অবশেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাস-ভবনের লিজ বাতিল করেছে সরকার। কবে এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে তা সেনানিবাস বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।
বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসভবনের বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধানত্দ নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়ার নামে সরকারিভাবে দুইটি বাড়ি লিজ দেয়া আছে। যা নিয়ম বহির্ভূত। এই অভিযোগ এনে লিজ বাতিল করা হয়েছে বলে সরকারের পৰ থেকে বলা হয়েছে। তথ্য অধিদফতরে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮২ সালে মন্ত্রিসভার সিদ্ধানত্দ অনুযায়ী মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বসবাসের জন্য গুলশানে তাদের পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী দেড় বিঘা আয়তনের একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। এরআগে ১৯৮১ সালে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেনানিবাসে মঈনুল রোডের ৯ বিঘা জায়গার উপর একটি বাড়ি ইজারা দেয়া হয়। এক ব্যক্তির নামে একাধিক বাড়ি ইজারা দেয়া প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। এজন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকা সেনানিবাসের মঈনুল রোডের বেগম খালেদা জিয়ার নামে ইজারা দেয়া বাড়িটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, এদেশে একজন একটার বেশি সরকারি বাড়ি লিজ পেতে পারে না। দুস্থ হিসাবে তাকে এই বাড়ি দেয়া হয়েছিল। তিনি এখন তা নন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনানিবাস এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, সেনানিবাসের ভেতরে অন্য কারো বাড়ি থাকলে সেটা সেনানিবাসের নিরাপত্তা ঠিক মতো রাখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কতদিনের মধ্যে এই বাড়ি বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সেনানিবাস বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
যেভাবে বাড়িটি খালেদা জিয়ার
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রতিরৰা মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের সময় প্রথম খালেদা জিয়ার নামে সরকারের পৰ থেকে একটি বাড়ি ইজারা দেয়ার প্রসত্দাব দেয়া হয়। কেবিনেট বৈঠকে এ নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা করা হয় ১৯৮১ সালের ১২ জুন। ঢাকার মেয়র ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে ১৬ কাঠার একটি বাড়ি তাকে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধানত্দ হয়। পরে ১৯ মার্চ গুলশানে একটি ১৬ কাঠার বাড়ি তার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বাড়িটি দখল নিতে গিয়ে আইনগত জটিলতা দেখা দেয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিরৰামন্ত্রী। ৮২'র ১৫ জুন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় গুলশানের ৩০ কাঠা ১১ ছটাকের অন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে জুলাই মাসে পূর্ত মন্ত্রণালয় বেগম খালেদা জিয়ার নামে গুলশান আবাসিক এলাকার নম্বর-এনই (ডি) ব্লক-৩/বি, সড়ক-১৯৬ প্লটটি লিখে দেয়। পাশাপাশি সরকার কৃষি ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার ডিপোজিট জমা দেয় বেগম জিয়ার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য।
এর আগে ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক টাকার বিনিময়ে বছরে এক টাকা খাজনায় সেনানিবাসের ৬ মইনুল হোসেন রোডের বাসাটি বরাদ্দ দেয়া হয়। মিলিটারি স্টেট ইউনিট খালেদা জিয়ার নামে এই বাড়িটি ১০০ বছরের জন্য লিজ দেয়। সময় শর্ত দেয়া হয় যে, বেগম খালেদা জিয়া এই বাড়িতে তার পরিবার নিয়ে শুধু বসবাস করতে পারবেন। কারো কাছে বিক্রি, বন্ধক রাখা বা এই বাড়ি জামানত রেখে কোন ঋণ নেয়া যাবে না।
খালেদা জিয়ার সম্পত্তি
সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া গুলশানে ১৬ কাঠা ও সেনানিবাসে ৯ বিঘা জমির উপর দুটি বাড়ি খালেদা জিয়ার নামে। নির্বাচন কমিশনে দেয়া খালেদা জিয়ার হিসাব অনুযায়ী গুলশানের বাড়ির দাম ১০০ টাকা। আর সেনানিবাসের বাড়ির দাম ৫ টাকা। এই বাড়িসহ নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হিসাব অনুযায়ী তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। তার বার্ষিক আয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। বাড়ি, এপার্টমেন্টসহ অন্যান্য ভাড়া থেকে ৫ লাখ ২৩ হাজার, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে পৌনে ৮ লাখ এবং অন্যান্য খাতে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। খালেদা জিয়ার মোট ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নগদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১২ হাজার ৩০০ টাকা মূল্যমানের অকৃষি জমি এবং ১০৫ টাকা মূল্যমানের (অর্জনকালীন সময়ের মূল্য) বাড়ি।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। এই জমিতে ফ্লাট বানিয়ে তিনি বিডিআর ঘটনায় মারা যাওয়া সেনা কর্মকর্তার পরিবারকে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ জানানোর এক সপ্তাহ পরেই মন্ত্রিপরিষদ খালেদা জিয়ার বাড়িটির ইজারা বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল। সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে জোর করতে হবে কেনো। তার উচিত নিজেরই ছেড়ে দেয়া। এতে জাতির কাছে তিনি আরও বেশি শ্রদ্ধা অর্জন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, ১৯৮১ সালের ১২ জুন, ১৯৮২ সালের ১৯ মার্চ এবং ১৯৮২ সালের ২৫ মে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও দুই পুত্রের জন্য ঢাকার গুলশান আবাসিক এলাকার বাড়ি নম্বর-এনই (ডি) ব্লক-৩/বি, সড়ক-১৯৬ প্লটটি ১০১ টাকা প্রতীকী মূল্যে এবং ৬, শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি ২দশমিক৭২ একর জমিসহ ১ টাকা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বার্ষিক ১ টাকা হারে খাজনা দেয়ার শর্তে বরাদ্দ করা হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বেঁচে থাকা তার দুই কন্যাকে রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। এমনকি ১৯৮১ সালের আগে দেশেও ফিরতে দেয়া হয়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও পরবর্তী চারদলীয় জোট সরকার তা বাতিল করে। পৰান্তরে জিয়াউর রহমানের মৃতু্যর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও দুই পুত্রকে রাষ্ট্রের পৰ থেকে ২টি বাড়ি, ড্রাইভারসহ ১টি গাড়ি, এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং ১৯৮৬ সালের জুন পর্যন্ত দুই পুত্রকে মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে শিৰাভাতা দেয়া হয়। ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা জিয়ার পরিবার এখনো ভোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মঈনুল হোসেন রোডের বাড়ি বা কোনো সম্পত্তি কোনো ব্যক্তিকে দেয়া যায় না। এ বাড়িকে জামানত হিসাবে রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ রেহানার নামে ধানমণ্ডিতে যে এক বিঘার বাড়ি রয়েছে তাও শহীদ পরিবারের নামে বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে শেখ রেহানার কোনো আপত্তি নেই। আমার সঙ্গে ওর কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে তিনিও আর কোনো বাড়ি বা জায়গা বরাদ্দ নেবেন না।
দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত হল
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেগম জিয়ার ৩৪ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ৬ নম্বর মঈনুল হোসেন রোডের আলোচিত বাড়িটির লিজ বরাদ্দ বাতিল হলেও আগে অনুরূপ উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বাড়িটির লিজ বাতিলের প্রথম উদ্যোগ নেয়। সরকারের মেয়াদের শেষ সময় বলে সেই উদ্যোগ চূড়ান্ত রূপ পায়নি। এবার মহাজোট সরকার শুরুতেই বরাদ্দ বাতিল করল। সেনানিবাস কর্তৃপৰ শীঘ্রই নোটিস জারির মাধ্যমে তা কার্যকর করবে।
বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসভবনের বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধানত্দ নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়ার নামে সরকারিভাবে দুইটি বাড়ি লিজ দেয়া আছে। যা নিয়ম বহির্ভূত। এই অভিযোগ এনে লিজ বাতিল করা হয়েছে বলে সরকারের পৰ থেকে বলা হয়েছে। তথ্য অধিদফতরে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮২ সালে মন্ত্রিসভার সিদ্ধানত্দ অনুযায়ী মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বসবাসের জন্য গুলশানে তাদের পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী দেড় বিঘা আয়তনের একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। এরআগে ১৯৮১ সালে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেনানিবাসে মঈনুল রোডের ৯ বিঘা জায়গার উপর একটি বাড়ি ইজারা দেয়া হয়। এক ব্যক্তির নামে একাধিক বাড়ি ইজারা দেয়া প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। এজন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকা সেনানিবাসের মঈনুল রোডের বেগম খালেদা জিয়ার নামে ইজারা দেয়া বাড়িটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, এদেশে একজন একটার বেশি সরকারি বাড়ি লিজ পেতে পারে না। দুস্থ হিসাবে তাকে এই বাড়ি দেয়া হয়েছিল। তিনি এখন তা নন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনানিবাস এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, সেনানিবাসের ভেতরে অন্য কারো বাড়ি থাকলে সেটা সেনানিবাসের নিরাপত্তা ঠিক মতো রাখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কতদিনের মধ্যে এই বাড়ি বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সেনানিবাস বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
যেভাবে বাড়িটি খালেদা জিয়ার
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রতিরৰা মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের সময় প্রথম খালেদা জিয়ার নামে সরকারের পৰ থেকে একটি বাড়ি ইজারা দেয়ার প্রসত্দাব দেয়া হয়। কেবিনেট বৈঠকে এ নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা করা হয় ১৯৮১ সালের ১২ জুন। ঢাকার মেয়র ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে ১৬ কাঠার একটি বাড়ি তাকে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধানত্দ হয়। পরে ১৯ মার্চ গুলশানে একটি ১৬ কাঠার বাড়ি তার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বাড়িটি দখল নিতে গিয়ে আইনগত জটিলতা দেখা দেয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিরৰামন্ত্রী। ৮২'র ১৫ জুন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় গুলশানের ৩০ কাঠা ১১ ছটাকের অন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে জুলাই মাসে পূর্ত মন্ত্রণালয় বেগম খালেদা জিয়ার নামে গুলশান আবাসিক এলাকার নম্বর-এনই (ডি) ব্লক-৩/বি, সড়ক-১৯৬ প্লটটি লিখে দেয়। পাশাপাশি সরকার কৃষি ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার ডিপোজিট জমা দেয় বেগম জিয়ার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য।
এর আগে ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক টাকার বিনিময়ে বছরে এক টাকা খাজনায় সেনানিবাসের ৬ মইনুল হোসেন রোডের বাসাটি বরাদ্দ দেয়া হয়। মিলিটারি স্টেট ইউনিট খালেদা জিয়ার নামে এই বাড়িটি ১০০ বছরের জন্য লিজ দেয়। সময় শর্ত দেয়া হয় যে, বেগম খালেদা জিয়া এই বাড়িতে তার পরিবার নিয়ে শুধু বসবাস করতে পারবেন। কারো কাছে বিক্রি, বন্ধক রাখা বা এই বাড়ি জামানত রেখে কোন ঋণ নেয়া যাবে না।
খালেদা জিয়ার সম্পত্তি
সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া গুলশানে ১৬ কাঠা ও সেনানিবাসে ৯ বিঘা জমির উপর দুটি বাড়ি খালেদা জিয়ার নামে। নির্বাচন কমিশনে দেয়া খালেদা জিয়ার হিসাব অনুযায়ী গুলশানের বাড়ির দাম ১০০ টাকা। আর সেনানিবাসের বাড়ির দাম ৫ টাকা। এই বাড়িসহ নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হিসাব অনুযায়ী তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। তার বার্ষিক আয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। বাড়ি, এপার্টমেন্টসহ অন্যান্য ভাড়া থেকে ৫ লাখ ২৩ হাজার, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে পৌনে ৮ লাখ এবং অন্যান্য খাতে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। খালেদা জিয়ার মোট ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নগদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১২ হাজার ৩০০ টাকা মূল্যমানের অকৃষি জমি এবং ১০৫ টাকা মূল্যমানের (অর্জনকালীন সময়ের মূল্য) বাড়ি।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। এই জমিতে ফ্লাট বানিয়ে তিনি বিডিআর ঘটনায় মারা যাওয়া সেনা কর্মকর্তার পরিবারকে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ জানানোর এক সপ্তাহ পরেই মন্ত্রিপরিষদ খালেদা জিয়ার বাড়িটির ইজারা বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল। সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে জোর করতে হবে কেনো। তার উচিত নিজেরই ছেড়ে দেয়া। এতে জাতির কাছে তিনি আরও বেশি শ্রদ্ধা অর্জন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, ১৯৮১ সালের ১২ জুন, ১৯৮২ সালের ১৯ মার্চ এবং ১৯৮২ সালের ২৫ মে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও দুই পুত্রের জন্য ঢাকার গুলশান আবাসিক এলাকার বাড়ি নম্বর-এনই (ডি) ব্লক-৩/বি, সড়ক-১৯৬ প্লটটি ১০১ টাকা প্রতীকী মূল্যে এবং ৬, শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি ২দশমিক৭২ একর জমিসহ ১ টাকা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বার্ষিক ১ টাকা হারে খাজনা দেয়ার শর্তে বরাদ্দ করা হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বেঁচে থাকা তার দুই কন্যাকে রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। এমনকি ১৯৮১ সালের আগে দেশেও ফিরতে দেয়া হয়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও পরবর্তী চারদলীয় জোট সরকার তা বাতিল করে। পৰান্তরে জিয়াউর রহমানের মৃতু্যর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও দুই পুত্রকে রাষ্ট্রের পৰ থেকে ২টি বাড়ি, ড্রাইভারসহ ১টি গাড়ি, এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং ১৯৮৬ সালের জুন পর্যন্ত দুই পুত্রকে মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে শিৰাভাতা দেয়া হয়। ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা জিয়ার পরিবার এখনো ভোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মঈনুল হোসেন রোডের বাড়ি বা কোনো সম্পত্তি কোনো ব্যক্তিকে দেয়া যায় না। এ বাড়িকে জামানত হিসাবে রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ রেহানার নামে ধানমণ্ডিতে যে এক বিঘার বাড়ি রয়েছে তাও শহীদ পরিবারের নামে বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে শেখ রেহানার কোনো আপত্তি নেই। আমার সঙ্গে ওর কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে তিনিও আর কোনো বাড়ি বা জায়গা বরাদ্দ নেবেন না।
দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত হল
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেগম জিয়ার ৩৪ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ৬ নম্বর মঈনুল হোসেন রোডের আলোচিত বাড়িটির লিজ বরাদ্দ বাতিল হলেও আগে অনুরূপ উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বাড়িটির লিজ বাতিলের প্রথম উদ্যোগ নেয়। সরকারের মেয়াদের শেষ সময় বলে সেই উদ্যোগ চূড়ান্ত রূপ পায়নি। এবার মহাজোট সরকার শুরুতেই বরাদ্দ বাতিল করল। সেনানিবাস কর্তৃপৰ শীঘ্রই নোটিস জারির মাধ্যমে তা কার্যকর করবে।
No comments:
Post a Comment