দাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন হুমায়ূনের চার সনত্দান। বাবার মৃতু্যর খবরে কাতর ছেলে নুহাশ ও মেয়ে নোভা, শীলা ও বিপাশা প্রায় বেহুঁশ হয়ে পড়েন। নাতিদের কান্না দেখে দাদিও শোকে পাথর হয়ে যান। সঙ্গে শোকে সত্দব্ধ নির্বাক জামাতারা। বৃহস্পতিবার রাতে বাবার মৃতু্যর সংবাদে হুমায়ূন-সন্তানরা ছুটে আসেন পল্লবীর বাসায় দাদিকে সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু কে কাকে দেবে সান্ত্বনা!
এদিকে বয়সের ভারে নূ্যব্জ শোকাহত মা আয়েশা ছেলে হুমায়ূনের মরদেহ একনজর দেখার জন্য প্রতীক্ষায় আছেন। শেষ জীবনে অসুস্থ মায়ের কাছে এমন অপেক্ষা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে।
রসায়নবিদ হলেও কথাসাহিত্যে খ্যাতিমান মহাপুরুষ হয়ে ওঠেন হুমায়ূন আহমেদ। বিজ্ঞান আর সাহিত্যচর্চার শত ব্যস্ততার মধ্যেও মাকে ভুলে যাননি কখনও। বৃদ্ধ মায়ের খোঁজখবর নিতে তিনি ছুটে যেতেন মিরপুর এলাকার পল্লবীতে তার মায়ের বাড়িতে। মা আয়েশা ফয়েজ তার বড় সনত্দান হুমায়ূনের মারা যাওয়ার খবরে শোকে পাথর হয়েছেন। এই বাড়িতে এখন শোকের আহাজারি আর আর্তনাদ। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করছে।
এই খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিকের সবচেয়ে ছোট ভাই খ্যাতিমান কাটর্ুনিস্ট ও রম্যলেখক আহসান হাবীব শাহীন গতকাল সাংবাদিকদের জানান, বিখ্যাত ব্যক্তি হলেও হুমায়ূন আহমেদ ভাইবোনের কাছে ছিলেন অন্য ১০ জন বড় ভাইয়ের মতোই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। ছোট ভাই হিসেবে তাকে যথেষ্ট আদর-স্নেহ করেছেন। ফাঁক পেলেই তিনি মাকে দেখতে ছুটে আসতেন। তখন বড় ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কথা হতো, গল্প হতো। ভাইয়ের সঙ্গে তার এমন অনেক স্মৃতি আছে। এসব স্মৃতি কোনো দিনই হারিয়ে যাবে না। কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। একপর্যায়ে বলেন, বড় ভাই আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। এ বাড়িতে ভাইয়ের পা পড়বে না। স্বজনরা জানায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে হুমায়ূনের বাবা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদ শহীদ হন। বাবা পুলিশ অফিসার হলেও সাহিত্যচর্চা করতেন। বাবার মৃতু্যর পর মা আয়েশা ফয়েজ সংসারের হাল ধরেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ছয় সন্তানকে লেখাপড়া শেখান তিনি। সন্তানের মেধাবী হওয়ায় হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ নিজ নিজ কর্মস্থলে তাদের পেশাদারির খ্যাতি অর্জন করেন।
No comments:
Post a Comment