December 27, 2011

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসে রেকর্ড


প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ৪ দশমিক ৯৭ ভাগ। এর মধ্যে ছাত্র ৪৯ হাজার ১৩৪ জন এবং ছাত্রী ৫৬ হাজার ৫৩৯ জন। প্রাথমিক পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৭.২৬। পাসের হারে ছেলেরা এগিয়ে আছে মেয়েদের তুলনায়। ছাত্রদের পাসের হার ৯৭.৪৮ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৯৭.০৮ ভাগ। ডিআরভুক্ত ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২১ লাখ ২৫ হাজার ৮৬৯ শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পাস করেছে। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫২৯ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ দশমিক ৮৯। আর ছাত্রী পাস করেছে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৩৪০ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৫৪ দশমিক ১১ ভাগ। গত বছর পাসের হার ছিল ৯২.৩৪ ভাগ। আগের বছর ছিল ৮৮.৮৪ ভাগ। মাদ্রাসার ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯১.২৮ ভাগ। গতকাল সকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. আফছারুল আমীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এরপর বিকালে মন্ত্রী তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। ২০১১ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় ২৩শে নভেম্বর থেকে। ৩০শে নভেম্বর পরীক্ষা শেষ হয়। দেশের বাইরে ৮টিসহ ৬ হাজার ১৭৬টি কেন্দ্রে ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ৮৭ হাজার ৮৩২টি প্রতিষ্ঠানের ২৩ লাখ ১৬ হাজার ৫২১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য তালিকাভুক্ত হয়। তার মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৭ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৯৪ দশমিক ৩৫ ভাগ। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৮ জন এবং ছাত্রী ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯৩ জন। সারাদেশে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৩ জন। জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর নিচে পেয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২০ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ২০.৭৬ ভাগ। জিপিএ ৩.৫ থেকে ৪ এর নিচে পেয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫৩২ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ১৮.৩৭ ভাগ। জিপিএ ৩ থেকে ৩.৫ এর নিচে পেয়েছে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৩ জন (১৯.৫১ ভাগ)। জিপিএ ২ থেকে ৩ এর নিচে পেয়েছে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ২৪৫ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭.৬২ ভাগ। এছাড়া জিপিএ ১ থেকে ২ এর নিচে পেয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৬ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৮.৭৬ ভাগ।
শীর্ষে বরিশাল বিভাগ: পাসের হার বিবেচনায় সাত বিভাগের মধ্যে শীর্ষে বরিশাল। এই বিভাগে পাসের হার ৯৯.০৫ ভাগ। এছাড়া খুলনায় ৯৮.১৩ ভাগ, ঢাকায় ৯৮ দশমিক ০৮ ভাগ, রাজশাহীতে ৯৭.৬৩ ভাগ, চট্টগ্রামে ৯৭.২৪ ভাগ, রংপুরে ৯৬.৮৫ ভাগ এবং সিলেটে ৯০.৫৯ ভাগ। পাসের হারে ৬৪ জেলার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ প্রথম স্থান দখল করেছে। এ জেলায় পাসের হার ৯৯.৮৯ ভাগ। দ্বিতীয় হয়েছে পঞ্চগড় ও চাঁদপুর জেলা। এ দুই জেলায় পাসের হার ৯৯.৬৪ ভাগ। ৫০৩টি উপজেলা/থানার মধ্যে ৩২ উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে। পাসের হারে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলায় পাসের হার ৮৯.৬১ ভাগ এবং একই জেলার বানিয়াচং উপজেলায় পাসের হার সর্বনিম ৭১.৬৮ ভাগ।
স্কুলভিত্তিক ফল: পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের পাসের হার সর্বোচ্চ ৯৯.৮৮ ভাগ। ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয়ের পাসের হার ৯৯.৭৩ ভাগ, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮.৬৩ ভাগ, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮.১৭ ভাগ, কিন্ডারগার্টেন ৯৮ ভাগ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭.৮৯ ভাগ, রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫.৯৫ ভাগ, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৪.৭৮ ভাগ, নন রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৩.৭৪ ভাগ, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯২.৬৯ ভাগ, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৯১.৪৫ ভাগ এবং আনন্দ স্কুলে পাসের হার ৭৩.৩৭ ভাগ।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী: বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী পাসের হার ৯৬.৬৪ ভাগ। সারাদেশে ৪৫৩৯ জন শিক্ষার্থী ডিআরভুক্ত হয়। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪২৮৭ জন। পাস করে ৪১৪৩ জন।
বিষয়ভিত্তিক পাস: বাংলায় ৯৯.১৯ ভাগ, ইংরেজিতে ৯৯.১৮ ভাগ, গণিতে ৯৮.১৯ ভাগ, পরিবেশ পরিচিতি সমাজে ৯৯.৮৪ ভাগ, পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে ৯৯.৬৬ ভাগ এবং ধর্ম বিষয়ে ৯৯.৮৯ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
সেরা ২০ প্রতিষ্ঠান: নিবন্ধিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ ৫ পাওয়ার হার এবং অনুপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার ভিত্তিতে প্রাথমিকে সারাদেশের সেরা ২০ স্কুলের একটি তালিকা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। এই হিসাবে সেরাদের সেরা মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয় পেয়েছে ৭৪.৩৯ পয়েন্ট। এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ১৯৯৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৬৫ জন এবার প্রাথমিক সমাপনীতে অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৪৩৮ জন। বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ভিকারুননিসা নূন স্কুল (৪৪.৭৫), মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৪১.৪৫), মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুল (৪০.৬৫), গুলশান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৪০.১৬), মতিঝিল ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল (৪০.০২), কুমিল্লা সদরের কুমিল্লা মডার্ন স্কুল (৩৯.৪৮), ডেমরার এ কে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৩৮.৯৮), মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল (৩৭.৬৯), ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল (৩৬.৭৩), মিরপুর বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৩৬.৪৩), মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৩৬.০৮), বনানী বিদ্যা নিকেতন (৩৪.৬১), চট্টগ্রামের বিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৩৪.২৩), ধানমন্ডি সরকারি ল্যাবরেটরি হাইস্কুল (৩৩.৬৬), মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৩৩.২৬), উত্তরা হাইস্কুল (৩৩.২৫), খুলনা সদরের খুলনা জেলা স্কুল (৩৩.২৩), মতিঝিলের ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট (৩২.৯৮) এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৩২.৭৮)।
শতভাগ ফেল বিদ্যালয় ৩৭১: ৩৭১টি প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীই পাস করেনি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭টি, রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১টি, কিন্ডারগার্টেন ২২টি, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ১০৪টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১টি, নন রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৭টি ও আনন্দ স্কুল ১৭৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ৪ হাজার ৯৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। যাদের কেউ পাস করতে পারেনি।
শতভাগ পাস বিদ্যালয়: সারাদেশে ৮৭ হাজার ৮৩২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৮ হাজার ৬২৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শতভাগ পাস করেছে। এসব বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ লাখ ৯ হাজার ৭৯৯ জন।
ইবতেদায়ীতে পাসের হার ৯১.২৮: ইবতেদায়ীতে পাসের হার ৯১.২৮ ভাগ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ১৯০ জন ছাত্র (৪৬.৭৭ ভাগ) এবং ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪৪ (৫৩.২৩ ভাগ) জন ছাত্রী। দুই ধরনের ১১ হাজার ৫১৯টি মাদরাসার ৫ম শ্রেণীর মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬০ জন শিক্ষার্থী তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৭২ হাজার ১৭১ জন। মোট ২ লাখ ২৮ হাজার ৪৩৪ জন শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২১৫০ জন শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষার্থীর ০.৮৭ ভাগ। জিপিএ ৪ থেকে জিপিএ ৫ এর নিচে পেয়েছে ৩২ হাজার ৮২১ জন, জিপিএ ৩.৫ থেকে ৪ এর নিচে পেয়েছে ৪০ হাজার ৭১৯ জন, জিপিএ ৩ থেকে ৩.৫ এর নিচে পেয়েছে ৫০ হাজার ৩৭০ জন, জিপিএ ২ থেকে ৩-এর নিচে পেয়েছে ৮৯ হাজার ৭৫০ জন ও জিপিএ ১ থেকে ২ এর নিচে পেয়েছে ৩২ হাজার ৬২৪ জন। ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বেশি। তবে পাসের হারে ছাত্ররা এগিয়ে আছে। ছাত্রদের পাসের হার ৯২.৫১ ভাগ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৯০.২৩ ভাগ। ডিআরভুক্ত শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হার, জিপিএ ৫ প্রাপ্তি এবং পাসের হারের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার ডেমরা থানার দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা শীর্ষস্থান দখল করেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানার বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (এমএ) মাদরাসা ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার তানযূমুল উম্মাহ ক্যাডেট দাখিল মাদরাসা। সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসায় পাসের হার ৮৯.৪৭ ভাগ এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় পাসের হার ৯১.৫২ ভাগ। সর্বোচ্চ পাসের হার বিবেচনায় ইবতেদায়ীতেও বরিশাল বিভাগ এগিয়ে। এ বিভাগে পাসের হার ৯৪.৬৫ ভাগ। ৬৪টি জেলার মধ্যে ঝালকাঠি শীর্ষে। এ জেলায় পাসের হার ৯৭.৮৯ ভাগ। ৫৪টি উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার পাসের হার সর্বনিম্ন। এ উপজেলায় পাসের হার মাত্র ২৩.০৮ ভাগ। সারাদেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৯৪.৯৮ ভাগ। ৪১৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩৯৭ জন পাস করেছে। ৯৯টি মাদরাসার কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি। এর মধ্যে উচ্চ মাদরাসা সংযুক্ত মাদরাসা ৭২টি ও ইবতেদায়ী মাদরাসা ২৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৭১ জন। শতভাগ পাস করা মাদরাসার সংখ্যা ৬৭৪টি। এর মধ্যে উচ্চ মাদরাসা সংযুক্ত মাদরাসা ১৫০৪টি এবং ইবতেদায়ী মাদরাসা ৪ হাজার ৫৭০টি।

No comments:

Post a Comment

Khoj Khobor