May 5, 2013

মৃত্যুর কোলে ৪ দিন

সারা শরীরে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। ঘাড়ে-পিঠে কামড়ের দাগ। হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ। নড়াচড়া করতে গেলে টান পড়ে মেরুদণ্ডে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছিলেন টানা চার দিন। এখন এনাম মেডিক্যালের বেডে শুয়ে দুই চোখ মেলে দেখছেন অফুরান আলো। তার পরও বিশ্বাস করতে পারছেন না বেঁচে আছেন। ২৮ বছরের এই মেয়ের নাম মেরিনা বেগম। বাড়ি মেহেরপুর জেলার ধলাগ্রামে। মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন ফ্যান্টম লিমিটেডে। ৯৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ফিরে আসা সেই মেরিনা বেগমকে নিয়ে লিখেছেন পিন্টু রঞ্জন অর্ক। ভবনে ফাটল ধরায় আগের দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরদিন তাই আর কাজে আসতে সায় দিচ্ছিল না মন। কিন্তু কাজে না গেলে মাস শেষে বেতন আটকে দেওয়া হবে_ঘোষণা করেছিল গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিলেন, অন্যদিনের মতো সকাল ৮টার মধ্যেই চলে এলেন রানা প্লাজায়। রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় মেরিনার কর্মস্থল। ভবনের সামনে অনেক মানুষের জটলা, সবার চোখে সংশয়। কেউই ভেতরে যেতে চাচ্ছেন না। হঠাৎ গার্মেন্টের কর্মকর্তারা এসে শাসানো শুরু করলেন, 'মাস তো প্রায় শেষ। তোমরা কি বেতন চাও না? আমরা তো ভবন পরীক্ষা করাইছি। কোনো সমস্যা নাই, সবাই ওঠো।'
প্রতিবাদ করে উঠলেন কেউ কেউ, 'এক দিনের মধ্যে কী সমাধান করলেন?'
উত্তরে কর্মকর্তারা জানান, 'ইঞ্জিনিয়ার আইনা পরীক্ষা করাইছি। ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, কোনো সমস্যা নেই। আপাতত কাজ করা যাবে। তোমরা সবাই ওঠো।'
তার পরও অনড় দাঁড়িয়ে রইলেন শ্রমিকরা। কর্মকর্তাদের একজন তখন জোর গলায় বলে উঠলেন, 'তেমন সমস্যা থাকলে কি আমরা গার্মেন্ট খোলা রাখতাম? কাল তো বন্ধ করে দিয়েছিলাম।' আস্তে আস্তে তাঁদের কথা বিশ্বাস করতে শুরু করলেন অনেকে। তার পরও কয়েকজন প্রতিবাদের চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁদের বেতন কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় আর বেশি উঁচুতে উঠতে পারেনি তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা। দলে দলে সবাই উঠতে শুরু করলেন গার্মেন্টের বিভিন্ন ফ্লোরে।
সকাল তখন প্রায় ৯টা। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে জেনারেটর ছেড়ে দেওয়া হলো। জেনারেটর চালানোর মিনিট দুয়েকের মধ্যে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে লাগল পুরো ভবন। মেরিনাদের ফ্লোরে কাজ করছিলেন ৭০০-৮০০ শ্রমিক। মেরিনা কাজ করছিলেন সেলাই মেশিনে। ভবনধসের ভয়ংকর শব্দটা সব কিছু ছাপিয়ে কানে এলো তাঁরও। আশপাশে তাকিয়ে দেখলেন, যে যাঁর মতো ছুটছেন। চিৎকার-চেঁচামেচিতে কান পাতা দায়। ওপর থেকে গায়ের ওপর এসে পড়ছে পাথর, রড, বিভিন্ন জিনিসপত্র। সঙ্গে সঙ্গে মেশিন ছেড়ে উঠে পড়লেন মেরিনা। দৌড় দিলেন সিঁড়ি বরাবর। তবে ২০-২৫ হাতের বেশি যেতে পারলেন না। সেখানে বড় দুটি মেশিন পাশাপাশি রাখা। মেশিন দুটোর মাঝখানে চলে গেলেন তিনি। হঠাৎ ওপর থেকে ছাদ ভেঙে মাথার ওপর পড়তে শুরু করল। ফ্লোরে শুয়ে পড়লেন মেরিনা। ছাদের ভাঙা অংশ পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেল সব ভারী মেশিন। একটু পর মাথা তুলতে গিয়ে দেখেন, ছাদের সঙ্গে বাড়ি খাচ্ছে মাথা।
দুই ছাদের মাঝখানে আটকা পড়লেন মেরিনা। চারপাশে কেবল অন্ধকার। একটুও আলো নেই কোথাও। ধুলাবালিতে ঢেকে যাচ্ছে নাক-চোখ-মুখ। একটা শব্দই কেবল মুখে আসছে, 'বাঁচাও! বাঁচাও!'
আশপাশের আওয়াজ থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পেলেন এখানে তাঁরা ১২-১৩ জন আটকা পড়েছেন। তিনজন ছেলে, বাকি আট-নয়জন মেয়ে। ছোট একটি জায়গায় চিত হয়ে শুয়ে আছেন সবাই। যেন জীবন্ত লাশ! যেদিকে চোখ যায়, ঘুটঘুটে অন্ধকার। এদিক-সেদিক নড়াচড়ারও সুযোগ নেই। মেরিনার ডান পাশে একটি ছেলে, দুটি মেয়ে। তাঁদের পাশেই পড়ে আছে একটি লাশ। বিমের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে মেয়েটা। প্রথম দিন কোনো গন্ধ হয়নি। পরদিন থেকে উৎকট গন্ধ ছড়াতে শুরু করল। তীব্র গন্ধে প্রথম প্রথম বমি চলে আসত। আস্তে আস্তে সে গন্ধও সয়ে গেল। আর বমি আসবে কিভাবে? পেটে কিছু থাকলে তো! ভয়ে লাশের দিকে একবারও ফিরে তাকাননি মেরিনা। ঘুমও আসে না এক ফোঁটা। মনের মধ্যে একটাই শঙ্কা_কখন মাথার ওপর ছাদটা ভেঙে পড়ে! ঘুমাতে গেলেই তো মরতে হবে।
সঙ্গে পানি নিয়ে আসতে পেরেছিলেন এক বোতল। প্রথমে সেখান থেকে একটু একটু করে খেয়েছেন। দুই দিন পর বোতলটা খালি হয়ে গেল। পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ। শব্দ পর্যন্ত বের হচ্ছে না। আশপাশে তখন কেবল একটাই চিৎকার, 'পানি দে, একটু পানি দে, জীবনটা বাঁচাই।' এ চিৎকারেই বুদ্ধিটা খেলে গেল মাথায়। মেরিনা জানেন, ছাদে আয়রনের (ইস্ত্রি) বক্সে বোতলভর্তি পানি থাকে। পাশের মেয়েটির গায়ের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। ছাদ হাতড়ে দেখলেন একটা আয়রনের বাক্সে পানির বোতল আছে। অনেক কষ্টে বের করে আনলেন সেটা। এভাবেই এক বোতল পানি ছিপি দিয়ে ১২-১৩ জন মিলে খেলেন টানা দুই দিন। তবে তৃতীয় দিনে আবার কারবালার হাহাকার শুরু হলো। কোথাও এক ফোঁটা পানি নেই। প্রচণ্ড গরমে প্রবল তৃষ্ণা লাগছিল। দরদর করে ঘামছে গা। নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে কষ্ট হচ্ছে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের গা লাগার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছে যেন আগুন ধরে যাচ্ছে। এর পরও কয়েক ফুট জায়গার মধ্যে সবাইকে গায়ে গা লাগিয়ে থাকতে হচ্ছে। কারো চোখে পানি এলে বুভুক্ষুর মতো হামলে পড়ছেন সবাই, খেয়ে নিচ্ছেন চেটেপুটে। এক সময় অবস্থা এমন হলো, কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি পর্যন্ত শুকিয়ে গেল। পাশে একটা ছেলে আর কয়েকটা মেয়ে প্রস্রাব করে খাচ্ছে! তবে ভাঙাচোরা জিনিসপত্রের মধ্যে আটকে আছে সবাই। ফলে হাত বাড়িয়ে প্রস্রাবটুকুও নেওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ আবার 'পানি দে, পানি দে' বলে অন্যের শরীর কামড়ে দিলেন। মেরিনার শরীরেও কামড়েছেন অনেকে। অনেকে অন্যের মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে লাগলেন। হামলা থেকে রেহাই পাননি মেরিনাও। এক সময় পাশের ছেলেটি পাগলামি শুরু করলেন। বলতে লাগলেন, 'দরজা বন্ধ কেন? দরজা খুলে দে। এত অন্ধকার ভালো লাগে না। আমি বাড়ি যাব। দরজা খোল।' একটু পর আবার পাশেরজনকে মারতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর আবার থেমে গেলেন।
প্রচণ্ড গরমে তৃতীয় দিন লাশের শরীর থেকে তেলের মতো চর্বি বেরোতে লাগল। আস্তে আস্তে পুরো মেঝেতে ছড়িয়ে গেল পিচ্ছিল চর্বি। সবার শরীরে তেল লেগে গেল। শরীরের নিচে ছাদ থেকে খসে পড়া বালি। তেল আর বালি একসঙ্গে আটকে গেল চামড়ায়। শুরু হলো প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া, চুলকানি। এখানে-সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হতে লাগল। এদিকে প্রচণ্ড গরমে নিঃশ্বাস নেওয়া দায়। মেশিনগুলোর পাশে পড়ে থাকা কয়েকটা কার্টন ছিঁড়ে বাতাস করতে লাগলেন। তবে কাজের কাজ কিছুই হলো না। এক পর্যায়ে শুরু হলো শ্বাসকষ্ট। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগতে ভুগতে মনে হলো_আর বুঝি বাঁচা গেল না। তবে আশা জোগাল পায়ের আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে সবাই চিৎকার করতে লাগলেন_'আমাদের বাঁচান।'
বেঁচে থাকার আকুতিটা আরো জোরালো হলো মেশিনের আওয়াজে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই মিলে চিৎকার দিয়ে উঠল, 'বাঁচাও বাঁচাও'। কিন্তু চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় মেশিন। তখন সবাই চুপ করে থাকেন। কিন্তু মন তো মানে না। কিছুক্ষণ পর আবার শুরু হয় বেঁচে থাকার আকুতি_'আমাদের বাঁচান।' একজন আরকজনকে সান্ত্বনা দেন_'আজ হয়তো ছয়তলায় কাজ হলো। কাল আমাদেরটা হবে।' এক সময় আর কানে আসে না মেশিনের আওয়াজ। মেরিনারা ভাবেন, 'রাত হয়ে গেছে তো তাই এখন কাজ বন্ধ। কাল আবার শুরু হবে।' আশায় বুক বাঁধেন সবাই_'আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করা হবে।'
আস্তে আস্তে সে আশাটাও ফিকে হয়ে আসতে থাকে। কেউ আসছে না। বাঁচার আশা ছেড়ে দিতে লাগলেন সবাই। মনকে বোঝালেন, 'হয়তো বাইরের মানুষজন মনে করছে আমরা মরে গেছি। বিল্ডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবে আমাদেরও।' যেকোনো সময় মরে যেতে পারেন, এভাবেই তৈরি করতে লাগলেন মনটাকে।
অনেক কিছু ভেসে উঠল মেরিনার মনের কোণে_'আর কোনো দিন দুনিয়ার আলো-বাতাস দেখা হবে না। ভোরে উঠে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার ভরতে হবে না। বেতনের টাকা দিয়ে ঈদের সময় মা-বাবাকে আর শাড়ি-পাঞ্জাবিও দেওয়া হবে না। বড় বোনটার জন্য খুব মায়া লাগছে। সেও এই ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। জানি না সে বেঁচে আছে, না মরে গেছে।'
মেরিনার বাঁ পাশের মেয়েটির বাড়ি লালমনিরহাট। থেকে থেকে বিলাপ করছিল ও। একটা ব্যাটের বায়না ধরেছিল ছোট ভাইটা। কথা দিয়েছিল, ঈদে কিনে দেবে। মরে গেলে ভাইকে ব্যাট কিনে দেবে কে? ভাই তো জানতেও পারবে না বোনটা মরে পড়ে আছে ফ্যান্টম গার্মেন্টে। লাশটাও খুঁজে পাবে না মা-বাবা। একজন আরেকজনকে কেবল বলছেন, 'বোন, কেউ যদি বেঁচে থাকো, মা-বাবাকে বোলো, এত দিন অনেক কষ্ট করে বেঁচে ছিলাম। কিন্তু আর পারলাম না। লাশটা যেন বাবা এসে নিয়ে যান।' দোয়া-দরুদ পড়তে লাগলেন সবাই। মেরিনা শুধু এই বলে মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, 'ওই মেয়েটা তো প্রথম দিনই মরে গেছে। আমিও তো মারা যেতে পারতাম। আমার ভাগ্য তো তার চেয়ে ভালো! আমি এত দিন বেঁচে আছি।'
মেরিনার একটু দূরে শুয়ে ছিলেন একটি ছেলে। কোয়ালিটি কন্ট্রোলার। তাঁর পকেটে একটা কলম ছিল। কার্টনের কিছু অংশ ছিঁড়ে সবাই নিজের নাম, মা-বাবার নাম, বাড়ি, মোবাইল নম্বর লিখলেন। কাগজের টুকরোগুলো ছিঁড়ে গুঁজে রাখলেন বুকের মধ্যে, মরে গেলে অন্তত লাশটা যাতে বেওয়ারিশ দাফন না হয়। লাশ হয়েও যেন শেষবারের মতো ফিরে যেতে পারেন মা-বাবার কাছে। অজ্ঞান অবস্থায় পরে যখন মেরিনাকে উদ্ধার করা হয়, ওই ঠিকানা-মোবাইল নম্বর দেখেই তাঁর মা-বাবাকে ফোন করা হয়েছিল।
বিমের ওপাশে আটকা পড়েছিলেন ফ্যান্টম গার্মেন্টের স্টাফ ইমরানসহ কয়েকজন। তাঁকে অবশ্য দেখা যাচ্ছিল না, কণ্ঠস্বর শুনেই চিনতে পেরেছিলেন সবাই। তাঁকে ডেকে বললেন মেরিনা_'স্যার, ও স্যার, আপনারা আমাদের ক্যান ডাইকা আইনা মারলেন স্যার?' তিনি উত্তরে বললেন, "আমার তো কোনো দোষ নাই। আমরা তো চাইছিলাম বন্ধ রাখতে। কিন্তু মালিক কইছে 'আমার শিপমেন্ট আগে। কিচ্ছু হইব না। চালু রাখো কারখানা।' আমরাও তো তোমাগো মতো গরিব মানুষ, হুকুমের দাস।" এভাবে কিছুক্ষণ পরপর কথা হতো। মাঝেমধ্যে তিনি সান্ত্বনা দিতেন। মেয়েরা ডেকে বলতেন, 'স্যার, আপনাদের কাছে পানি থাকলে এট্টু দ্যান না, স্যার।' তিনি বলতেন, 'বইন, আমাদের এখানে ধু-ধু মরুভূমির মতো। এক ফোঁটাও পানি নাই। বেশি কান্নাকাটি কইরো না। তাইলে পিপাসা লাগব।'
তখন চারপাশে কেবল মরণের গল্প, মৃত্যুর অপেক্ষা। হঠাৎ শুনলেন মানুষের কণ্ঠস্বর। তবে তাঁদের ডেকে সাহায্য চাইবার শক্তিটুকুও কারো নেই। মুখ দিয়ে কোনো স্বর বেরোচ্ছে না, কেবল চোখ দুটো খোলা। ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখেন, ছোট্ট একটি ছিদ্র দিয়ে তীরের মতো পড়ছে আলোর রেখা! সম্ভবত টর্চলাইটের আলো। একটু পর আবার নিভে গেল।
ক্ষীণস্বরে পাশের মেয়েটি বলল, 'আপা, চিল্লান দ্যান। মাইনষে যাইতাছে ওদিক দিয়া।' শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে 'বাঁচান ভাই, কেউ থাকলে আমাদের বাঁচান,' বলে চিৎকার দিলেন মেরিনা। কয়েকবার চিৎকারের পর ছিদ্র দিয়ে আবার আলোর রেখা দেখা গেল। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করতে শুরু করল পাশের ছেলেটিও। তবে কয়েক মিনিট পরও সাড়া পাওয়া গেল না। আবারও শুরু হলো কান্নাকাটি।
আধঘণ্টা পর কেউ একজন জানতে চাইলেন, 'ভেতরে কি কেউ আছেন? থাকলে আওয়াজ দেন।'
'ভাই, আমাদের বাঁচান। আমরা এখানে অনেক মানুষ।' এই বলেই চিৎকার শুরু করলেন সবাই।
একটু পর শোনা গেল আরো কয়েকজনের কণ্ঠস্বর। নিচে তখন চলছে কান্নাকাটি। ওপরে চলছে আটকে পড়াদের কাছাকাছি আসার চেষ্টা। আধঘণ্টা পর মেরিনার মাথার কাছের একটি পাথর কাটা শুরু হলো। অনেকক্ষণ পর তৈরি হলো সুড়ঙ্গের মতো একটা পথ। সে পথ দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা একটা পানির বোতল ছুড়ে দিলেন। তবে সে পানি খেতে পারেননি মেরিনা, তার আগেই জ্ঞান হারালেন।
জ্ঞান ফেরার পর আবিষ্কার করলেন, নাকের সঙ্গে পাইপ জাতীয় কিছু একটা লাগানো আছে। পরে বুঝলেন, অক্সিজেনের পাইপ। তিনি শুয়ে আছেন হাসপাতালের বেডে। দুই পাশে অনেক মানুষ। মাথার ওপর অনেক লাইট। মনে পড়ল মা-বাবার কথা। মাকে ডাকলেন। দেখেন, তাঁরা দুজনেই পাশে আছেন। মেরিনা বললেন, 'মা, আমি এখানে কেন? এখানে এত মানুষ কেন? এরা কারা?' কাঁদতে কাঁদতে মা বললেন, 'তুই বিল্ডিংয়ের নিচে চাপা পড়েছিলি। উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছে।'


No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor