September 1, 2009

ডিম আমদানি কি ঠিক হল?

এক রকমের আকস্মিকভাবেই সরকার ভারত থেকে মুরগির ডিম আমদানি শুরু করেছে। গত মাসখানেক সময় ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রান্তিক খামারিরা পোলট্রি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল ভারত থেকে ডিম আমদানি। এ ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে দেশের অসংখ্যা পোলট্রি খামারি। এক অনিশ্চয়তার আতংক ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে। হঠাৎ করে কি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হল যে ভারত থেকে ডিম আমদানি করতে হবে, এ প্রশ্ন এখন বিভিন্ন মহলের। হতাশ হলাম আমিও। কারণ এই শিল্পের উত্থানের প্রত্যেকটি ধাপের প্রত্যক্ষদর্শী আমি। শুধু প্রত্যক্ষদর্শীই নয়, শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকতে পেরেছি। গতকাল এই লেখাটি যখন লিখছি তখন অনেক খামারির সঙ্গেই আমার কথা হচ্ছে। তাদের দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার নেই আমার।

বলা বাহুল্য, জনসংখ্যা তখন কম ছিল। সাধারণের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি তথা আমিষের চাহিদা পূরণ সম্পর্কে সচেতনতাও ছিল কম। মুরগির মাংস কিংবা ডিম কোন কিছুই এখনকার মতো এত সহজপ্রাপ্য ছিল না। গৃহস্থ বাড়িতে হাঁস-মুরগি পোষা হতো পারিবারিক প্রয়োজনে। আশির দশকে এলো খাঁচায় মুরগি পালনের ধারণা। সাদা লেগহর্ন, রোড আইল্যান্ড রেড, পাইমাউথ রক, ওয়াইন ডট জাতের মুরগি বাংলাদেশে সৃষ্টি করে এক বিস্ময়। একটি মুরগি একটানা ২৩০টি ডিম দিতে পারে কিংবা একটি মুরগি ৪ থেকে ৬ মাসে হতে পারে ২ থেকে ৪ কেজি মাংসের নিয়ামক- এই ধারণাগুলো কারও কারও কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকে। পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে অনেকেই খামার গড়ে অল্পদিনেই পেয়ে যায় সাফল্যের সন্ধান। এ যেন হাঁসের সোনার ডিম কিংবা আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো ব্যাপার। কেউ কেউ গোপন রাখেন এই সাফল্য। অনেকে গলা বাড়িয়ে বললেও মুরগির খামার গড়ার বিষয়টি সহজে গ্রহণযোগ্য হয়নি সে সময়। গণমাধ্যমের কল্যাণেই খামারে মুরগি পালনের ধারণাটি গ্রাম থেকে শুরু করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। খামারে বা খাঁচায় মুরগি পালনের বিষয়টি কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে দারুণ সম্ভাবনাময় বিবেচনায় সরকারও আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসে। বিশেষ করে জেলায় জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্বের কোর্স কারিকুলামের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত করা হয় হাঁস-মুরগি পালন ও মৎস্যচাষকে। এমনকি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে বিশেষ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থাও চালু করা হয়। সরকারের আন্তরিকতা, গণমাধ্যমের লাগাতার প্রয়াস সবকিছুর কল্যাণেই নব্বই-পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে দারুণ এক সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যায় পোলট্রি শিল্প। এর মধ্য দিয়ে দেশে যখন মুরগির মাংস আর ডিমের চাহিদা বাড়তে থাকে, তখন সরকার না বুঝে ভারত থেকে ডিম আমদানির এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। বিভিন্ন সীমান্তপথে দেদারছে মুরগির ডিমের সঙ্গে দেশে কচ্ছপের ডিমও