শুধুমাত্র নামের একাংশের মিল থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবন্দরে দুই ঘণ্টা আটক রাখা হয় বলিউড বাদশা শাহরুখ খানকে। পরে জোর কূটনৈতিক তৎপরতায় মুক্তি মেলে তার। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভারতের তথ্যমন্ত্রী অম্বিকা সোনি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ আচরণ যথাযথ নয়। এজন্য মার্কিনিদের প্রতিও আমাদের একই রকম আচরণ করা উচিত। এ খবর দিয়ে গতকাল টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে নিউয়ার্ক বিমানবন্দরে। ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সকালে তিনি ওই বিমানবন্দরে পেঁৗছলে সেখানে তাকে সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক রাখা হয়। ইমিগ্রেশন চেকের সময় তার নামটি ভেসে ওঠে কম্পিউটার স্ক্রিনে। তার নামের শেষাংশ অর্থাৎ 'খান' শব্দটি নিয়ে আপত্তি করে কম্পিউটার। খান শব্দটি ওই কম্পিউটার প্রোগ্রামে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী চিহ্নিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে। কম্পিউটারের দেয়া ওই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শাহরুখ খানকে আটক দেখিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়। জানতে চাওয়া হয় তার সফরের উদ্দেশ্য। তল্লাশি চালানো হয় তার ব্যাগে। প্রায় এক ঘণ্টা তাকে ফোন করতে দেয়া হয় না কাউকে। শাহরুখ খান নিজেকে এ সময় একজন অভিনেতা পরিচয় দিয়েও রেহাই পাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তাদেরকে আমি বলেছি যে আমি একজন চলচ্চিত্র তারকা। শুটিং করতে সমপ্রতি আমি এদেশ সফর করেছি। কিন্তু আমার কোন কথায়ই মন গলেনি ইমিগ্রেশন অফিসারের। সেখানে উপস্থিত অন্য কয়েকজন ইমিগ্রেশন অফিসার আমার হয়ে সাক্ষ্য দিলেন। কিন্তু তাতেও ওই অফিসার নরম হলেন না। শাহরুখ খান বলেন, আমি তাদেরকে বললাম- দক্ষিণ এশিয়ার সমপ্রদায়ের এক আমন্ত্রণে এসেছি। আমাকে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। কিন্তু না, পরিস্থিতি তথৈবচ। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র কতর্ৃপক্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কংগ্রেসের এমপি রাজীব শুক্ল। এ বিষয়ে ভারতের তথ্যমন্ত্রী অম্বিকা সোনি ব্যক্ত করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। নিন্দা জানিয়েছেন রাজীব শুক্ল। রাজীব বলেছেন, এ আচরণ মোটেও সুষ্ঠু নয়। শাহরুখ খানের নামের একটি অংশ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর নামের তালিকার সঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণেই যদি তাকে আটকে রাখা যায়, তাহলে তো প্রতিটি মুসলমানকে সন্ত্রাসী মনে করে সন্দেহ করা যেতে পারে। এজন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের উচিত এমন পদ্ধতি বের করা যাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম এবং চলচ্চিত্র তারকা শাহরুখ খানের মতো বহুল পরিচিত নামের ব্যক্তিরা এরকম হয়রানির শিকার না হন। তাদের উচিত প্রকৃত সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী অম্বিকা সোনি বলেছেন- আমি মনে করি না যে, এ রকম নামের সঙ্গে মিল থাকায় যে কাউকে আটক করা ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকবার এ ঘটনা ঘটেছে। সব সময়ই তথ্যপ্রমাণ না দেখে অধিকতর গতিতে সন্দেহপ্রবণতাই জোরালো হয়েছে। অম্বিকা সোনি আরও বলেন, আমাকেও যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এজন্য সব সময় আমার মনে হয়, মার্কিনিদের প্রতিও আমাদের ওই রকম আচরণ করা উচিত। গত এপ্রিলে মার্কিন বিমান সংস্থা কন্টিনেন্টাল এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আরোহণ করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকেও ওই সংস্থা একই রকম হয়রানির মুখে ফেলে। সেখানে তাকে পুরো শরীর তল্লাশি করা হয়। এমনকি তাকে তার জুতা মোজা পর্যন্ত খুলতে বলা হয়। ওই সময় আবদুল কালামের নিউ ইয়র্কগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার কথা ছিল। ওই ঘটনায় জুলাই মাসে ভারতীয় পার্লামেন্টে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়।
August 16, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment