৪০ বছরের জীবনের ২৯টি বছরই ক্রিকেট মাঠে কাটিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। এর
মধ্যে একটানা ২৪ বছর খেলেছেন জাতীয় দলে। খেলেছেন সর্বাধিক টেস্ট ও ওয়ানডে।
করেছেন সর্বাধিক রান, সর্বাধিক সেঞ্চুরিও তার ঝুলিতে। রেকর্ডের বড়পুত্র
হয়েছেন। ক্রিকেটে ধ্যান-জ্ঞান ছিল বলেই এটা ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতে পারতেন
না শচীন। সেই ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কটা ছিন্ন হয়ে গেল গতকাল। শচীনের
বিদায়ে পুরো দুনিয়ায় হাহাকার শুরু হয়েছে। এতে লিটল মাস্টারের ভেতরটা কত
হাহাকার করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই হাহাকার আটকে রাখতে পারলেন
ক্রিকেট ঈশ্বর। বিদায় বেলায় সেটাই প্রমাণ করলেন তিনি। তার বিদায়ী ভাষণে
ফুটে উঠলো দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সকল স্মৃতি। দুই যুগের বেশি সময় ধরে
বোলারদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া টেন্ডুলকার গতকাল নিজেই কেঁপে উঠলেন।
মাইক্রোফোন হাতে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠেই কথা বলা শুরু করলেন। কিন্তু পারলেন না।
ভক্তদের মুহুর্মুহু করতালিতে আটকে গেল তাঁর কথা। বেরিয়ে এলো তাঁর ভেতরের
চিত্রটা। শচীন বললেন, ‘আপনারা এমন করলে আমি আরও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বো।’
বারবার কণ্ঠ ভেঙে আসছিল ক্রিকেট কিংবদন্তির। গলা শুকিয়ে আসছিল। কথা আটকে
যাচ্ছিল বলে বেশ কয়েকবার পানিও খেলেন। এর মধ্যেই বলে গেলেন নিজের কথা। তাঁর
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে যাদের অবদান রয়েছে, তাঁদের সবার নামের তালিকা ছিল
টেন্ডুলকারের হাতে। কেউ যেন বাদ পড়ে না যায়!
বাবাকে স্মরণ আলাদাভাবে
১৯৯৯ সালে বাবা রমেশ টেন্ডুলকারকে হারিয়েছেন শচীন। বিদায়ী ভাষণে বাবার প্রসঙ্গ তুলে আপ্লুত শচীন। ১৯৯৯ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকে প্রতিটি পদক্ষেপেই যে তিনি তাঁর প্রয়াত বাবাকে অনুভব করেন, সেটা জানিয়েছেন তিনি। বলতে ভোলেননি প্রতিটি বড় ইনিংস খেলার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে খোঁজার ওই মুহূর্তের কথা।
মায়ের অন্যরকম ভালবাসা
ছোটবেলায় যথেষ্ট দুষ্টু ছিলেন শচীন। বেড়ে ওঠার পথে তাঁর রত্নগর্ভা মাও যে বিশেষ অবস্থানে আছেন বলেছেন সেটাও, ‘ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম। আমাকে সামলানো ছিল যথেষ্ট কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই মা করে গেছেন হাসিমুখে। ক্রিকেটার টেন্ডুলকারের জন্য মায়ের প্রার্থনাও যে ছিল বিরাট কিছু, বিদায়ী ভাষণে তা আবেগময় কণ্ঠে বলেছেন তিনি, ‘তাঁর প্রার্থনা ও কল্যাণ কামনাই আজ আমাকে নিয়ে এসেছে এই জায়গায়। যিনি আমার বিদায়ী ম্যাচে প্রথম বারের মতো মাঠে এসেছেন আমাকে উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।’
অজিতের কাছে আকুতি
বড় ভাই নীতিন ও অজিতের কথাও স্মরণ করেছেন তিনি। বিশেষ করে অজিত টেন্ডুলকারের কথা স্মরণ করে শচীনের কণ্ঠ যেন বাষ্পরুদ্ধ, ‘১১ বছর বয়সে অজিত দাদা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্যার রামাকান্ত আচরেকরের ক্লাসে। ক্রিকেটের বর্ণময় সুধা সেদিন থেকেই পান করছি আমি।’ জানিয়েছেন, ভাই অজিত কখনোই নাকি শচীনের প্রশংসা করেননি, পাছে যদি অহঙ্কার ভর করে তাঁর মধ্যে। জীবনের শেষ টেস্টটি শেষ করে ভাইয়ের উদ্দেশে একটি কথাই বললেন শচীন, ‘আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যা কিছু পেয়েছি, তার জন্য একটা প্রশংসা তোমার কাছ থেকে এখন আমি পেতেই পারি। আমি তো আর কখনোই মাঠে ক্রিকেট খেলতে নামবো না।’
বড় বোনের কাছে প্রথম ব্যাট পান
বড় বোনের ক্রিকেট ব্যাট কিনে দেয়ার কথাটি ভোলেননি শচীন, ‘জীবনের প্রথম ক্রিকেট ব্যাটটি আমি পেয়েছিলাম আমার দিদির কাছ থেকে। আজকের এই আমি যা কিছু পেয়েছি, তার শুরুটা তো দিদিই করেছিল। ও-ই তো ক্রিকেট ব্যাটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আমায়।’
সেরা জুটি অঞ্জলির সঙ্গে
বাবাকে স্মরণ আলাদাভাবে
১৯৯৯ সালে বাবা রমেশ টেন্ডুলকারকে হারিয়েছেন শচীন। বিদায়ী ভাষণে বাবার প্রসঙ্গ তুলে আপ্লুত শচীন। ১৯৯৯ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকে প্রতিটি পদক্ষেপেই যে তিনি তাঁর প্রয়াত বাবাকে অনুভব করেন, সেটা জানিয়েছেন তিনি। বলতে ভোলেননি প্রতিটি বড় ইনিংস খেলার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে খোঁজার ওই মুহূর্তের কথা।
মায়ের অন্যরকম ভালবাসা
ছোটবেলায় যথেষ্ট দুষ্টু ছিলেন শচীন। বেড়ে ওঠার পথে তাঁর রত্নগর্ভা মাও যে বিশেষ অবস্থানে আছেন বলেছেন সেটাও, ‘ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম। আমাকে সামলানো ছিল যথেষ্ট কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই মা করে গেছেন হাসিমুখে। ক্রিকেটার টেন্ডুলকারের জন্য মায়ের প্রার্থনাও যে ছিল বিরাট কিছু, বিদায়ী ভাষণে তা আবেগময় কণ্ঠে বলেছেন তিনি, ‘তাঁর প্রার্থনা ও কল্যাণ কামনাই আজ আমাকে নিয়ে এসেছে এই জায়গায়। যিনি আমার বিদায়ী ম্যাচে প্রথম বারের মতো মাঠে এসেছেন আমাকে উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।’
অজিতের কাছে আকুতি
বড় ভাই নীতিন ও অজিতের কথাও স্মরণ করেছেন তিনি। বিশেষ করে অজিত টেন্ডুলকারের কথা স্মরণ করে শচীনের কণ্ঠ যেন বাষ্পরুদ্ধ, ‘১১ বছর বয়সে অজিত দাদা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্যার রামাকান্ত আচরেকরের ক্লাসে। ক্রিকেটের বর্ণময় সুধা সেদিন থেকেই পান করছি আমি।’ জানিয়েছেন, ভাই অজিত কখনোই নাকি শচীনের প্রশংসা করেননি, পাছে যদি অহঙ্কার ভর করে তাঁর মধ্যে। জীবনের শেষ টেস্টটি শেষ করে ভাইয়ের উদ্দেশে একটি কথাই বললেন শচীন, ‘আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যা কিছু পেয়েছি, তার জন্য একটা প্রশংসা তোমার কাছ থেকে এখন আমি পেতেই পারি। আমি তো আর কখনোই মাঠে ক্রিকেট খেলতে নামবো না।’
বড় বোনের কাছে প্রথম ব্যাট পান
বড় বোনের ক্রিকেট ব্যাট কিনে দেয়ার কথাটি ভোলেননি শচীন, ‘জীবনের প্রথম ক্রিকেট ব্যাটটি আমি পেয়েছিলাম আমার দিদির কাছ থেকে। আজকের এই আমি যা কিছু পেয়েছি, তার শুরুটা তো দিদিই করেছিল। ও-ই তো ক্রিকেট ব্যাটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আমায়।’
সেরা জুটি অঞ্জলির সঙ্গে
স্কুল ক্রিকেটে বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে গড়েছিলেন রেকর্ড ৬৬৪ রানের জুটি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে রয়েছে তার ২০টির অধীন বড় জুটি। এত বড় হয়তো নয়, দীর্ঘ দুই যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁর আছে এমন অসংখ্য জুটি। জুটির পর জুটি গড়ে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। তবে লিটল মাস্টারের কাছে তাঁর সেরা জুটি প্রেমময় স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গেই। শচীন নিজেই জানিয়েছেন কথাটা। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গতকাল নিজের বিদায়ী অনুষ্ঠানে ক্রিকেট কিংবদন্তি জানান, তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তটা সেদিন, যেদিন প্রথম দেখেছিলেন অঞ্জলিকে। অঞ্জলিকে শচীন প্রথম দেখেছিলেন মুম্বই এয়ারপোর্টে, ইংল্যান্ড সফর থেকে ফেরার সময়। মুহূর্তের ভাল লাগা থেকে পরিচয়, এরপর মন দেয়া-নেয়া। পাঁচ বছরের প্রেম পরিণয়ে রূপ নেয় ১৯৯৫ সালে। বয়সে ছয় বছরের বড় অঞ্জলিকে বিয়ে করেন টেন্ডুলকার। বিয়ের পর অঞ্জলি মেহতা হয়ে যান অঞ্জলি টেন্ডুলকার। গুজরাটের শিল্পপতি আনন্দ মেহতা ও বৃটিশ সমাজকর্মী অ্যানাবেল মেহতার মেয়ে অঞ্জলি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন চিকিৎসক। এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন। হয়তো চিকিৎসা পেশায়ও ভাল করতেন। কিন্তু বেশি দিন সেটা চালিয়ে যাননি অঞ্জলি। টেন্ডুলকারের জন্য উৎসর্গ করেন নিজের সব স্বপ্ন, ক্যারিয়ার। টেন্ডুলকারের ভাষায়, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯০ সালে, যেদিন প্রথম আমার স্ত্রী অঞ্জলিকে দেখেছিলাম। আমি জানি, খুব ভাল একজন চিকিৎসক হতে পারতো অঞ্জলি। যখন আমরা সন্তান নেয়ার কথা ভাবলাম, তখন ও দায়িত্বটা নিল। আমাকে বলল, ‘তুমি তোমার ক্রিকেট চালিয়ে যাও। পরিবারে দায়িত্ব নেব আমি।’ অঞ্জলিকে ধন্যবাদ দিয়ে লিটল মাস্টার বলেন, ‘আমি ওকে বলেছি, জীবনে যতজনের সঙ্গে জুটি গড়েছি, এর মধ্যে তুমিই সেরা।’
এবার সন্তানদের সময় দিবেন শচীন
ব্যাট হাতে তামাম দুনিয়া শাসন করেছেন শচীন। দেশ বিদেশ ঘোরার কারণে দুই সন্তানকে সময় দিতে পারেননি এই মহানায়ক। তাইতো দুই সন্তান অর্জুন আর সারাকে এখন থেকে অনেক সময় দেবেন বলে কথা দিলেন কিংবদন্তি। ক্রিকেটের ব্যস্ত সময়সূচি আদরের দুই সন্তানের জীবন থেকে যে সময়টুকু কেড়ে নিয়েছে, শচীন কথা দিয়েছেন, তিনি তাঁদের বাকি জীবনটাতে সেই অভাব পুষিয়ে দেবেন বেশ ভালভাবেই।
স্মরণ সতীর্থদেরও
যাদের সঙ্গে দীর্ঘ ২৪ বছর খেলেছেন। বিদায় বেলায় তাদের ভোলোননি শচীন। একে একে মনে করেছেন রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষণ, অনিম কুম্মলে ও সৌরভ গাঙ্গুলিকে। বর্তমান দলটিও ভূয়সি প্রশংসা করেছেন তিনি। ধোনির যোগ্য নেতৃত্বে ভারত দিন দিন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা ধরে রাখতে পারলে ক্রিকেট দুনিয়াকে ভারতই শাষণ করবে বিশ্বাস লিটল মাস্টারের। বিদায় বক্তৃতাটা আবেগে আপ্লুত হয়ে শুনেছেন ওয়াংখেড়ের দর্শকেরা। আবেগে আপ্লুত টেলিভিশনের সামনে বসা লাখোকোটি দর্শকেরাও। ক্রিকেট মাঠের গেট তার বিদায় অনুষ্ঠানেও প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন মানুষ হিসেবেও তিনি কত বড়!
No comments:
Post a Comment