ঢুকতে শুরু করে। যা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। দেশের মানুষের কাছে তখন দেশী মুরগির ডিম আর খামারের মুরগির ডিমের তফাৎ বোঝাই কষ্টকর, তখন কোনটি মুরগির ডিম আর কোনটি কাছিমের ডিম তা বোঝার মোটেও উপায় ছিল না। কিন্তু বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় একদিকে মানুষ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে থাকে, অন্যদিকে দেশীয় বিকাশমান পোলট্রি শিল্পও পেঁৗছে যায় ক্ষতির মুখে। পোলট্রি শিল্পের ক্ষতি ঠেকাতেই সরকার একসময় ভারত থেকে খাবার ডিম আমদানি বন্ধ করে শুধু 'হ্যাচিং এগ' বা বাচ্চা ফোটানোর ডিম আমদানির পথ খোলা রাখে। কিন্তু দেখা যায় সীমান্তপথ দিয়ে ব্যবসায়ীরা 'হ্যাচিং এগ'-এর সঙ্গে দেদারছে 'টেবিল এগ' বা খাওয়ার ডিমও ঢুকে পড়ছে। পরে সরকার হ্যাচিং এগ আমদানিও বন্ধ করে দেয়। কারণ সরকারের তখন স্থানীয় শিল্প উন্নয়নের জোরালো তাগিদ ছিল। সেই সময়টি ছিল পোলট্রি শিল্প বিকাশের প্রারম্ভিক অধ্যায়। তারপর কেটে গেছে ১৬টি বছর। এর মধ্যে লাখ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগ থেকে শুরু করে এক সময় বড় বড় উদ্যোক্তার বিনিয়োগ জমা হয়েছে পোলট্রি খামারে। অসংখ্য গৃহিণীর কষ্টার্জিত বিনিয়োগ, বেকার তরুণের সম্বল ইত্যাদি যুক্ত হতে হতে তিল তিল করে বিশাল একটি শিল্পে পরিণত হয় পোলট্রি শিল্প। একদিন যে শিল্পের মূল্যমান দাঁড়িয়ে যায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। কৃষির অন্যতম এক উপখাত হিসেবে জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে থাকে পোলট্রি শিল্প। একইভাবে দেশে আমিষের ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকার দাবিদার হয়ে দাঁড়ায় মুরগির মাংস ও ডিম। আর এই পর্যায়ে আসতে পোলট্রি শিল্পকে পার করতে হয়েছে একের পর এক বহু প্রতিকূলতা ও বিপর্যয়। শিল্প বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছে পোলট্রি উপকরণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গড়ে ওঠে পোলট্রি খাদ্য ইন্ডাস্ট্রি, ব্যাপক প্রসার ঘটে ভ্যাকসিন ও ওষুধের বাণিজ্যের, গড়ে ওঠে একের পর এক হ্যাচারি। সব মিলিয়ে সমন্বিত এক বিশালাকার শিল্পে পরিণত হওয়ার পর পরই পোলট্রি শিল্প বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেই মানুষসৃষ্ট দুর্যোগের শিকার হতে থাকে। কখনও এ বিপর্যয় হাজার হাজার খামারিকে পথে বসিয়েছে, কখনও এ বিপর্যয় দেশে আমিষের নিশ্চয়তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আবার পৃথিবীর অনেক দেশের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে বার্ড ফ্লু যখন প্রথম গুজব হিসেবে এদেশে ঢোকে তখনও এই শিল্প মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। ২০০৫ সালেও আবার প্রবেশ করে বার্ড ফ্লু গুজব। আর ২০০৬ সালে একদিকে প্রলম্বিত বন্যা, অন্যদিকে সত্যি সত্যিই বার্ড ফ্লুর অক্রমণ, পোলট্রি শিল্পকে একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলে। পর পর দুই বছর বার্ড ফ্লুতে এই শিল্পের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। দেড় লাখ খামারের মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার খামার বন্ধ হয়ে যায়। এমন একটি বিপর্যয়ের পর যেসব খামারি টিকে ছিল, আবার নতুন করে যারা সর্বস্ব বিনিয়োগ করে এই শিল্প নিয়ে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করেছে তারাও পড়েছে সমূহ বিপদের মুখে।

একেবারে সামপ্রতিক চিত্র তুলে ধরছি। বাজারে মুরগির ডিমের দাম বাড়ছে, সরকার উদ্বিগ্ন হচ্ছে। দাম কমানোর জন্য দিচ্ছে কড়া তাগিদ। এরই মধ্যে পোলট্রি খামারিরা জানালেন তাদের উৎপাদন চিত্র। বর্তমানে হ্যাচারিতে একদিন বয়সী ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ৫০ টাকা। সেটি মধ্যস্বত্বভোগীর হাত হয়ে খামারিদের কাছে পেঁৗছায় কমপক্ষে ৫৫ টাকায়। ৩৫ দিনে একটি ব্রয়লার বাজারজাত উপযোগী হয়। এই ৩৫ দিনে একটি মুরগির নূ্যনতম খাদ্য প্রয়োজন হয় ৩ কেজি। ২৮ টাকা প্রতিকেজি খাদ্য হিসেবে ৩ কেজির বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৮৪ টাকা। ভ্যাকসিন, ওষুধ, হ্যাচারি থেকে বাচ্চা পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় প্রতি মুরগিতে ১২ টাকা, খামারের বিদু্যৎ ও শ্রমিক খরচ নিম্নপক্ষে ৫ টাকা। এর বাইরেও রয়েছে শতকরা ৫ ভাগ মৃতু্যহারের হিসাব। সব মিলিয়ে ৩৫ দিন বয়সী দেড় কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগির পেছনে খামারে ব্যয় হয় কমপক্ষে ১৫৬ টাকা। খামারি পর্যায়ে বর্তমান ব্রয়লার মুরগির বাজার দর ৯০ টাকা কেজি। অর্থাৎ দেড় কেজি ওজনের মুরগির দাম ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মুরগিতে খামারিদের লোকসান দাঁড়াচ্ছে ২১ টাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খামারিরাই তাদের এই দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন। অসম বাজার ব্যবস্থার কারণে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। খামারিরা বলছেন, এই দুরবস্থার শিকার শুধু তারাই। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই একটি সুবিধাভোগী মধ্যস্বত্বভোগী চক্র এত বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে যে কোনভাবেই তারা সরাসরি কোন বাজার সহায়তা পাচ্ছে না। এমনিতেই হ্যাচারি পর্যায়ে একদিনের বাচ্চার দাম বাড়তে বাড়তে তিন গুণে পেঁৗছেছে, তার ওপর মধ্যস্বত্বভোগীর মুনাফা উপার্জনের শিকার হতে হচ্ছে খামারিদের। পোলট্রি খাদ্য কেনার ক্ষেত্রেও রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীর একই দৌরাত্ম্য। প্রশ্ন হচ্ছে একদিনের বাচ্চার দাম কেন ৫০-৫৫ টাকা হবে? ১০ বছরে এই ডে ওল্ড চিকসের দাম ৫ থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধির কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। আমার জানা মতে, বর্তমান দুমর্ূল্যের বাজারেও একদিনের বাচ্চা উৎপাদনের ব্যয় ১২ থেকে ১৫ টাকার বেশি নয়। পোলট্রি ব্রিডার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বললেন, ডে ওল্ড চিকস্ লেয়ারের উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা আর ব্রয়লার বাচ্চার খরচ ৩২ টাকা। তার হিসাবটি ধরলেও প্রতি বাচ্চায় ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভ সত্যিই বিস্ময়করই বটে। পোলট্রি শিল্পের উত্থান আমার চোখে দেখা। আজ যারা হ্যাচারি ইন্ডাস্ট্রির মালিক হয়েছেন একসময় তাদের অসামান্য অবদান ছিল এই খাতে। কিন্তু আজ যখন দেশের লাখ লাখ খামারি তাদের প্রধান বিপণন ক্ষেত্র, তাদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা মুনাফা করছেন কোন বিবেকে তা সত্যিই প্রশ্নসাপেক্ষ? দেশে ৪০ থেকে ৫০টি ছোট-বড় হ্যাচারির মধ্যে নেতৃস্থানীয় ৫-৬টি হ্যাচারি মালিকদের খামখেয়ালিপনা ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের চিন্তাভাবনা এই শিল্পকে আবারও দাঁড় করাচ্ছে ধ্বংসের দোরগোড়ায়। এখানেও সেই ধনীর দৌরাত্ম্য ও সুবিধা আদায়ের চিত্রই দেখা যায়। এই হ্যাচারি মালিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকু্যইটি ইন্টারেস্ট ফান্ড বা ইইএফ ফান্ডের সুযোগও গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে খামারিদের কোন সুযোগের জায়গা নেই। তারা ভাগ্যে শুধু বিপর্যয় আর বঞ্চনা। দুর্ভাগ্যজনক হল সরকার বাজারে মুরগির মাংস বা ডিমের দাম কেন বাড়ছে এর উত্তর খুঁজতে গোড়ায় না গিয়ে, এর সমাধান হিসেবে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় শিল্পকেই পঙ্গু করে ফেলতে পারে এই ভাবনাটি ভাবাই হয়নি। ডিম কিংবা মুরগির মাংসের দাম বাড়লে সহজ হিসাব উৎপাদন খরচ কমাতে হবে, উৎপাদন খরচ কমাতে হলে উপকরণের মূল্য কমাতে হবে। এগুলো সবই তো শিল্প অভ্যন্তরের সমস্যা। আমদানি করে দেশবাসীকে খাওয়ালে তো সমস্যার সমাধান হল না, বরং নিজের সক্ষমতা হারিয়ে পরনির্ভরশীলতার বীজ বোনা হল।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানলাম, জিএম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ভারত থেকে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮০টি ডিম প্রথম চালান হিসেবে আমদানি করেছে। সরকার এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সর্বমোট ১০ কোটি ডিম ভারত থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গত ১২ আগস্ট তারিখে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জামুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করিতে হবে, আমদানিতব্য প্রতিটি চালানের জন্য রফতানিকারক দেশের পশুসম্পদ বিভাগ বা সরকার নির্ধারিত উপযুক্ত কতর্ৃপক্ষ কতর্ৃক এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র থাকিতে হবে যে, আমদানি চালানে ডিম এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, বার্ড ফ্লু, ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত।

বিশ্ব পশু স্বাস্থ্য সংস্থা ও আইই'র রিপোর্ট হচ্ছে বর্তমান সময়ে ৯টি দেশে বার্ড ফ্লুর অস্তিত্ব বিদ্যমান। এর মধ্যে একটি দেশ হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের চারদিকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পোলট্রির বার্ড ফ্লু রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপন যদি মানা হয় তাহলে ভারত থেকে ডিম আমদানির কোন কারণ নেই, এবং ভারতের বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই যে ওই প্রজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে তাও স্পষ্ট বোঝা যায়। অন্যদিকে মুরগি, ডিম বা ডে ওল্ড চিকস্ আমদানির ক্ষেত্রেও বিশ্ব পশু স্বাস্থ্য সংস্থার কোড অনুযায়ী আমদানির সময় প্রতিটি ব্যাচ টেস্ট করতে হয় অথচ সীমান্তে কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডিম আমদানি করা হচ্ছে। পরীক্ষারও কোন ব্যবস্থা সেখানে নেই। অন্যদিকে দেশে বর্তমানে কোন স্থলপথে ডিম বা একদিনের বাচ্চা আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। কেবল আকাশপথে প্যারেন্ট স্টক আনার বিধান রয়েছে। অথচ স্থলপথে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডিম আমদানির মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে দেশ।

সরকারি মহল সম্ভবত জেনে থাকবে, ভারত সরকার ৩০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে বাংলাদেশে ডিম রফতানি করছে। তারা ভারতীয় মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে এদেশে ডিম পাঠানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে এদেশের স্থানীয় শিল্প ধ্বংস করা ও বাজার দখল করা। তাদের সে পরিকল্পনা অনেকটাই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়। কিছুদিন আগে শুধু বাইরে থেকে কম দামে গুঁড়ো দুধ আমদানির জের হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকার দুগ্ধ খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। হাজার হাজার খামারি পথে নেমে শত শত লিটার দুধ ঢেলে নষ্ট করে এর প্রতিবাদ জানান। শুধুই তাদের আকুতি ছিল, দুগ্ধশিল্প রক্ষার। যদিও দুধের ক্ষেত্রে ৯০ ভাগই আমরা আমদানিনির্ভর। আর ডিম কিংবা মুরগির মাংস অন্যতম একটি শিল্প যেখানে আমরা পুরোপুরিই স্বয়ম্ভর। আমাদের নিজস্ব শিল্পই পূরণ করছে ১৫ কোটি মানুষের চাহিদা। এর মধ্যে ডিম আমদানির এই যে উদ্যোগ তা এ শিল্পের জন্য যেমন হতে পারে আত্মঘাতী, একইভাবে জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান সবক্ষেত্রেই হতে পারে বিপর্যয়কর। শেষে একটু মনে করিয়ে দেই, এ বছর জাতীয় বাজেটের আগে সিরাজগঞ্জে কৃষকদের নিয়ে বাজেট আলোচনা করছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন। সেখানে একজন পোলট্রি খামারি বললেন, সরকার যদি পোলট্রি শিল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেয় তাহলে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের কর্মসংস্থান হতে পারে পোলট্রি শিল্প। পোলট্রি খামারিরা একথা বিশ্বাস করেন মনেপ্রাণে। কারণ এই শিল্পের সঙ্গে সঙ্গেই আত্মবিশ্বাস তাদের হাতে গড়া। কিন্তু সরকারের ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত শত বিপদের পরেও দাঁড়িয়ে থাকা পোলট্রি খামারিদের জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়।

আমি বিষয়গুলো আমার অনুষ্ঠানে সংবাদে বারবার বলেছি, খামারিরাও বলেছেন, দেশে যখন ভোক্তাপর্যায়ে কোন কিছুর দাম বাড়ে তখন সরকার ব্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ কখনও অনুসন্ধান করা হয় না। পাশাপাশি কৃষি বা খামার সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর উৎপাদন পর্যায়ের খোঁজ মোটেই নেয়া হয় না, নেয়া হয় না পণ্যের উৎপাদন মূল্য কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ। যেমনটি করা হয়নি পোলট্রি সেক্টরের ক্ষেত্রেও। সমস্যা সমাধানে ভারত থেকে ১০ কোটি ডিম আমদানি করে ভারতের বাজার সুবিধা সৃষ্টির জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছি আমরা, পক্ষান্তরে এর মধ্য দিয়ে যে ২০ বছরের বিকশিত আমাদের নিজস্ব একটি শিল্প যে কতটা হতাশায় পড়তে পারে সেই ভাবনা আমাদের নেই।

শাইখ সিরাজ : কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই

1 comment:

  1. AnonymousJune 24, 2011

    Probas Theke ''.জনাব শাইখ সিরাজ, অসংখ্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশের ক্ৃষিক্ষেত্রে আপনার অবদান অপরিসীম, কিংবদন্তিতুল্য বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না।ভাই এমনি ভাবে বলে বা লিখে কাজ হবেনা ,মঠে নামতে হবে দল বেধে ।জে টাকা খরচ করিয়া শরকার india বা বাইরের দেশ থেকে ডিম আমদানি করিয়া আমার দেশের টাকা গুলো বাইরের দেশ কে দিয়া,বাইরের দেশ কে লাভবান করে ,সেই টাকা গুলো আমার দেশের পোলট্রি খামারিদের দিলে দেশ লাভবান হবে,মানুষের কর্মসংস্থান হবে ,বাইরের দেশে ডিম বা মুরগি রফতানি করিয়া দেশ কে লাভবান করা হবে শরকারি ভাবে হ্যাচারি করতে হবে ও পোলট্রি খাদ্য, ওষুধ কিংবা নতুন প্রযুক্তির বাণিজ্য এসব কিচু খামারিদের মাঝে সতকারা ১ টাকা লাভে বিতারন করতে হবে ।প্রাণিসম্পদে বীমা করতে হবে আর এ সব কিচু র পরিচালনা করতে দিতে হবে কন রাজনিতিক লক আমলা বা জনগনের চাকর নই ।শাইখ সিরাজ ভাই বা উনার মত কৃষি খামারি paramiK দের ।এ সব কিচু Probasi দের রেমিটেনস দিয়ে করা জেতে পারে ।তহলে Probasi রা ও বুজবে তাদের পাটান টাকা টা দশের কন একটা কাজে লাগতে ছে।

    ReplyDelete

Khoj Khobor