July 16, 2013

জটিল রোগ নেই, তবু হাসপাতালে

কোনো জটিল রোগে ভুগছেন না মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া গোলাম আযম। এর পরও গ্রেপ্তার হওয়ার গত ১৯ মাসে একটি দিনও কারাগারে থাকতে হয়নি তাঁকে। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এই আমিরকে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে।
জটিল রোগ না থাকা সত্ত্বেও গোলাম আযমকে এভাবে হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিত্সাধীন রাখার কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাঁকে কখন, কবে কারাগারে স্থানান্তর করা হবে—এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূইয়া প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, 'আজ সকালেও তিনি সুস্থ ছিলেন। গতকাল আদালতে নেওয়ার আগে আমরা তাঁর রক্তচাপ, নাড়ি পরীক্ষা করে দেখেছি। তিনি সুস্থ ছিলেন। গত ১৯ মাসে একবারের জন্যও তিনি জটিল কোনো রোগে ভোগেননি।'
২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি বিএসএমএমইউতে আসার পর বিভিন্ন সময়ে গোলাম আযমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তিনি রেকর্ড দেখে এই প্রতিবেদককে জানান, তাঁর রক্তচাপ এখন স্বাভাবিক। তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন। তাঁর হূদযন্ত্র, কিডনি, যকৃত্ স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। এমআরআই রিপোর্টে তাঁর কোমরে কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। এটি বার্ধক্যজনিত। তিনি খুব নিয়মমাফিক এবং ভালো খাওয়া-দাওয়া করছেন।
তার পরও গোলাম আযম বিএসএমএমইউতে কেন—এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র বলেছে, গোলাম আযমকে কারাগারে স্থানান্তরের বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের ওপর। গোলাম আযমকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। এখন বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ মনে করলে তাঁকে কারাগারে পাঠাতে পারে।
এ ব্যাপারে কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী বলেন, বিএসএমএমইউ গোলাম আযমকে ছেড়ে দিলেই কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে নিয়ে আসবে।
এর আগে গত বছরের ১১ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমকে কারা হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই দিন দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছান। সেখানে তিন ঘণ্টা অবস্থানের পর গোলাম আযমকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিএসএমএমইউতে পাঠিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ দুই দিন পর কেন্দ্রীয় কারাগারকে জানায়, গোলাম আযম সুস্থ। এক দিন পর জামায়াতের এই সাবেক প্রধানের আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রতিবেদনগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। এরপর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি ওই হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকবেন।
আজ গোলাম আযমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান মেডিসিন অনুষদের ডিন এম বি এম আবদুল্লাহ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, মানসিকভাবে তিনি খুব শক্ত আছেন। তবে তিনি একা চলাফেরা করতে পারেন না। তাঁর পিত্তথলিতে পাথর আছে, বার্ধক্যজনিত কারণে চোখ ও নাকে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারাগারে যাওয়ার জন্য তিনি উপযুক্ত কি না, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।

গোলাম আযমের খাওয়া-দাওয়া: সূত্রগুলো জানায়, গোলাম আযমকে প্রথম দিকে বাসা থেকে খাবার পাঠানো হতো। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ একপর্যায়ে পরিবারকে জানায়, বাসা থেকে সরবরাহ করা খাবারে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
এরপর পরিবার থেকে আর খাবার পাঠানো হচ্ছে না। তবে গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে গত বছরের ৪ মার্চ তাঁর খাবারের তালিকা ঠিক করে পাঠান। সে অনুযায়ী সরকারি খরচে অন্যান্য রোগীর চেয়ে আলাদা ও উন্নত মানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তাঁকে।
গোলাম আযমের স্ত্রী তাঁর স্বামীকে সকালের নাশতায় লাল আটার চার-পাঁচটি রুটি, সঙ্গে ডিম ভাজি, আলু ছাড়া সবজি ভাজি, মুরগির মাংস (কারি/ভুন), মিষ্টি, এনসিওর দুধ ও কলা দেওয়ার অনুরোধ জানান।
সৈয়দা আফিফার দেওয়া তালিকায় গোলাম আযমের জন্য দুপুরের খাবারে রয়েছে চিকন চালের ভাত, করলা ভাজি, টাকি বা চিংড়ি মাছ ভর্তা, বেগুন ভাজি বা ভর্তা, ছোট মাছ বা চিংড়ি মাছ ভুনা, সালাদ ও লেবু, মাল্টা বা বরই বা নাশপাতি। সন্ধ্যার খাবারের তালিকায় রয়েছে লাড্ডু, নিমকি-বিস্কুট ও হরলিকস বা স্যুপ।
রাতের খাবারের তালিকায় রয়েছে চিকন চালের ভাত, করলা ভাজি, বেগুন ভাজি বা ভর্তা, ঢ্যাঁড়শ বা মিষ্টিকুমড়া বা পেঁপে ভাজি, গরু বা খাসির মাংস ভুনা, সালাদ ও লেবু এবং কমলা, মাল্টা, নাশপাতি, আঙুর বা বরই।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোলাম আযমের স্ত্রীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নতুন তালিকায় খাবার সরবরাহ করতে শুরু করে।
এ তালিকায় রয়েছে সকাল নয়টায় এক চামচ মধু, এক চামচ অলিভ অয়েল, দুটি বিস্কুট, চিড়া ভাজা বা মুড়ির মোয়া, দুধ, হরলিকস ও দুটি ডিম। বেলা ১১টায় দেওয়া হয় খিচুড়ি, সবজি, স্যুপ, আচার ও ফল। বেলা দুইটায় দেওয়া হয় দুই টুকরা মাছ, সবজি, ডাল ও আচার। বিকেলে নাশতায় তাঁকে সরবরাহ করা হচ্ছে স্যুপ ও ফল। রাত আটটায় দেওয়া হয় ভাত, মুরগির মাংস, সবজি, ডাল, আচার ও ফল।
শেখ সাবিহা আলম
প্রথম আলো
তারিখ: ১৬-০৭-২০১৩

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor