল্টন ময়দানে জনসমাবেশ উলেস্নখযোগ্য লোক সমাগম হয়। তবে পল্টনের বাইরে লোক ছিল কম। ছুটির দিনে অলস ভঙ্গিতে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। শ্রমিক লীগের সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টারের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কামরম্নল ইসলাম, শ্রমিক লীগ নেতা আবদুস সালাম খান, শাহজাহান খান এমপি, ফজলুল হক মন্টু, হাবিবুর রহমান আকন্দ, আমিনুল হক ফারম্নক, রওশন জাহান সাথী প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র। এই সময় সভামঞ্চে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকলেও তারা বক্তব্য রাখেননি।
ওয়াদা পূরণ করতে না পারলে গদি ছেড়ে দিন: খালেদা
বিদু্যৎখাতে বিএনপি'র বিরম্নদ্ধে দুনর্ীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে সরকারের প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণ করতে না পারলে সময় থাকতে গদি ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান। নয়তো জনগণেরই তাদের বিদায় দিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি। জরম্নরি সরকার বিএনপিকে ভাঙতে না পেরে তাকে দেশ ত্যাগ করাতে চেয়েছিল বলেও জানান তিনি। না পেরে তাকে কারারম্নদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ আমাকে দেশের বাইরে পাঠাতে চায়, আর কেউ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে চায়। আসলে দু'টোয় একই ষড়যন্ত্রের অংশ। মহান মে দিবস উপলৰে গতকাল পল্টন ময়দানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি'র বক্তব্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে এসব অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সামরিক বাহিনী চায় না উলেস্নখ করে বেগম খালেদা জিয়া রৰীবাহিনী গঠনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, তারা এক সময় সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি একটি বাহিনী গড়েছিল। এখনও সে ষড়যন্ত্রই চলছে। পিলখানার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে খালেদা জিয়া প্রশ্ন তোলেন, কোথায় গৃহযুদ্ধ? তার মতে, পিলখানায় বিদ্রোহের পরপরই সেনা অভিযানের সুযোগ দেয়া হলে অনেকে প্রাণ বেঁচে যেতেন। সারাদেশেই বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা আত্মসমর্পণ করতো ভয়ে। এৰেত্রে বিদেশী ষড়যন্ত্র অনুযায়ী কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীদের রৰা করতে তদনত্দ রিপোর্ট প্রকাশে বিলম্ব করা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী দেশের সামরিক বাহিনীকে রৰা করতে না পারলে জনগণও তার হাতে নিরাপদ নয়- এ দাবি বিএনপি চেয়ারপারসনের।
চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে যেখানে বিদু্যৎ খাতের বাজেটই ছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা সেখানে ২০ হাজার কোটি টাকা দুনর্ীতি কিভাবে হতে পারে- প্রশ্ন তোলেন তিনি। ওই সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনই দেয়া হয়েছে বলে জানান। ২০ হাজার কোটি টাকা কিভাবে দুনর্ীতি হলো- এ তথ্য প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। বেগম জিয়া জানান, বিএনপি'র সময়ে ১২৮০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে বিদু্যৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা ডাহা মিথ্যা। চড়াদামে বিদু্যৎ কিনে পিডিবিকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে। গতকালের বক্তব্যে খালেদা জিয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধে অনত্দত ২০ বার মিথ্যাচারের অভিযোগ করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মক্কা শরিফ থেকে দেশে ফিরেই মিথ্যাচার করছেন, মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন উলেস্নখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, জাতি তাকে আর বিশ্বাস করতে পারে না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুনর্ীতির শুরম্ন ও দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দাবি করেন তিনি। বলেন, টিআইবি'র রিপোর্ট অনুযায়ী আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে ২০০১ সালে যেখানে দুনর্ীতির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা, সেখান থেকে বিএনপি ৰমতা ছাড়ার সময় তা নামিয়ে এনেছে ৫২৬ কোটি টাকায়। টিআইবি'র রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি কোন কোন আমলে দুনর্ীতি হয়েছে তা বিচার করার ভার জনগণের ওপরেই ছেড়ে দেন। জরম্নরি সরকারের সময়ে ব্যাপক দুনর্ীতি হয়েছে অভিযোগ করে বেগম জিয়ার বক্তব্য হলো, বিএনপি'র সময়ে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল আর জরম্নরি সরকার তা ৫-এ নামিয়ে এনেছে। বিএনপি সরকারের সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্্বগতির অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য হলো, বিএনপি'র সময়ে জনগণ ১৬ টাকায় চাল খেতে পেরেছে। আর আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল জরম্নরি সরকার দুই বছর ৪০ টাকায় চাল খাইয়েছে। একইভাবে ৪৫-৬০ টাকার তেল ১২০ টাকা খাইয়েছেন। বিএনপি'র সময়ে কল-কারখানা বন্ধ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অস্বীকার করে খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যায় আমরা কখনও তাদের সঙ্গে পেরে উঠিনি, ভবিষ্যতেও পারবো না। বাসত্দবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সময়ে দেশের বেশির ভাগ পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতি পরিবারে একজনকে চাকরি দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। ওই সরকারের অর্থমন্ত্রী শূন্যপদে নতুন নিয়োগ না দেয়া ও ১০ ভাগ লোক ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভাল না রাখতে পারায় একের পর এক দেশ থেকে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি নয় আসলে এটি ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টির সরকার। সরকার চার মাসে বিদু্যৎ-গ্যাস-পানি-চাকরি-শানত্দি-নিরাপত্তা দিতে পারেনি। বর্তমান সরকারের চার মাসেই শুধু নারায়ণগঞ্জে ৪২ জন খুন ও ১৬ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। খালেদা জিয়া সরকারি দলের বিরম্নদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের কথা উলেস্নখ করে বলেন, তাদের সভা-সমাবেশের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে সমানে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বিরম্নদ্ধে বাকশাল প্রতিষ্ঠার অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা জরম্নরি সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়েছি। কারচুপির পরও নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছি। তবে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এখন বাকশালের স্বপ্ন দেখছে। তারা বিরোধী দল চায় না। খালেদা জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রতিদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিৰাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাদের মারামারির খবর প্রকাশিত হয়। তারা শিৰক ও ডাক্তারদের লাঞ্ছিত করছে। তাদের কারণে একের পর শিৰাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এখন বিরোধী দলই শুধু নয় সরকারি কর্মকর্তাদেরও নির্যাতন করা হচ্ছে। বেগম জিয়া প্রশ্ন তোলেন, এটাই কি বর্তমান সরকারের দিনবদল? তিনি দাবি করেন, বিএনপি শ্রমিকদের সঙ্গে ত্রিপৰীয় চুক্তি করেছে আর এর কৃতিত্ব নিতে চাইছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। দেশে কোন জঙ্গি নেই উলেস্নখ করে খালেদা জিয়ার সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, জঙ্গির ধুয়ো তুলে দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। জঙ্গি জঙ্গি করায় দেশে বিনিয়োগ কমছে। এখন দেশে টাস্কফোর্সের নামে বিদেশী সৈন্য ঢোকানোর ষড়যন্ত্র চলছে। তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা কোন অবস্থাতেই ছাড়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন খালেদা জিয়া।
No comments:
Post a Comment