বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এইচএম এরশাদ গতকাল ৩৪ বছর পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলায় দিনহাটায় তার পৈত্রিক বাড়ি সফরে গেছেন। আর ঘরের ছেলে এরশাদকে বরণ করে নিতে দিনহাটাবাসী ব্যস্ত ছিল নানা ঘরোয়া আয়োজনে। এরশাদ কুচবিহারের দিনহাটায় তার ছেলেবেলা কাটিয়েছেন। ভারত ভাগের পর তার বাবা মকবুল হোসেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রংপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯০ সালের যে দিনটিতে জেনারেল এরশাদকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল ২০০৯ সালের সেই একই দিনে- অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর তিনি দিনহাটায় পেঁৗছান। সূত্র: বিবিসি
দিনহাটা শহরের ব্যস্ত প্রধান রাস্তাটির পাশেই হুসেইন পরিবারের বাড়িতে কয়েক দিন ধরেই সাজো সাজো রব। গতকাল সকালে সে ব্যস্ততা চরমে পেঁৗছেছিল পরিবারের বড় ভাই বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে স্বাগত জানাতে। বাড়ির সামনের উঠানো টানানো হয়েছে বিশাল সামিয়ানা। মাইকে বাজছে রবীন্দ্র সংগীত- বড় আশা করে এসেছি গো কাছে টেনে লও, ফিরাইয়ো না জননীঃ। বাড়ির ভেতরে নারীরা ব্যসত্দ সকাল থেকেই রান্নার জোগাড়ে। বেগম জেবুন্নেসা হুসেইনকে জিজ্ঞাসা করা হয় কী রান্না হচ্ছে ভিভিআইপি আত্মীয়ের জন্য। জবাবে তিনি বলেন, কোপ্তা করেছি, কই মাছের ঝোল, বেলে মাছ, মুরগীর মাংস, বেগুন ভাজাসহ আরো অনেক পদ। জেনারেল এরশাদের খুড়তুতো ভাই তোজাম্মেল হোসেন যোগ করলেন, টক দই উনি খেতে ভালবাসেন। এটা তার বরাবরের অভ্যাস। দিনহাটার সাধারণ মানুষের মধ্যে এরশাদের ব্যক্তিগত সফরকে ঘিরে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস না থাকলেও উৎসাহের কমতি নেই। অনেকেই প্রতিবেশি দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন কখন দেখা হবে তাদের সেই 'পেয়ারা'র সঙ্গে। পুরনোদিনের সেই কথা শুনিয়েছেন এরশাদের ছেলেবেলার সহপাঠি সুধীর সাহা, এরশাদ, ডাক নাম পেয়ারা। আমরা পেয়ারা বলেই ডাকতাম। ও আমাদের চেয়ে অনেক লম্বা, দেখতে সুন্দর- একদম আর্য চেহারা। ও ছোটোবেলায় খেলাধুলায় যেমন ছিল, ঠিক তেমনি কথা-বার্তা সবকিছুতেই ছিল দারুণ স্মার্ট। আমাদের মাঝে গল্প-গুজব হবে পুরনো বন্ধু ওদেশে যারা চলে গেছে তাদের মাঝে কে কে বেঁচে আছে। যেমন এখানে আমাদের সহপাঠিদের মধ্যে মাত্র তিন বন্ধু বেঁচে আছি। মনে হয় কোনো রাজনৈতিক আলাপ আমাদের মাঝে হবে না। ১৯৪৬ সালে এরশাদ যে দিনহাটা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেছিলেন সে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও খুবই উৎফুল্ল্ল তার আগমনে। নস্টালজিয়া এবং গর্বের পাশাপাশি অনেক দাবিও আছে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গী নিজেদের শহরের ছেলের কাছে। আগামী কয়েকদিনে এরশাদের কাছে অনুরোধ করা হবে গিতালদহ থেকে কলকাতায় যাওয়ার প্রাক দেশভাগের সময়কার পুরনো রেলপথটি আবার চালু করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য। ছিটমহলের বাসিন্দারাও জেনারেল এরশাদকে স্মারকলিপি দেবেন যাতে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে ছিটমহল সমস্যা তাড়াতাড়ি সমাধান করা হয়। উল্ল্লেখ্য, গতকাল দুপুর ১টায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে সড়ক পথে এরশাদ পৈত্রিকভিটার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পুত্র এরিখ, ব্যাক্তিগত সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আহম্মেদ।
No comments:
Post a Comment