ফজলুর রহমান ও আলী আসিফ শাওন
দেশজুড়ে দফায়-দফায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ধারাবাহিক সন্ত্রাস তো আছেই, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উপজেলাকেন্দ্রিক নির্বাচনি আত্মহানাহানি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত রূপ দিয়েছে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে। এ যুদ্ধে চাপাতি থেকে রাইফেল পর্যন্ত সব রকম মারণাস্ত্রই ব্যবহূত হচ্ছে। বিএনপি-জামাতের পেট্রলবোমায় নয়, আওয়ামী লীগ এখন আওয়ামী লীগের গুলিতেই রক্তাক্ত।
গত শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুর ও চাঁদপুরের কচুয়া এবং শুক্রবার ভোলার দৌলতখান উপজেলায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে শতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু শ্রীপুরেই গুলিবিদ্ধ হন ২৩ জন। ওই ঘটনায় আহত ছাত্রলীগনেতা আল আমিন মারা গেছেন সোমবার রাতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। শনিবারের সংঘর্ষকালে প্রায় ৪ ঘণ্টা অচল থাকে শ্রীপুর পৌরশহর। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে চলা এ তাণ্ডবে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই দিন চাঁদপুরের কচুয়ায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের উপস্থিতিতে দুই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় ভোলার দৌলতখানে একই দলের দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন।
দখল, চাঁদাবাজি আর খুনোখুনি গত মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। গত মেয়াদে ছাত্রলীগের বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ড ও যুবলীগের টেন্ডারবাজিতে চট্টগ্রামে শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা দুটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল। আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করেছে, কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না সংগঠন দুটির মধ্যে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে থানা ভাঙচুরের ঘটনাও শুরু হয়েছে। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট আর আওয়ামী লীগের নৌকা ফুটো করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগই যথেষ্ট।
৯ মার্চ নড়াইলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। ১২ লাখ টাকার টেন্ডার জমা দিতে গেলে ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন ও বাবুলকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যুবলীগকর্মী মহিদ, নাছিম বিল্লাহ, বাদশা, হাসানসহ ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ তাদের মারধর করে টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলীসহ স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। একই দিন দুপুরে সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ডিইপিজেডের বিদেশি মালিকানাধীন একটি কারখানার ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অস্ত্র ও দুই সহযোগীসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগনেতা সোহেল পারভেজ নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে আটক হন। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গতকাল যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে সোহেলকে। ৫ মার্চ নোয়াখালীর কবিরহাট থানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়। কাছাকাছি সময়ে বরিশালের গৌরনদীতে হাটের ইজারা নিয়ে সংঘর্ষ বাধে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে। ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে গোলপাহাড় ও মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুগ্রুপের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় একটি মার্কেটে চাঁদাবাজির জের ধরে ঘটনাটি ঘটে। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বিজি প্রেসের স্টেশনারি ভবনে কোটি টাকার টেন্ডার জমা দেওয়ার সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সম্পাদক সিদ্দিকী কাজল ও তার সমর্থকদের নামে টেন্ডারবক্স জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। স্টেশনারি ভবনে দরপত্র জমা দেওয়ার দিন স্থানীয় এক প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কাজল ও তার সমর্থকরা প্রভাব খাটিয়ে অন্যদের টেন্ডার জমা দিতে বাধার সৃষ্টি করেন। প্রতিপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এখনও অমীমাংসিত রয়েছে কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়াটি। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়াও শিক্ষক পেটানো, হলে মেয়ে নিয়ে রাত কাটানো, চাঁদাবাজি, মারামারির ঘটনাও ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। ২৫ জানুয়ারি সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক দিনের মাথায় সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় পুরনো গাড়ি নিলামের জের ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা থানার ওসির রুম ভাঙচুর করেন। মন্ত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপিদের সামনেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, শীর্ষনেতাদের গাফিলতির কারণেই সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারা বলেন, ২ বছরমেয়াদি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ সালের ১২ জুলাই। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির শীর্ষনেতারা এখন সবাই ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। অনেকে আবার সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে রাজনীতি ছেড়েছেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকও হয় না নিয়মিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও আঞ্চলিকতার রেশ ধরে বেশ কয়েকটি গ্রুপও সৃষ্টি হয়েছে ছাত্রলীগে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ কমেছে, বেড়েছে দূরত্ব। তা ছাড়া দলীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কথায় জেলা কমিটি ও থানা কমিটি দেওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলায় বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটলে তেমন একটা কিছু করার থাকে না।
যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে চিহ্নিত চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ ও টেন্ডারবাজদের পদ দেওয়ার ফলে সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। যদিও কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ আমাদের সময়কে বলেন, কোনও সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজকে যুবলীগ পালন করে না। তারপরও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে সঙ্গে-সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, সব ঘটনাতেই আমরা সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি না। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একজনকে বহিষ্কার করেছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জনকে বহিষ্কার করেছি, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনকেন্দ্রিক খুনোখুনি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, প্রথমত আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তার সঙ্গে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি মিলে আকার-পরিসর আরও বেড়েছে। তাই যে-কোনও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ১৪ দল, এমনকী মহাজোটও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। দুই-এক জায়গায় সংঘর্ষও হচ্ছে। তবে সেই সংঘর্ষ, সংঘাত প্রাণঘাতী হলেই বিপদ। আর তা যেন সরকার ও দলের জন্য আত্মঘাতী না হয়ে যায়, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
গত শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুর ও চাঁদপুরের কচুয়া এবং শুক্রবার ভোলার দৌলতখান উপজেলায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে শতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু শ্রীপুরেই গুলিবিদ্ধ হন ২৩ জন। ওই ঘটনায় আহত ছাত্রলীগনেতা আল আমিন মারা গেছেন সোমবার রাতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। শনিবারের সংঘর্ষকালে প্রায় ৪ ঘণ্টা অচল থাকে শ্রীপুর পৌরশহর। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে চলা এ তাণ্ডবে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই দিন চাঁদপুরের কচুয়ায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের উপস্থিতিতে দুই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় ভোলার দৌলতখানে একই দলের দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন।
দখল, চাঁদাবাজি আর খুনোখুনি গত মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। গত মেয়াদে ছাত্রলীগের বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ড ও যুবলীগের টেন্ডারবাজিতে চট্টগ্রামে শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা দুটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল। আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করেছে, কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না সংগঠন দুটির মধ্যে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে থানা ভাঙচুরের ঘটনাও শুরু হয়েছে। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট আর আওয়ামী লীগের নৌকা ফুটো করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগই যথেষ্ট।
৯ মার্চ নড়াইলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। ১২ লাখ টাকার টেন্ডার জমা দিতে গেলে ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন ও বাবুলকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যুবলীগকর্মী মহিদ, নাছিম বিল্লাহ, বাদশা, হাসানসহ ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ তাদের মারধর করে টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলীসহ স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। একই দিন দুপুরে সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ডিইপিজেডের বিদেশি মালিকানাধীন একটি কারখানার ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অস্ত্র ও দুই সহযোগীসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগনেতা সোহেল পারভেজ নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে আটক হন। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গতকাল যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে সোহেলকে। ৫ মার্চ নোয়াখালীর কবিরহাট থানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়। কাছাকাছি সময়ে বরিশালের গৌরনদীতে হাটের ইজারা নিয়ে সংঘর্ষ বাধে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে। ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে গোলপাহাড় ও মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুগ্রুপের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় একটি মার্কেটে চাঁদাবাজির জের ধরে ঘটনাটি ঘটে। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বিজি প্রেসের স্টেশনারি ভবনে কোটি টাকার টেন্ডার জমা দেওয়ার সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সম্পাদক সিদ্দিকী কাজল ও তার সমর্থকদের নামে টেন্ডারবক্স জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। স্টেশনারি ভবনে দরপত্র জমা দেওয়ার দিন স্থানীয় এক প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কাজল ও তার সমর্থকরা প্রভাব খাটিয়ে অন্যদের টেন্ডার জমা দিতে বাধার সৃষ্টি করেন। প্রতিপক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এখনও অমীমাংসিত রয়েছে কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়াটি। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়াও শিক্ষক পেটানো, হলে মেয়ে নিয়ে রাত কাটানো, চাঁদাবাজি, মারামারির ঘটনাও ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। ২৫ জানুয়ারি সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক দিনের মাথায় সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় পুরনো গাড়ি নিলামের জের ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা থানার ওসির রুম ভাঙচুর করেন। মন্ত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপিদের সামনেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, শীর্ষনেতাদের গাফিলতির কারণেই সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারা বলেন, ২ বছরমেয়াদি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ সালের ১২ জুলাই। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির শীর্ষনেতারা এখন সবাই ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। অনেকে আবার সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে রাজনীতি ছেড়েছেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকও হয় না নিয়মিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও আঞ্চলিকতার রেশ ধরে বেশ কয়েকটি গ্রুপও সৃষ্টি হয়েছে ছাত্রলীগে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ কমেছে, বেড়েছে দূরত্ব। তা ছাড়া দলীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কথায় জেলা কমিটি ও থানা কমিটি দেওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলায় বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটলে তেমন একটা কিছু করার থাকে না।
যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে চিহ্নিত চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ ও টেন্ডারবাজদের পদ দেওয়ার ফলে সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। যদিও কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ আমাদের সময়কে বলেন, কোনও সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজকে যুবলীগ পালন করে না। তারপরও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে সঙ্গে-সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, সব ঘটনাতেই আমরা সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি না। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একজনকে বহিষ্কার করেছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জনকে বহিষ্কার করেছি, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনকেন্দ্রিক খুনোখুনি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, প্রথমত আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তার সঙ্গে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি মিলে আকার-পরিসর আরও বেড়েছে। তাই যে-কোনও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ১৪ দল, এমনকী মহাজোটও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। দুই-এক জায়গায় সংঘর্ষও হচ্ছে। তবে সেই সংঘর্ষ, সংঘাত প্রাণঘাতী হলেই বিপদ। আর তা যেন সরকার ও দলের জন্য আত্মঘাতী না হয়ে যায়, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
(আমাদের সময়, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০১৪)