January 23, 2014

অন্তরালে মহানায়িকা


মহানায়িকা সুচিত্রা সেন গত শুক্রবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গেছেন। ৮২ বছর বয়সী কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী জীবনের শেষ দিনগুলো নীরবে-নিভৃতেই পার করেছেন। তাই তাকে নিভৃতবাসিনী হিসেবেও আখ্যা দেয়া যায়। সুচিত্রা সেন ছিলেন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের স্বপ্নরানী। মায়াবী মুখশ্রী, ভুবনমোহিনী হাসি, মনকাড়া নেত্রযুগল, অনিন্দ্যসুন্দর দেহাবয়ব ও অভিনয় ক্যারিশমার কারণে 'মহানায়িকা' খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ষাট থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ১৯৮৯ সাল থেকে জন-অন্তরালে চলে যান সুচিত্রা। সেই অন্তরাল থেকে চির-অন্তরালে চলে গেছেন জনগণমননন্দিতা এই চিত্রনায়িকা।

তার জন্ম বাংলাদেশের পাবনায়। করুণাময় দাশগুপ্ত ও ইন্দিরা দাশগুপ্তার মেজ মেয়ে রমা দাশগুপ্তা (সুচিত্রা সেন)। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল মায়ের কোল আলো করে জন্ম নেন এক পরমাসুন্দরী কন্যা। শিশুকন্যাটিকে আত্মীয়স্বজনরা আদর করে কৃষ্ণা নামে ডাকতেন। করুণাময় ও ইন্দিরা কিন্তু তাদের মেয়েকে রমা নামেই সম্বোধন করতেন।
স্কুলজীবন
কর্মসূত্রে পাবনায় থাকতেন করুণাময় বাবু। পাবনা গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি করার সময় অ্যাডমিশন ফর্মে মেয়ের নাম রমা দাশগুপ্তা লেখেন তিনি। শৈশব-কৈশোর পাবনাতেই কেটেছে সুচিত্রার। পাবনায় ছোট্ট রমাকে দেখে এক নাগা সন্ন্যাসী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে মেয়েটি সুলক্ষণা। এই মেয়ে বড় হয়ে খুব নাম করবে। সবাই ওর প্রশংসা করবে। অর্থ-যশ সবকিছুই পাবে।

ছোটবেলায় সুচিত্রা সেনের হাতের লেখা বেশ সুন্দর ছিল। শাড়ি ছিল স্কুল ইউনিফর্ম। শাড়ি তিনি নিখুঁতভাবে পরতেন। চুল সুন্দর করে কলাবেণি করতেন। আসলে ওই বয়স থেকেই রমার ড্রেস সেন্স ছিল অসাধারণ। তিনি এত সুন্দর করে সাজতেন যে ছেলেরা তার দিকে তাকিয়ে থাকত।
 
প্রথম ছবি
১৯৪৭ সালে আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রমার। রূপশ্রী স্টুডিওতে 'সঙ্কেত' নামে একটি ছবির জন্য প্রথম স্ক্রিন-টেস্ট করেন তিনি। শ্বশুর আদিনাথ সেনের অনুমতি নিয়েই অভিনয় জগতে পা রাখেন রমা।
রমা থেকে সুচিত্রা
১৯৫৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের 'সাত নম্বর কয়েদি' সুচিত্রা সেনের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। সুকুমার বাবুর সহকারী ছিলেন নীতিশ রায়। তিনিই রমার নাম রাখেন সুচিত্রা। তবে প্রথম যে ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন তার নাম 'শেষ কোথায়'। কিছু দিন কাজ করার পর শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই অসমাপ্ত ছবির সুবাদেই তিনি নীরেন লাহিড়ীর 'কাজরী' ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। এর সূত্র ধরেই মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবিতেও অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।
সুচিত্রা-উত্তম ২৮
সর্বমোট ২৮টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেন সুচিত্রা-উত্তম জুটি। তাদের অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে 'সাড়ে চুয়াত্তর', 'ওরা থাকে ওধারে', 'মরণের পরে', 'প্রিয় বান্ধবী', 'অগি্নপরীক্ষা', 'শাপমোচন', 'সাগরিকা', 'শিল্পী', 'হারানো সুর', 'চন্দ্রনাথ', 'পথে হল দেরি' (প্রথম বাংলা রঙিন ছবি), 'জীবন তৃষ্ণা', 'রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত', 'ইন্দ্রাণী', 'সূর্যতোরণ', 'চাওয়া পাওয়া', 'সপ্তপদী', 'গৃহদাহ', 'আলো আমার আলো' প্রভৃতি।
দেবদাসে পার্বতী
১৯৫৪ সালে বিমল রায় শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস' হিন্দিতে নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। নাম ভূমিকায় দিলীপ কুমারকে নির্বাচন করেন তিনি। চন্দ্রমুখীর চরিত্রে ছিলেন বৈজয়ন্তীমালা। পার্বতীর ভূমিকায় প্রথমে মীনা কুমারীকে নেয়ার কথা ভাবেন বিমল বাবু। কিন্তু মীনা কুমারী সময় দিতে না পারায় মধুবালার কথা ভাবা হয়। এদিকে দিলীপ কুমারের সঙ্গে মধুবালার মনোমালিন্য ঘটায় শেষ পর্যন্ত ভাগ্নেবউ সুচিত্রার কথা মাথায় আসে বিমল বাবুর। বিমল রায় আদিনাথ সেনের শ্যালক।
যখন বিষ্ণুপ্রিয়া
অভিনেত্রী হিসেবে সুচিত্রা সেনের উত্তরণের পালা 'ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য' ছবি থেকে। দেবকী কুমার বসু পরিচালিত এ ছবিতে বিষ্ণুপ্রিয়ার ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন তিনি। সুচিত্রা সেন নিজে বলেছেন, 'ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য' ছবিটি আমার জীবনকে পাল্টে দেয়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫-এ তিন বছর পর পর অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে মহানায়িকার। পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের 'ঢুলি', সুকুমার দাশগুপ্তের 'সদানন্দের মেলা', অগ্রদূতের 'অগি্নপরীক্ষা', সুধাংশু মুখোপাধ্যায়ের 'সাঁঝের প্রদীপ', সুধীর মুখোপাধ্যায়ের 'শাপমোচন', অগ্রদূতের 'সবার উপরে' ছবিগুলো বক্স অফিসে আশাতীত সাফল্য অর্জন করে।
অমোঘ আকর্ষণ
উত্তম-সুচিত্রার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার ফলে সেই সময়ের বাঙালির সামাজিক জীবনেও কিছু কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। উত্তম-সুচিত্রার বিভিন্ন ছায়াছবি দৃশ্যের অনুকরণে নবদম্পতিরাও ফটো স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলে যথেষ্ট আনন্দ লাভ করতেন। এমনকি লক্ষ্মী ও সরস্বতী প্রতিমা সুচিত্রার মুখের আদলে গড়া হয়েছে। উত্তম-সুচিত্রা জুটি শুধু অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তাই লাভ করেনি; বাংলা ছায়াছবির জগতে স্টার সিস্টেমও প্রবর্তন করে।
সুচিত্রা তার মুডের জন্যও সব সময় আলোচনায় ছিলেন। একবার অজয় করের 'সাত পাকে বাঁধা'র শুটিং চলে কলকাতার আনোয়ার শাহ রোডের ২ নাম্বার স্টুডিওতে। বারান্দায় ফোরগ্রাউন্ডে ছিল খাঁচাবন্দি একটি সবুজ রঙের টিয়ে। পাখিটাকে নিয়ে সুচিত্রার একটা শট ছিল। সেটা হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ ফ্লোর থেকে বেরিয়ে এসে খাঁচাটার দোর খুলে হাততালি দিয়ে পাখিটাকে উড়িয়ে দিলেন নীল আকাশে। টিয়ে পাখিটিকে নিয়ে কন্টিনিউটি শট ছিল। কিন্তু পাখিটিকে এভাবে উড়িয়ে দেয়ায় পরিচালক অজয় কর সুচিত্রার কাছে কৈফিয়ত তলব করলেন। সুচিত্রা একটু হেসে বললেন, 'বড্ড কষ্ট পাচ্ছিল বেচারা! তাই উড়িয়ে দিলাম। সরি।'
পরিচালক অসিত সেনের 'দীপ জ্বেলে যাই' ছবিতে নার্স রাধা মিত্রের চরিত্রেও সুচিত্রার অভিনয় ইতিহাস হয়ে থাকবে। প্রথম তিনি দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন 'স্মৃতিটুকু থাক' ছবিতে। অসিত বাবুর ছবি 'উত্তর ফাল্গুনী'-তে মা ও মেয়ের দ্বৈত ভূমিকায় সুচিত্রার অভিনয়ের তুলনা মেলা ভার। পরে এ ছবিটিই হিন্দিতে 'মমতা' নামে রিমেক করা হয়েছিল। এতে সুচিত্রার বিপরীতে ছিলেন ধর্মেন্দ্র। জনপ্রিয় ছবি 'হসপিটালে' বম্বের প্রখ্যাত নায়ক অশোক কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন সুচিত্রা। সুশীল মজুমদার পরিচালিত এ ছবির নায়িকা শর্বরীর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন তিনি।
উত্তম-সুচিত্রা বিবাদ
১৯৬১ সালে 'সপ্তপদী' মুক্তি পেলেও ছবিটির শুটিং হয়েছিল অনেক আগে। সুপরিকল্পিতভাবে উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ লাগিয়ে দেয়ার ফলে ছবির কাজ বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন। তাই 'সপ্তপদী' তৈরি হতে অনেক দেরি হয়ে যায়। কী সেই বিবাদ? সুচিত্রা সেনকে বোঝানো হয়েছিল, উত্তম কুমারের সঙ্গে নায়িকা হিসেবে থাকলে তার খ্যাতির প্রকাশ ঠিকভাবে ঘটবে না।
আন্তর্জাতিক পুরস্কার
মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'সাত পাকে বাঁধা' ছবিটি প্রদর্শিত হয়। অসাধারণ অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সুচিত্রা। এর আগে নার্গিসই ছিলেন একমাত্র ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি 'মাদার ইন্ডিয়া'র জন্য কোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন।
গ্ল্যামার ও অভিনয়
গ্ল্যামার ও অভিনয়ের দাপট- সব মিলিয়ে সুচিত্রা সেন তার উপস্থিতির জোরে 'ফরিয়াদ'-এর মতো শক্ত বিষয়ের ছবিকেও সুপারহিট করিয়ে দিয়েছিলেন। একই কথা বলা চলে দীনেন গুপ্তের 'দেবী চৌধুরানী' ছবির ক্ষেত্রেও। অজয় করের 'দত্তা'ও সুপারহিট হয়েছিল সুচিত্রার অভিনয়ের জোরেই।
ঘর সাজানো
অভিনয়ের বাইরে সুচিত্রার ঘর সাজানোর অভ্যাস বহুদিনের। নিজের হাতে তার শোবার ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতেন। পছন্দ করতেন গাছপালা ও পশুপাখি। বিভিন্ন ধরনের উপাদানসামগ্রীতে সাজানো থাকত তার বাড়ির ড্রইংরুম। শেষ দিনগুলোয় আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে তার সঙ্গে কেউ দেখা করতে এসেছেন শুনলে, গোপন ক্যামেরায় টিভি স্ক্রিনে সেই সাক্ষাৎপ্রার্থীকে দেখে তবেই ফ্ল্যাটে ঢোকার অনুমতি দিতেন।

একসময় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে তার বিশাল দোতলা বাড়িতে কে না গিয়েছেন! হিন্দি ছবির বড় বড় নায়কও সেখানে গিয়ে পড়ে থাকতেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অশোক কুমার, রাজ কাপুর, দেবানন্দ, সঞ্জীব কুমার, ধর্মেন্দ্র প্রমুখ। রাজ কাপুর ও সুচিত্রা সেনকে নিয়ে মজার একটা গল্প রয়েছে। একবার রাজ কাপুর সুচিত্রাকে তার কোনো ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। তার পরনে সাদা ধবধবে প্যান্ট-কোট ও হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ ছিল। এ গোলাপ দিয়েই সুচিত্রাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি।
গোপালপুরের নির্জনতা
গোপালপুরের সমুদ্রসৈকত বড়ই প্রিয় ছিল সুচিত্রা সেনের। এখানকার নির্জনতা দারুণ উপভোগ করতেন তিনি। তাই তার কোনো ছবির সিকোয়েন্স সমুদ্রের ধারে থাকলে শুটিংয়ের জন্য গোপালপুরকেই বেছে নিতেন।
সুচিত্রা-সন্ধ্যা
'অগি্নপরীক্ষা' থেকে শুরু করে একের পর এক ছবিতে সুচিত্রার লিপে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। বাস্তবিকভাবেই তারা যেন একে-অন্যের জন্যই জন্মেছেন। মহানায়িকার লিপে মহাগায়িকা সন্ধ্যার সব থেকে বেশি গানের দৃশ্যধারণ হয়েছে। সুচিত্রার লিপ দেয়ার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ।
অনন্য 'অাঁধি'
'অাঁধি' ছবির শুটিংকে কেন্দ্র করেই হিন্দি ছবির প্রতিষ্ঠিত পরিচালক, গীতিকার গুলজারের সঙ্গে প্রায় আত্মীয়তার সম্পর্কই গড়ে উঠেছিল মহানায়িকার। 'দেবদাস', 'মুসাফির', 'চম্পাকলি', 'বোম্বাই কা বাবু', 'শরহদ', 'মমতা' প্রভৃতি ছবির থেকেও 'অাঁধি'র সুচিত্রা ভারতীয় দর্শকমহলে এক অনন্য আবেদনের সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। ছবিটি ১৯৭৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল।
সুচিত্রার অপ্রাপ্তি
কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে কাজ করা হয়ে ওঠেনি সুচিত্রা সেনের। সুচিত্রা সেনের অভিনয় জীবনের সব থেকে বড় অপ্রাপ্তি সম্ভবত এটিই। সত্যজিৎ রায় সুচিত্রাকে নিয়ে 'দেবী চৌধুরানী' করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুচিত্রা শিডিউল দিতে না পারায় সত্যজিৎ বাবু ছবিটি করেননি। অবশ্য পরে সুচিত্রাকে নিয়ে দীনেন গুপ্ত ছবিটি করেছিলেন।
গায়িকা সুচিত্রা
মেগাফোন কোম্পানির ব্যানারে সুচিত্রা দুটো পুজোর গান রেকর্ড করেছিলেন। এর সুর করেছিলেন রবীন চট্টোপাধ্যায়। গানের কথা লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।
প্রিয় খাবার
সুচিত্রা সেন বরাবরই আর্লি রাইজার ছিলেন। ভোরে উঠতেন। কখনোসখনো ইচ্ছা হলে বাড়ির সামনে রাস্তায় হাঁটতেও বের হতেন। ইচ্ছা হলে রান্নাঘরেও ঢুকে পরতেন তিনি। নিজেই রান্নাবান্না করতেন। পাঁঠার মাংস থেকে মুরগির মাংসই ছিল তার বেশি পছন্দের। সুচিত্রা সেনের প্রিয় মাছ ছিল মাগুর, বড় রুই মাছের পেটি, কই, চিংড়ি ও ভেটকি। রসুন ভেটকি তার একটি পছন্দের খাবার। তিনি থাই খাবারও ভালোবাসতেন।
ঠাকুরঘরে সুচিত্রা
সুচিত্রা সেনের আধ্যাত্মিক জীবনের কথা তার অভিনয় জীবনের থেকে কম আকর্ষণীয় নয়। অভিনয় থেকে সরে আসার পর তিনি আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করেছিলেন। তার শোবার ঘরের পাশেই ঠাকুরঘর স্থাপন করা হয়েছিল। কী শীত, কী গ্রীষ্ম; সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে স্নান সেরে ঠাকুরঘরে ঢুকে পড়তেন তিনি। সাড়ে ১১টার আগে সেখান থেকে বের হতেন না। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, মা সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত ছিলেন তিনি। প্রায়ই বেলুড় মঠে ভরত মহারাজ, স্বামী বীরেশ্বরানন্দ, স্বামী রঙ্গনাথানন্দজীর কাছে ছুটে যেতেন তিনি। সুচিত্রা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, 'মাঝেমধ্যে বড় কষ্ট হয়। যন্ত্রণা হয় ভেতরে। তখন কিছু ভালো লাগে না। তাই যন্ত্রণা লাঘবের জন্য ছুটে যাই গঙ্গার ওপারে-বেলুড়ে। শ্রীশ্রীঠাকুরের পায়ের কাছে বসে থাকি।'
অন্তরালে মহানায়িকা
রহস্যজনক এক কারণে হঠাৎ করেই অন্তরালে চলে যান সুচিত্রা সেন। তাকে সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে জনসম্মুখে দেখা গিয়েছিল। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জন-অন্তরালেই থেকেছেন।

অসুস্থ হয়ে সুচিত্রা সেন টানা ২৫ দিন কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার সুচিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তাকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতেই হলো।

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor