April 8, 2009

ঢামেক-এ রাজীব হত্যাকাণ্ড

রিমান্ডে যা বলেছে ডা. কামরুল
ইন্দ্রজিৎ সরকার: আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে ডাক্তারদের হাতেই খুন হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আবুল কালাম আসাদ রাজীব। ঢামেক ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ডা. বিদু্যৎ বড়ুয়া এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। দু'দিনের রিমান্ডে পুলিশকে এ তথ্য দিয়েছেন ডা. কামরুল হাসান। তবে তিনি নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। ৩০শে মার্চ মধ্যরাতে ঢামেক-এর ডা. ফজলে রাব্বী হলে ছাত্রলীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষে রাজীব নিহত হন। এ ব্যাপারে লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় ভোলার ফরিদগঞ্জ থেকে ডা. কামরুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী বরকত আলী জানান, রিমান্ডে তাকে (ডা. কামরুল) ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরই তিনি জানেন না বলে এড়িয়ে গেছেন। তবে এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে ডা. বিদু্যৎ বড়ুয়াসহ আরও কয়েকজনের নাম তিনি বলেছেন। তদন্তের স্বার্থে তা এখন প্রকাশ করছে না পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ঢামেক ছাত্রলীগ দু'টি অংশে বিভক্ত। এর একটি অংশের নেতৃত্ব দেন জব্বার ও বনি, অপর অংশের নেতৃত্ব ছিলেন রাজীব। ১৯৯৮-৯৯ সালে ঢামেক সংসদের ভিপি ও প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতা ডা. বিদু্যৎ বড়ুয়ার ছত্রছায়ায় ৰমতাধর হয়ে উঠেছিল রাজীবের গ্রুপ। ডা. বিদু্যৎ ঢাকা মেডিকেলের কে-৫১ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। ২০০০ সালে তিনি এমবিবিএস পাস করেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত ঢামেক এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, হল দখল থেকে শুরু করে নানা অপরাধে তিনি নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি নেন। সেখানে অবস্থান করেও তিনি ঢাকা মেডিকেলে চাঁদাবাজি করতেন। ২০০৪ সালে ডা. বিদু্যতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন রাজীব। তার প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন। সূত্র জানায়, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেই জনস্বাস্থ্য বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য সুইডেন যান ডা. বিদু্যৎ। তবে রাজীবের সঙ্গে তার ফোনে যোগাযোগ হতো। সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে তিনি দেশে ফেরেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর ফের উড়াল দেন সুইডেন। সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর তিনি দেশে ফিরে ঢামেক-এর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেন। এতেই শুরু হয় বিরোধ। এতদিনের সাম্রাজ্য হাতছাড়া করতে রাজি হননি রাজীব। ফলে গুরু-শিষ্যের মধ্যে সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। হাতে গোনা ক'জন কমর্ী ছাড়া বাকিরা সবাই ভিড়ে যায় ডা. বিদু্যতের দলে। সূত্র জানায়, ৩০শে মার্চ রাতে ঘটনার আগে গ্রেপ্তারকৃত ডা. কামরুল ও ডা. বিদু্যৎসহ বেশ কয়েকজন ক্যান্টিনে বসে কথা বলেন এবং চা খান। এদিকে রাজীবের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছিল সবাই। ফজলে রাব্বী হলের ক্যান্টিন, লন্ড্রিসহ আশপাশের দোকান থেকেও তিনি বা তার দলের লোকজন চাঁদা নিতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কে-৬১ ব্যাচের কয়েকজন ছাত্র ক্যান্টিনে বসে র্যাগ ডে'র আয়োজনের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। এ সময় উপস্থিত রাজীব তাদের কথা দেন ও বলেন, তার দাবি করা চাঁদা না দিলে তিনি অনুষ্ঠান করতে দেবেন না। এ বিষয়ে আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে তার তুমুল তর্ক হয়। এছাড়া টেন্ডারের কমিশন নিয়েও ছাত্রলীগের দু'টি গ্রুপ মারমুখো অবস্থায় ছিল। চাঁনখারপুল এলাকায় ঢামেক-এর সমপ্রসারিত ভবন নির্মাণে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই কাজ পাইয়ে দিতে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপই কাজ করে। এখন অপর পক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করলে বিরোধ তীব্র হয়। প্রি-সার্ভিস এডুকেশনের জন্য বরাদ্দ সাত কোটি টাকার কাজের কমিশন ভাগাভাগি নিয়েও তৈরি হয় একই অবস্থার। এর পাশাপাশি হলে আসন বরাদ্দ দেয়ার নামে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় ছাত্রলীগের অনেক নেতাকমর্ী রাজীবের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর রাজীব সন্ধানীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি সন্ধানীর একটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন বলেও জানা যায়। এদিকে তিনি ঢামেক-এর আশপাশের এলাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। এ ঘটনার পর হলে তার এফ-১ কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু মানিব্যাগ, মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। গত বছরের ১০ই অক্টোবর রাজশাহীতে একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এক মাস কারাগারে ছিলেন রাজীব। লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান জানান, রাজীব হত্যা মামলার তদন্ত এগিয়ে চলেছে। রিমান্ডে ডা. কামরুল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এতে দোষীদের শনাক্ত করা সহজ হবে।

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor