June 15, 2011

ই-ভোটিং কি বাংলাদেশের জন্য সময়োচিত উদ্যোগ?


বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপের পাশাপাশি ই-ভোটিং ও ইলেকট্রনিক ভোটিং প্রবর্তনের বিষয়টি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বর্তমান সরকার তা বাসত্দবায়নে বদ্ধপরিকর। কিন্তু দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ আরো কিছু দল তা চাইছে না। এ পরিস্থিতিতে 'জনগণই ক্ষমতার উৎস' হলে রাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে বিশ্বসত্দতা, সাচ্ছন্দ্য, জনবল ও খরচের বিপরীতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ই-ভোটিং সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার প্রতিফলনে কতটুকু সক্ষম, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া জরুরি।

সংক্ষেপে, ই-ভোটিং হচ্ছে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ এবং সেই ভোট গণনার সনি্নবেশ। এতে থাকে পাঞ্চ কার্ড, অপটিক্যাল স্ক্যান ভোটিং সিস্টেম এবং ডাইরেক্ট রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম বা ডিআরই। এছাড়াও টেলিফোন, প্রাইভেট কম্পিউটার নেটওয়ার্কস বা ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ব্যালট সম্প্রচার। বর্তমানে প্রচলিত দুই ব্যবস্থার মাঝে ই-ভোটিং পদ্ধতিতে ভোটকেন্দ্রে সরকারি বা নিরপেক্ষ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ইলেকট্রনিক মেশিন রাখা হয়, যা ভোটারদের ভোটগ্রহণ করে এবং অন্যটি হচ্ছে রিমোট ই-ভোটিং যাতে কোনো প্রকার তত্ত্বাবধান ছাড়াই ভোটাররা একচ্ছত্র স্বাধীনতায় ব্যক্তিগত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং আই-ভোটিং প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেলিভিশন ভোট সম্পন্ন করেন।

ষাটের দশক থেকে এই ই-ভোটিং পদ্ধতির প্রচলন। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ৭টি কাউন্টি বা সাব-ডিভিশনে এ ব্যবস্থার শুরু। এখনো যুক্তরাষ্ট্রে তা সর্বত্র চালু হয়নি। ২০০৪ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২৮.৯ শতাংশ ভোটার ডিআরই ব্যবস্থায় ভোট দিয়েছে, যদিও 'হেল্প আমেরিকা ভোট অ্যাক্ট' প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রতিবন্ধী ভোটারদের প্রবেশ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। ডিআরই ব্যবস্থায় সকল প্রকার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় ভারত ও ব্রাজিলে এবং ভেনিজুয়েলা, যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডের বৃহদাংশে। যদিও গণউদ্বেগের কারণে নেদারল্যান্ডে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে ইন্টারনেট ভোটিং ব্যবস্থা ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে যুক্তরাজ্য, এসত্দোনিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সরকারি নির্বাচন ও গণভোটে। পাশাপাশি তা কানাডার পৌর নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলের প্রাইমারিতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

২০০৪ সালে ভারতের ৩৮ কোটি ভোটার প্রায় ১০ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবস্থায় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়। সে জন্য ভারত সরকারের দুটি নিজস্ব প্রতিরক্ষা কারিগরি প্রতিষ্ঠান ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল) ও ইলেকট্রনিক্স করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইসিআইএল) নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক এই ইভিএমগুলো তৈরি করে। ৬ ভোল্টের ব্যাটারিচালিত এ ইভিএম-এর ভোটিং ও কন্ট্রোল ইউনিট যথাক্রমে ভোটার ও নির্বাচনি কর্মকর্তা কতর্ৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। ভোটিং ইউনিটে ১৬ থেকে সর্বাধিক ৬৪ প্রার্থীর জন্য পৃথকভাবে সবুজ বাটন সাজানো থাকে, যা চেপে ভোট দেয়া যায়। অন্যদিকে কন্ট্রোল ইউনিটের তিনটি পৃথক বাটন যথাক্রমে প্রতিটি ভোটারের জন্য একটি ভোট প্রদান, সর্বমোট ভোটার পর্যবেক্ষণ এবং শেষোক্তটি ব্যবহূত হয় ভোটগ্রহণ শেষে প্রার্থীদের ফলাফল জানার জন্য, যা ব্যবহারের আগে সিলযুক্ত থাকে।

তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থায় সুফল ও কুফল বিদ্যমান। সুফলের দিক থেকে এটি যেমন তাৎক্ষণিক ফলাফল নিশ্চিত করতে সক্ষম তেমনি তার কুফলও আছে বহুবিধ। ২০০৪ সালের মে এবং ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউএস গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অফিস এ বিষয়ে পৃথক দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। একদিকে সম্ভাবনা ও অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ ছিল তার মুখ্য প্রতিপাদ্য। বলাবাহুল্য, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় নতুন কম্পিউটার সফটওয়্যারের প্রচলন ও ভোটের জটিলতাসহ কারচুপি প্রতিহত পুরোপুরি সম্ভব নয়। কেননা, সাধারণ মানুষ কম্পিউটারের অভ্যনত্দরীণ ক্রিয়াকলাপ বিশদ জানে না। সহজ ভাষায়, গোপন ব্যালট ব্যবস্থায় যেমন কোনো ইনপুট থাকে না, তেমনি প্রত্যাশিত আউটপুটের ক্ষেত্রে তুলনা করার জন্য কোনো ফলাফল থাকে না। প্রতিথযশা আমেরিকান ক্রিপ্টোগ্রাফার, কম্পিউটার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও লেখক ব্রুস সেনিয়ার মতে_ 'ডিআরই মেশিনে ভোটার তুলনার পরিপূর্ণ হিসাব এবং ব্যবহূত সফটওয়ার জনসমক্ষে পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকা চাই'। সেই নাগরিক অধিকারপূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্যটুকু বাংলাদেশের ভোটাররা ই-ভোটিংয়ের ক্ষেত্রে পাবেন কি?

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
আমাদের সময়-১৩ জুন, ২০১১

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor